রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৮ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লার হোমনায় নিজ ঘরে মা-ছেলেসহ আলোচিত ট্রিপল মার্ডারের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। পরকীয়া প্রেমিকের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা ধার নিলেও সেই টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করছিলেন প্রমিকা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে প্রেমিকা এবং পরে প্রেমিকার ছেলেসহ দুজকে খুন করেন পরকীয়া প্রেমিক।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের একমাত্র অভিযুক্ত পরকীয়া প্রেমিক আক্তার হোসেনকে (২৭) নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার এই তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে হোমনার শ্রীমদ্দি চরেরগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আক্তার হোসেন ওই গ্রামের হক মিয়ার ছেলে।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে হোমনা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন জানান, গ্রেপ্তারের পর তিন খুনে অভিযুক্ত আক্তার হোসেন জিজ্ঞাসাবাদে জানান, নিহত মাহমুদার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর মাহমুদা তার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা ধার নেন।
সেই টাকা ফেরত দেব-দিচ্ছি করে আক্তারকে ঘোরাতে থাকেন মাহমুদা। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কয়েক দফা বাগবিতণ্ডা হয়।
সর্বশেষ গত বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আক্তারকে তার পাওনা টাকা ফেরত দেবেন বলে বাড়িতে ডাকেন মাহমুদা। পরে রাতে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেন মাহমুদা, আক্তার, মাহমুদার ছেলে সাহাব উদ্দিন এবং মাহমুদার স্বামীর ভাতিজি তিশা আক্তার।
খাওয়া শেষে তিশা ও সাহাব উদ্দিন ঘুমিয়ে গেলে গভীর রাতে ঝগড়া বাধে মাহমুদা ও আক্তারের মধ্যে।
ঝগড়ার এক পর্যায়ে মাহমুদাকে মাথায় আঘাত করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেন আক্তার। পরে আক্তার ভাবতে থাকেন তিশা ও সাহাব উদ্দিন তো আক্তারকে দেখেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা যদি আক্তারের কথা বলে দেয় সেই আশঙ্কা থেকে তাদের দুজনকেও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে মরদেহ তিনটি এক খাটের ওপর রেখে পালিয়ে যান হত্যাকারী আক্তার।
ওসি জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘তিনজনকে হত্যার ঘটনায় নিহত মাহমুদার বাবা বাদী হয়ে হত্যা মামলা করার পর ঘটনার রহস্য উদঘাটনে নামে পুলিশ।
তদন্তের মাধ্যমে পুলিশ হত্যাকারী আক্তারকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে শ্রীমদ্দি চরেরগাঁও এলাকার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার বিকেলে আদালতে তোলা হলে ঘটনার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন ঘাতক আক্তার।’
প্রসঙ্গত, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে হোমনা উপজেলার ঘাগুটিয়া ইউনিয়নের বড় ঘাগুটিয়া গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ি থেকে নিহত তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর আগে বুধবার রাতের কোনো এক সময় তাদের হত্যা করে ফেলে রাখা হয় খাটের ওপর।
নিহতরা হলেন ওই গ্রামের শাহপরানের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার (৩৫), তাদের ৯ বছরের ছেলে সাহাব উদ্দিন এবং শাহপরানের মামাতো ভাই রেজাউল করিমের মেয়ে তিশা আক্তার (১৪)। শাহপরান ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি মাসে দু-একবার করে বাড়িতে আসতেন।