রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি: অদ্য ২২ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে দেশের শীর্ষ স্থানীয় সাংবাদিক নেতাদের সমন্বয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরাম এর আহ্বায়ক সিনিয়র সাংবাদিক আবু সালেহ এর সভাপতিত্বে, সংগঠনের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম প্রধান এর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নন্দিত সাংবাদিক নেতা জাতীয় প্রেসক্লাব ও বিএফইউজে’র বার বার নির্বাচিত সভাপতি ও মহাসচিব শওকত মাহমুদ। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক গোলাম মহিউদ্দিন খান, কবি মাহমুদ সফিক, বিএফইউজের সাবেক সহ-সভাপতি শামসুদ্দিন হারুন, সিনিয়র সাংবাদিক নির্মল চন্দ্র চক্রবর্তী, শামসুল হক দুররানী, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি বুলবুল আহমেদ, সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল গফ্ফার মাহমুদ, আজহার আলী সরকার, ঢাকা সাব এডিটর কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক জাওহার ইকবাল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য নাজমুল হাসান, বিএফইউজের সাবেক কোষাধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান আসাদ, সিনিয়র সাংবাদিক এ জেড এম খায়রুজ্জামান, জহিরুল হক রানা, মোঃ মিজানুর রহমান চৌধুরী, মুক্তাদির অনিক, কামরুল হাসান দর্পন, গোলাম কিবরিয়া, জেসমিন আক্তার জুই, আব্দুল হালিম, শেখ আনোয়ার, মীর হোসেন মিরু, আমিরুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন সিদ্দিকী, মাহমুদুল হাসান বিপ্লব সিকদার, এ এইচ এম জামাল উদ্দিন, জাকির হোসেন মাঝি, শেখ মোঃ তাজুল ইসলাম, মর্তুজা টিস্যু প্রমুখ। জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরামের কমিটি ঘোষণা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শওকত মাহমুদ বলেন, জাতীয়তাবাদী ফোরাম শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। এই ফোরামের নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক নেতা গিয়াস কামাল চৌধুরী, রিযাজ উদ্দিন আহমেদ, আমানুল্লাহ কবির, জহিরুল হক, মোজাম্মেল হক ও রুহুল আমিন গাজী প্রমুখ।
শওকত মাহমুদ বলেন, বিগত ১৭টি বছর ফ্যাসিবাদী নির্যাতনে চলেছে, দলের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী হামলা, মামলার শিকার ও শত শত নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে ৭৬টি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা আমাকে বাসায় এসে সিদ্ধান্ত নিতে বলে ‘আমি জেল খানায় যাব না নির্বাচনে যাবো’। আওয়ামী দুঃশাসনে সাংবাদিক সমাজকে স্তব্ধ করতে আমাকে মামলা দিয়ে জেল খানায় বন্দী রাখা হয়েছিল। ১৯৭১ সালে আইয়ুব খানের ওয়েজ বোর্ড ভালো ছিল। কিন্তু সাংবাদিকরা তার এই সুযোগ-সুবিধাকে প্রত্যাখ্যান করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। জাতীয় প্রেসক্লাব-এর সংবিধানও সাংবাদিকদের অধিকারে কোন বিষয়ে আমরা আপোষ করব না। প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র এসব বিষয় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এখনও দেশে হাজার হাজার সাংবাদিক তাদের কথা বলার অধিকার থেকে বঞ্চিত। জাতীয়তাবাদী চেতনার সাংবাদিকরা এখনও বেকার, তাদের চাকুরী এখনও ফেরত দেওয়া হয় নাই। আমাদের ৬টি দাবি- ১. জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য যোগ্য লোককে নিতে হবে। ২. ডিইউজে’র সদস্য তালিকা থেকে সাংবাদিক পরিচয়ধারী অসাংবাদিকদের সদস্যপদ বাতিল করতে হবে। ৩. জাতীয় প্রেসক্লাবকে গঠনতন্ত্র মোতাবেক চলতে হবে। ৪. জাতীয় প্রেসক্লাব নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরিচালিত করতে হবে। বিএফইউজের গঠতন্ত্র মোতাবেক সংগঠনটি পরিচালিত করতে হবে। সাগর-রুনিসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে করতে হবে। তিনি আরো বলেন, চাকুরীচ্যুত সাংবাদিকদের নিয়োগ অতি দ্রুত কার্যকর না করলে আমরা ওই প্রতিষ্ঠান ঘেরাও করতে বাধ্য হবো। সাংবাদিকদের আর বেকার দেখতে চাই না, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সকল কালা কানুন বাতিল করতে হবে। জাতীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্তে সাংবাদিকদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
সাংবাদিক কবি মাহমুদ শফি বলেন, স্বৈরাচার আমলে শওকত মাহমুদের বিরুদ্ধে ৭৬টি মামলা দিয়ে জেল খানায় বন্দী করা হয়েছিল। আমরা জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরাম বিগত ১৭ বছরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি।
শামসুল হক দুররানী বলেন, আমরা যারা জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরামের সদস্য, আমরা প্রত্যেকেই এক একটি শক্তি। পতিত বসুন্ধরা গ্রুপের দালাল মিডিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলবে। যেহেতু জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি বসুন্ধরা গ্রুপের অন্যায় অত্যাচারের বিচার দাবি করেছে এবং আদালত তাদের সকলের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করেছে, তাই এদের সহযোগীদের চিহ্নিত করতে হবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য নির্মল চক্রবর্তী বলেন, ১৯৭৩ সাল থেকে সাংবাদিক সমাজ নির্যাতিত-নিপীড়িত। গত ১৫ বছর সাংবাদিকরা আদর্শচ্যুত হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাব দখল করতে গিয়ে শওকত মাহমুদের গলা চেপে ধরা হয়েছিল, জাতীয়তাবাদী ফোরাম থেকে আদর্শচ্যুত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমাদের বিজয় নিশ্চিত।
বিএফইউজে’র সাবেক সহকারী মহাসচিব কাজিম রেজা বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যাংকিং লেনদেন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। কিন্তু এই শক্তি এখনও মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে, তাদেরকে রুখে দিতে হবে।
বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি বুলবুল আহমেদ বলেন, জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরাম অনেক পুরাতন ফোরাম। আমাদের বিশ্বাস এবং ঐক্য আগামীতে আমাদেরকে আরে শক্তিশালী করবে। কিন্তু আমাদের চেতনা দিয়ে আগাছাগুলো যাতে আমাদেরকে গ্রাস করতে না পারে সে জন্য সচেতন থাকতে হবে।
সিনিয়র সাংবাদিক আজহার আলী সরকার বলেন, গত ১৪ বছরে ৯ বার আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৩ বার আত্মহত্যা করতে চেয়েছি। ছেলে সন্তানের মায়ায় আত্মহত্যা করিনি। আমরা শওকত মাহমুদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছি।
সাব এডিটর কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক জাওহার ইকবাল বলেন, জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরাম ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমরা আরো শক্তিশালী হবো।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য নাজমুল হাসান বলেন, জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরামের দুর্দিনে আমরা সংগঠনের সাথে ছিলাম, আমরা জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী এবং সংগঠনের সাথে থাকবো।
বিএফইউজের সাবেক কোষাধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা শওকত মাহমুদের লোক নই, শওকত মাহমুদ জাতীয়তাবাদী আদর্শের নেতা, আমাদের লোক। আমাদের নেতৃত্বকে দুর্বল করার জন্য কিছু সংখ্যক নেতা শওকত মাহমুদকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে।
এ জেড এম খায়রুজ্জামান বলেন, সাংবাদিকতার গভীর অন্ধকারাচ্ছন্য, অভিভাবকহীন। আমরা শওকত মাহমুদকে কাছে পেয়ে আলোর ছোঁয়া পেয়েছি। সাংবাদিকতা এখন তোষামোদের বাহন হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিদেশ সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনগুলো ছিল চাটুকার সাংবাদিকতা। সাংবাদিক জহিরুল হক রানা বলেন, ২০১৪ সালে আমাকে বহিস্কার করা হয়েছে। আমি চেয়েছিলাম আওয়ামী জামাত মুক্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকাকালীন আমাকে বহিস্কার করা হয়। মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, আওয়ামী স্বৈরাচারীদের পতনের পর আমাদের আজকে প্রয়োজন, শওকত মাহমুদের নেতৃত্বে সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ হওয়া। জাতীয়তাবাদী আদর্শের সাংবাদিকরা কখনও চাটুকারি করে না। বিগত সময়ে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি চার বার ক্ষমতায় ছিল, সাংবাদিকরা আদর্শচ্যুত হয় নাই। বর্তমানে এস আলমের চাটুকার কিছু সাংবাদিকের কারণে সাংবাদিক সমাজ প্রশ্নবিদ্ধ।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, জাতীয় প্রেসক্লাব, বিএফইউজে, ডিইউজের নেতৃবৃন্দ। আলোচনা সভা শেষে ২৩১ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। আলোচনা সভার শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য মুজিবুর রহমান সরকার। জাতীয় প্রেসক্লাব বিএফইউজে ও ডিইউজের নিহত সাংবাদিক ও জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহীদ ছাত্র-জনতার রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।