শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫০ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ওসমানী জাতীয় স্মৃতি পরিষদ-এর বিশেষ বাণী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খ. ম. আমীর আলী ছাত্র বৈষম্য আন্দোলনে আহতদের জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়ে পাশে বিএনপি নেতা মোঃ সাইফুল ইসলাম নরসিংদীর মনোহরদীতে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানক্লাব ‘নেবুলাস’-এর যাত্রা শুরু প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস গার্মেন্টস ব্যবসায়িদের নিঃস্ব করে কোটি টাকা প্রতারণা করে লাপাত্তা কৃষক লীগ নেতা হান্নান শেখ! টাকার বিনিময়ে বিদ্যুতের তার খাম্বা মিটার এনে দেন ইলেকট্রিশিয়ান জুলিয়ান! নবান্ন উৎসব ঘিরে জমে উঠেছে কালাইয়ে মাছের মেলা কটিয়াদীতে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের সম্বর্ধনা জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত না-হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকতে হবে: রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু
প্রভাবশালীদের হাতে আটকা ব্যাংকের ৭৬ হাজার কোটি টাকা!

প্রভাবশালীদের হাতে আটকা ব্যাংকের ৭৬ হাজার কোটি টাকা!

ডেস্ক প্রতিবেদন: কিছু প্রভাবশালী গ্রাহক আদালত থেকে স্থগিতাদেশ বা স্টে অর্ডার নিয়ে ব্যাংকের ৭৬ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছেন। ব্যাংকাররা বলছেন, এসব ঋণের বেশির ভাগই খেলাপিযোগ্য। কিন্তু আদালতের স্টে অর্ডার নেওয়ার কারণে দীর্ঘদিন থেকে ঝুলে আছে ঋণগুলো, যা ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে।এই মুহূর্তে মোট ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের সঙ্গে স্টে অর্ডারের অর্থ যোগ করলে দেশের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি ঋণ মন্দ হয়ে পড়বে, যা একটি গণতান্ত্রিক দেশের অর্থনীতির সঙ্গে পুরোপুরি অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের বিচারব্যবস্থা ধীর গতিসম্পন্ন হওয়ায় এর সুযোগ নেন অনেক ব্যবসায়ী। কোর্ট থেকে স্টে অর্ডার নিলে ঋণ পরিশোধ না করেও বহুদিন নিশ্চিন্ত থাকা যায়। স্বল্প বিনিয়োগে অধিক সময় পেতে এমন কাজ করে থাকেন ব্যাংকের প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতারা। স্বাধীনতার ৪৭ বছরে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত অনেক দূর এগিয়েছে।

আবার অনিয়ম ও ঋণ কেলেঙ্কারিতেও জর্জরিত হয়েছে দেশের অর্থনীতি। অনিয়ম-দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা চলে গেছে লুটেরাদের পকেটে। ভুয়া এফডিআরের কাগজপত্র জমা দিয়ে, এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা হয়ে এমনকি জাল দলিলেও অনুমোদন হয়েছে মোটা অঙ্কের ঋণ। অথচ একটি কেলেঙ্কারিরও বিচার হয়নি।

সাজা হয়নি অভিযুক্তদের কারো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির খবর প্রকাশের পর প্রাথমিক তদন্ত হয়েছে। বছরের পর বছর মামলা চলছে। অভিযুক্তদের কেউ জেলে আছেন, অনেকে জামিন পেয়েছেন।

কেউ বা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করেই লাপাত্তা। কিন্তু সুরাহা হচ্ছে না কোনো ঘটনার। সাজা হয়নি সংশ্লিষ্ট অপরাধীর। টাকাও ফেরত আসেনি। বিচার না হওয়ায় নামে-বেনামে ঋণ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার প্রবণতা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, অর্থঋণ আদালতে খেলাপি ঋণের মামলার স্তূপ বেড়েই চলেছে। গত মার্চ শেষে দেশের ৬০টি ব্যাংকের অর্থঋণ আদালতে মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ সাত হাজার ৫৯৩টি। এসব মামলায় আটকে আছে প্রায় দুই লাখ ৩৬ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা।

গত বছরের ডিসেম্বরে মামলার সংখ্যা ছিল দুই লাখ ছয় হাজার ৫৮৪টি, এর বিপরীতে জড়িত অর্থের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। ফলে চলতি বছরের তিন মাসে মামলার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় এক হাজার ৯টি। আর জড়িত অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ১০ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন বিভাগের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

মূলত আগের মামলা নিষ্পত্তিতে গতি কমে যাওয়া ও নতুন মামলা বেড়ে যাওয়ায় মামলার স্তূপ কমছে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে বের করা ঋণ স্বাভাবিক নিয়মে আদায় করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। বারবার সুবিধা ও ছাড় দেওয়ার পরও এসব ঋণ ফেরত দিচ্ছেন না খেলাপিরা। আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে এসব ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা হলেও নিষ্পত্তি হচ্ছে খুবই কম।

ব্যাংকাররা বলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় অর্থঋণ আদালতের সংখ্যা কম হওয়া ও বিচারকের অভাব এবং আইনি মতামতের জন্য ব্যাংকের আইনজীবীকে পর্যাপ্ত সময় ও সহায়ক জামানতের পর্যাপ্ত দলিলাদি সরবরাহ করতে না পারায় অর্থঋণ আদালতে মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়।

এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অর্থঋণ আদালত খুবই কার্যকর একটি আদালত। কিন্তু এটা অকার্যকর হয়ে আছে। কারণ এখানে পর্যাপ্ত লোকবল ও আদালতের অভাব রয়েছে। তাই দিনের পর দিন মামলার স্তূপ বেড়েই চলেছে। তা ছাড়া একটি বড় অঙ্ক প্রভাবশালীরা স্টে অর্ডার বা রিট করার মাধ্যমে ঝুলিয়ে রেখেছেন, যেটা ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বহুদিন থেকে বলে আসছি যদি কোনো গ্রাহক উচ্চ আদালতে রিট করেন, তাহলে যেন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা (২০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ) জমা দেওয়ার বিধান রাখা হয়। কিন্তু আমাদের কথা শোনা হয়নি। তাই দিনের পর দিন রিটের সংখ্যা ও আটকে থাকা টাকার পরিমাণ বাড়ছে। ব্যাংক খাতের এই ক্রান্তিকালে তারা যদি এই টাকাগুলো ফেরত পেত তাহলে ব্যাংকের সমস্যা আর থাকত না। অটোমেটিক্যালি অর্থনীতি উপকৃত হতো। তাই কেউ স্টে অর্ডার নেওয়ার আগে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডাউন পেমেন্ট জমা রাখার বিধান চালু করা উচিত।’

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com