শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বাংলাদেশ সফরে আসছে না ভারত, স্থগিত হতে পারে এশিয়া কাপ আন্দোলনে নামা দলগুলোর উদ্দেশ্যে সরকারের নতুন বার্তা সারাদেশে পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ ১৫ শহরে পাকিস্তানের হামলা ঠেকিয়ে দেওয়ার দাবি ভারতের নারী অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা চায় বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র এপ্রিলেও বাড়তি রেমিট্যান্স, এলো ৩৩ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা কোস্ট গার্ডের অভিযানে হালিশহর এলাকা থেকে সোয়া ৪ কোটি টাকার বিদেশি মদ ও বিয়ারের চালান জব্দ মুন্সিগঞ্জে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থেকে নারী-শিশুসহ ৩৫ রোহিঙ্গা আটক শ্রীবরদীতে বন বিভাগের অভিযানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো অবৈধ ৩০ সবজি বাগান
নারী অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা চায় বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র

নারী অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা চায় বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারীদের প্রতি ঘৃণা ছড়ানো, লাঞ্ছনা ও কটুক্তির বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র। আজ রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ এই দাবি জানান।

বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সীমা দত্ত। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুস্মিতা রায় সুপ্তি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের অর্থ সম্পাদক নওশিন মুস্তারী সাথী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমা। বক্তারা বলেন, দেশের ইতিহাসে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল দৃশ্যমান, তা ভাষা আন্দোলন হোক বা মুক্তিযুদ্ধ কিংবা সাম্প্রতিক জুলাই গণঅভ্যুত্থান—নারীরা কেবল অংশগ্রহণ করেননি, বরং নেতৃত্ব দিয়েছেন, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, এবং অনেক ক্ষেত্রে আত্মত্যাগ করেছেন।

ইতিহাসে নারীর ভূমিকা
সমাবেশে বক্তারা স্মরণ করিয়ে দেন—১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ কিংবা সাম্প্রতিক গণআন্দোলনে নারীরা কেবল সাহসের প্রতীক ছিলেন না, তারা ছিলেন প্রতিবাদের প্রধান মুখ। “আমরা দেখেছি কিভাবে মা, বোনেরা সন্তানদের হাতে ধরে রাজপথে নেমে এসেছেন। গুলির মুখে দাঁড়িয়ে থেকেছেন। তারা যে শুধু সাহসী ছিলেন তা-ই নয়, তারা প্রতিরোধের প্রধান শক্তি হিসেবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন,” বলেন সীমা দত্ত।

নারী সংস্কার কমিশন: অগ্রগতির প্রতীক
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী সংস্কার কমিশন গঠন একটি মাইলফলক। ১৯ এপ্রিল প্রকাশিত এই কমিশনের রিপোর্টে নারী অধিকার ও সমমর্যাদার প্রশ্নে বেশ কিছু যুগান্তকারী সুপারিশ রাখা হয়েছে, যা বর্তমান সমাজে নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে বলেই তাদের আশা।

কিন্তু এই কমিশনের প্রতিবেদন ঘিরে শুরু হয়েছে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর তীব্র সমালোচনা। বক্তারা বলেন, “যৌক্তিক সমালোচনা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু হেফাজতে ইসলামসহ কিছু গোষ্ঠী সেই সীমা ছাড়িয়ে নারীদের উদ্দেশ্যে কটুক্তি, ব্যঙ্গ এবং অবমাননাকর মন্তব্য করছেন, যা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।”

হেফাজতের বক্তব্য: গণতন্ত্রবিরোধী ও পশ্চাৎপদ মানসিকতা
বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র অভিযোগ করেছে, হেফাজতে ইসলাম ও তাদের মতাদর্শে বিশ্বাসী গোষ্ঠীগুলো নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট বাতিলের দাবি তোলার পাশাপাশি কমিশনের সদস্যদের ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে চলেছেন। এই গোষ্ঠী নারীদের স্বাভাবিক মর্যাদার অবস্থান মানতে নারাজ।

বক্তারা প্রশ্ন তোলেন, “এই ধর্মীয় গোঁড়ামি ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা কেবল নারী সমাজের ক্ষতি করছে না, এটি পুরো সমাজকে পশ্চাৎপদতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নারীর স্বাধীনতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করাটা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব।”

সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশে যখন প্রকাশ্যে নারীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে, তখন সরকার একেবারে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। “আমরা সরকারের কাছ থেকে কার্যকর উদ্যোগ আশা করেছিলাম। কিন্তু বাস্তবতা হলো—নারী লাঞ্ছনা ও অবমাননার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক বা আইনগত কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক,” বলেন সুস্মিতা রায় সুপ্তি।

নারীদের বর্তমান অবস্থা: নিরাপত্তাহীনতা ও ভয়ের পরিবেশ
সমাবেশে বক্তারা বলেন, হেফাজতের মতো গোষ্ঠীগুলোর বক্তব্য সমাজে নারীদের প্রতি বিদ্বেষ, ঘৃণা ও সহিংসতার সংস্কৃতিকে আরও উৎসাহ দিচ্ছে। এর ফলে সারাদেশে নারীরা নতুন করে নানা রকম আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।
“নারীদের মতপ্রকাশ, চলাফেরা এবং নিরাপত্তা হরণ করা হচ্ছে নিয়মিতভাবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী নেত্রীদের উদ্দেশ্যে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, অবমাননা এবং হুমকি বেড়ে গেছে বহুগুণে,” বলেন প্রগতি বর্মণ তমা।

নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রকে
বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র মনে করে, ৫১ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো উন্নয়ন টেকসই হতে পারে না। অর্থনীতিতে, রাজনীতিতে, শিক্ষায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নারীরা ইতিমধ্যেই তাদের প্রতিভা ও সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন। এখন প্রয়োজন এই অবদানের স্বীকৃতি এবং সুরক্ষা।

“নারীদের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত না করে, অর্থনৈতিক অংশগ্রহণের স্বীকৃতি না দিয়ে দেশ এগোতে পারে না। বৈষম্যহীন একটি সমাজ গড়ে তুলতেই হবে। নারী প্রশ্নে কোনো রকম আপস করা চলবে না,” বলেন সীমা দত্ত।

সরকারের প্রতি দাবিসমূহ
সমাবেশ শেষে একটি লিখিত দাবি উত্থাপন করেন সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক সাদিয়া নোশিন তাসনিম। দাবিতে উল্লেখ করা হয়:
১. হেফাজতে ইসলামসহ যারা নারী সংস্কার কমিশনের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য ও কটুক্তি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. নারী কমিশনের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. নারীর মর্যাদা, অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে কার্যকর নীতি ও পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪. ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে—রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে।
৫. নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে প্রচলিত আইনকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হবে।

সমাজে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে
সমাবেশে উপস্থিত নারীরা বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমরা একটি নতুন সমাজের স্বপ্ন দেখেছি—যেখানে বৈষম্য থাকবে না, সাম্য থাকবে। সেই স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন না করে থামব না। নারীর মর্যাদাহানিকর যে কোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।”

বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের আজকের সমাবেশ ছিল কেবল একটি প্রতিবাদ নয়, এটি ছিল একটি শপথ—নারী অবমাননার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার, ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে কথা বলার, বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার অঙ্গীকার।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com