শনিবার, ১৯ Jul ২০২৫, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি:
গত বুধবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ। পুলিশের সঙ্গে চলে দফায় দফায় সংঘর্ষ, জারি করা হয় কারফিউ। এখনো সেখানকার পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।চলছে যৌথ বাহিনীর অভিযান, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৬৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে সদর থানা থানায় ৪৫ জন, মুকসুদপুর থানায় ৬৬ জন, কাশিয়ানী থানায় ২৪ জন, টুঙ্গিপাড়া থানায় ১৭ জন এবং কোটালীপাড়া থানায় ১২ জন। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাটানো হয়েছে বলে বিভিন্ন থানার ওসি গন জানিয়েছেন।
গোপালগঞ্জে জারিকরা কারফিউয়ের সময়সীমা শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বর্ধিত করার ঘোষনা দেয়া হয়েছে। গত বুধবার রাত ৮ থেকে এই কারফিউ জারী করা হয়। মাঝে শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ৩ ঘন্টা কারফিউ সিথিল করা হয়। এ সময়ের মধ্যে সাধারন মানুষ তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজের জন্য বাইরে আসেন। কাজ শেষে আবার যার যার বাড়িতে চলে যান। আবার রাস্তা ফাকা হয়ে যায়।
এদিকে, গোপালগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলা, মারপিট গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে(মামলা নং-১৫ তাং ১৭.০৭.২৫)। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) গভীর রাতে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আহম্মেদ আলী বিশ্বাস বাদী হয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়াল সহ ৭৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ জনকে আসামি করে মোট ৫শ ৭৫ জনকে আসামী করে এ মামলা দায়ের করেন।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান শুক্রবার বিকাল সোয়া ৩ টার দিকে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওসি জানান, গত বুধবার (১৬ জুলাই) সকালে এনসিপির পদযাত্রা কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট আঞ্চলিক সড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুরে পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল।নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানের নেতৃত্বে একদল লোক অতর্কিতে কর্তব্যরত পুলিশের উপর হামলা করে। তারপর তারা পুলিশ সদস্যদের মারপিট ও গাড়ি ভাংচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় পুলিশের পরিদর্শক আহম্মেদ আলী বিশ্বাস সহ ৫ পুলিশ সদস্য আহত হন।
এদিকে, দুষ্কৃতিকারীদের ধরতে নদীপথেও চলছে টহল। সমগ্র জেলাজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের অংশ হিসেবে নদীপথে নজরদারি বাড়িয়েছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী। ১৮ জুলাই শুক্রবার নৌবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট সাজ্জাদ ও কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তারা জানান, সম্প্রতি গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, দুষ্কৃতিকারীরা নদীপথ ব্যবহার করে যেন পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য জেলার নদীপথে বিশেষ টহল পরিচালনা করছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী। নিরাপত্তা নিশ্চিতে চলছে টহল, তল্লাশি, গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও কঠোর নজরদারী।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও জানায়, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এনসিপির পথসভা শেষে গাড়িবহরে হামলা চালায়।এতে সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রমজান মুন্সি(৩৫)নামে এক রিক্সাচালক গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়।এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৫ জনে।
চলমান কারফিউ শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শিথিল ছিল। তখন গোপালগঞ্জ শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত লঞ্চঘাট সংলগ্ন রাস্তায় প্রচুর ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও টেম্পু (মাহিন্দ্র) চলেছে। সড়কে চলেছে প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল। জরুরি দরকারে বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটেছেন মানুষ। মূল সড়কের পাশের ও গলির ভেতর বেশ কিছু দোকান খুলে কেনাবেচা হয়েছে।তবে মার্কেট বন্ধ রয়েছে।বাজারের বেশিরভাগ দোকান খোলেনি।
এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ফল- সবজির মতো কাঁচা পণ্যের ব্যবসায়ীরা পড়েছেন মহাবিপাকে। দোকান বন্ধ থাকায় তাদের পণ্য পচে যাচ্ছে।শহরের বড় বাজারের ফল ব্যবসায়ী রতন সাহা বলেন, কারফিউয়ে দোকান খুলতে না পারায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছি।তিন দিনে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ফল পচে গেছে। আজ শুক্রবার তিন ঘণ্টার জন্য দোকান খুলেছি। কিন্তু এই সময়ে আর কতটুকু বিক্রি করা যায়। বাকি ফলগুলোও পচে যাবে। আমরা চাই, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসুক।