মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:১২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
আহমেদ সাইফুদ্দীন চৌধুরী পঞ্চম মেয়াদে বিজিআইসি’র মুখ্য নির্বাহী হার্টের রিং-এর দাম কমানোর সিদ্ধান্ত সরকারের মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় প্রধান উপদেষ্টা ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন উলিপুরে এসএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হাতুড়ে পল্লী চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় সারা শরীরে ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে শিশু নুরজাহান ঝিনাইগাতীতে গৃহবধূর উপর মরিচের গুঁড়া নিক্ষেপ করে শ্লীলতাহানির অভিযোগ রূপগঞ্জে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মতিন চৌধুরীর ১৩তম শাহাদাত বার্ষিকী পালিত লালমনিরহাটে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের এডহক কমিটি গঠনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠিত রাজশাহীতে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে বিষণ্নতা ঝিনাইগাতীতে সামান্য বৃষ্টিতেই প্রধান রাস্তায় হাঁটুপানি: দুর্ভোগে পথচারীরা
রাজশাহীতে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে বিষণ্নতা

রাজশাহীতে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে বিষণ্নতা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী শহরের অর্ধেকের বেশি তরুণ বিষণ্নতায় ভুগছেন। এক গবেষণায় এর প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে অতিরিক্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার।সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজশাহী নগরীর ৫৭ শতাংশের বেশি তরুণ বিষণ্নতায় ভুগছেন। তরুণদের চেয়ে বেশি বিষণ্ন তরুণীরা।
‘থাই জার্নাল অব পাবলিক হেলথ’-এ প্রকাশিত এই গবেষণা পরিচালনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের ছয়জন গবেষক। এই গবেষণা চলাকালে রাজশাহী নগরীর কাজলা, তালাইমারী, সাহেববাজার এবং বিন্দুর মোড় থেকে ১৮ বছরের বেশি ৪৫০ জন তরুণ-তরুণীকে অংশগ্রহণকারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দীর্ঘ সময় ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটান এবং নির্দিষ্ট ধরনের পোস্ট ও পেজ অনুসরণ করেন, তাদের মধ্যে বিষণ্নতার হার বেশি। তরুণদের বিষণ্নতার হার ৫৫ দশমিক ২ শতাংশ। আর তরুণীদের মধ্যে বিষণ্নতার হার ৬২ দশমিক ১ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি বিষণ্নতা দেখা গেছে ২১ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশই ছিলেন এই বয়সের। পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার নিয়ে বিষণ্ন থাকার কথাও জানিয়েছেন তারা। গবেষণায় বিষণ্নতার মাত্রা নির্ধারণে ব্যবহৃত হয় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্কেল ‘পেশেন্ট হেলথ কুইশ্চেনেয়ার-৯’। ফলাফলে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ ছিলেন গুরুতর বিষণ্নতায় আক্রান্ত, আর ২০ শতাংশের ছিল মাঝারি ধরনের উপসর্গ। ফেসবুক, এক্স ও পিন্টারেস্ট ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিষণ্নতার মাত্রা অন্যদের তুলনায় বেশি। যারা দিনে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাটান, তাদের মধ্যে বিষণ্নতা বেশি দেখা গেছে। দীর্ঘ সময় ধরে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে ঘুমে ব্যাঘাত, শক্তি হ্রাস, আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, ব্যর্থতার অনুভূতি এবং আত্মহত্যার চিন্তার মতো উপসর্গ বেশি পাওয়া গেছে।গবেষণায় প্রায় ৮৭ দশমিক ৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, তারা মনে করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাটানো সময় তাদের সুস্থতার জন্য ক্ষতিকর। গবেষণায় আরও দেখা যায়, সেলিব্রেটি, মডেল, গেমিং কনটেন্ট, ফানি ভিডিও এবং পোষা প্রাণীর পেজ অনুসরণকারীদের মধ্যে বিষণ্নতার হার বেশি। অন্যদিকে ফেসবুকের বন্ধু, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, সংবাদ কিংবা বিনোদনমূলক পেজ অনুসরণকারীদের মানসিক চাপ তুলনামূলকভাবে কম।গবেষণার প্রধান গবেষক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংখ্যা বিজ্ঞান ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একদিকে যেমন সংযোগের শক্তিশালী মাধ্যম, অন্যদিকে এটি তরুণদের নিঃসঙ্গতাও বাড়ায়।’
তিনি বলেন, ‘তরুণরা অনলাইনে যেসব কনটেন্ট দেখে তারা এর মানসিক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন নয়। সামাজিক মাধ্যমে জীবনের সাজানো ছবি দেখে তারা নিজেদের জীবন নিয়ে হতাশ হয় এবং আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে।’
রাত জেগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ফলে ঘুমের সময়সূচি ব্যাহত হয়, যা মানসিক স্থিতিশীলতার ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে বলে গবেষকেরা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছেন। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব রোধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছেন। তাদের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজিটাল লিটারেসি প্রোগ্রাম, অভিভাবকদের সন্তানদের স্ক্রিন টাইমে নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতা বাড়ানো; মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রচারণা, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সময় ব্যবহারের সতর্কতা, অ্যালগরিদমিক নিয়ন্ত্রণ করার উপায় অবলম্বন করা।
গবেষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, ‘বাংলাদেশ ডিজিটাল মাধ্যমকে যত বেশি গ্রহণ করছে, তত বেশি মানসিক প্রতিরোধক্ষমতা এবং সচেতনতা তৈরি করা জরুরি। তা না হলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই।’

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com