রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ১১:১৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান একমত হয়েছে। উভয়পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে চায়।
রোববার (২৪ আগস্ট) ঢাকা সফররত পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তৌহিদ হোসেন বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই প্রত্যাশা করেন না যে ৫৪ বছরের সমস্যা আজকের এক দিনের মিটিংয়ে… যে মিটিংটা গত ১২ থেকে ১৩ বছর পর, তাও আবার হিনা রব্বানির দাওয়াত দেওয়ার জন্য এসেছিলেন, দ্বিপাক্ষিক সফর ছিল না… এখানে বসে আমরা এক ঘণ্টায় সমাধান করে ফেলতে পারব; এটা নিশ্চয়ই কেউ আশা করবেন না। আমরা পরস্পরের অবস্থান তুলে ধরেছি।
তিনি বলেন, আমি আপনাদের এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, একটি বিষয়ে শুধু কথা হয়েছে যেটাকে খানিকটা অগ্রগতি হিসেবে ধরে নিতে পারেন। আমরা তিনটি বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছি। দুই পক্ষ একটি বিষয় ঠিক করেছি, যেটা আমাদের সমাধান করতে হবে, সেটি হলো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যাতে খুব স্মুথলি এগোতে পারি। এজন্য এগুলো পেছনে ফেলতে হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দুই পক্ষ এ নিয়ে সম্মত হয়েছে। আমরা এ নিয়ে কথা বলব এবং চেষ্টা করব, এই ইস্যুগুলো যেন আগামীতে বা কোনো এক পর্যায়ে সমাধান করা যায়। আমরা এটা নিয়ে আলাদা করে এমনভাবে কথা বলব যাতে করে এই জিনিসগুলোকে পেছনে ফেলতে পারি। এ ছাড়া, আমরা পরস্পর নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেছি।
অমীমাংসিত বিষয়ে দুই দেশের অবস্থান একই কি না, জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, অমীমাংসিত বিষয়ে দুই দেশ নিজেদের অবস্থান পুর্নব্যক্ত করেছে। একটি শুধু অগ্রগতি মনে করি, আমরা দুই পক্ষ একমত হয়েছি যে, এই বিষয়গুলো আলোচনা করে সমাধান করা প্রয়োজন, যাতে করে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এগুলো বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের বক্তব্যে দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপদেষ্টার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ইসহাক দার বলেছেন একাত্তর ইস্যুতে এর আগে দুইবার সমাধান হয়েছে- ১৯৭৪ সালে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি এবং ২০০২ সালে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পারভেজ মোশাররফের দুঃখ প্রকাশ- এ বক্তব্যের সঙ্গে বাংলাদেশ একমত কি না?
জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আমি অবশ্যই একমত না। একমত হলে তো সমস্যাটার সমাধান হয়ে যেত তাদের মতো করে। আমি তো বলেছি, আমরা আমাদের অবস্থান বলেছি, ওনারা ওনাদের অবস্থান বলেছে।
বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা চাই হিসাবপত্র হোক, যেটা টাকা-পয়সার ব্যাপার, সমাধান হোক। আমরা চাই, এখানে যে গণহত্যা হয়েছে সেটার ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করুক, মাফ চাক। আমরা চাই, আটকেপড়া মানুষগুলোকে তারা ফেরত নেবে। আমি বাংলাদেশের অবস্থান শক্তভাবে তুলে ধরেছি।
পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক হচ্ছে। এটা তৃতীয় দেশ বিশেষ করে চীনের ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের কারণে কি না- জানতে চাইলে তা নাকচ করে তিনি বলেন, ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থাটাতে চীনের উৎসাহ আছে, পাকিস্তানেরও উৎসাহ আছে। আমরা তো বলেছি, আপনারা আরও দেশকে নিয়ে আসেন, আমরা একসঙ্গে বসি। আমাদের অবস্থান সেই একই আছে। এটার কারণে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করছি তা নয়।
বিগত সরকারের সময় পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ইচ্ছাকৃতভাবে পিছিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গত সরকারের আমলে ইচ্ছাকৃতভাবে পিছিয়ে রাখা হয়েছিল। আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি, আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক চাই এবং অন্যান্য বন্ধু দেশের সঙ্গেও চাই; এর চেয়ে বেশি কিছু না।
এর আগে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান একটি চুক্তি এবং ৫টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে।
একমাত্র যে চুক্তিটি সই হয়েছে সেটি হলো- দুই দেশের সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা বিলোপ চুক্তি। আর যেসব বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে সেগুলো হলো- দুই দেশের বাণিজ্যবিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন, সংস্কৃতি বিনিময়, দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা, দুই দেশের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার (বাসস ও এপিপিসি) মধ্যে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সঙ্গে পাকিস্তানের ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইসলামাবাদের (আইএসএসআই) সহযোগিতা।