নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লার নাঙ্গলকোট ডায়াবেটিক সমিতির তহবিল আত্মসাতের অভিযোগের পর ট্রাস্ট লাইফের ডিএমডি মো. আলাউদ্দিন মিয়ার বিরুদ্ধে এবার শেয়ার বিক্রি করে অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
লিখিত অভিযোগে এ.বি.এস. মহিউদ্দীন বাবলু জানান, ২০১৭ সালে আলাউদ্দীন মিয়া সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় তার মাধ্যমে কোম্পানির প্রাথমিক শেয়ার কেনার জন্য বাবলু তাকে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন। চুক্তি অনুযায়ী, ১০ টাকার শেয়ার ২০ টাকায় বিক্রির প্রতিশ্রুতি দেন আলাউদ্দীন মিয়া। বাবলুর দাবি, মোট ৩৭,৫০০ শেয়ার তার নামে ক্রয় করা হয় এবং লিখিতভাবে দু’পক্ষের মধ্যে লভ্যাংশ ও লাভ-ক্ষতির চুক্তিও সম্পন্ন হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে আলাউদ্দীন মিয়া শেয়ারগুলোর মধ্যে ৩৫,০০০ শেয়ার বিক্রি করে বাবলুকে ৮ লাখ টাকা দিলেও বাকি অর্থ পরিশোধে অস্বীকৃতি জানান এবং খারাপ আচরণ করেন।
বাবুলের দাবী তার ২৫০০ শেয়ার, শেয়ার-ডিভিডেন্ড, ক্যাশ-ডিভিডেন্ডসহ মোট প্রায় ১৪-১৫ লাখ টাকা মেরে দিয়েছে আলাউদ্দীন মিয়া।
মহিউদ্দীন বাবলু বলেন, “আলাউদ্দীন মিয়া আমাকে লিখিতভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু এখন তিনি তা অস্বীকার করছেন। আমার প্রাপ্য অর্থ আত্মসাৎ করে তিনি অসৎভাবে লাভবান হয়েছেন।
তিনি জানান, “শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশের পাশাপাশি তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।”
এ বিষয়ে আলাউদ্দীন মিয়ার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি ক্ষোভের সাথে অভিযোগকারী মহিউদ্দীন বাবলুকে একজন চিহ্নিত প্রতারক হিসেবে দাবী করেন।
আলাউদ্দিন বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট। আমি ট্রাস্ট লাইফে কমিশনে কাজ করি। ট্রাস্ট আমাকে বেতন দেয় না। আমার ট্রাস্ট লাইফে চাকরি করতে হবে এমন কোন কথা নেই, আমি সিইও গিয়াস উদ্দিনের কাছে রিজাইন লেটার দিয়ে দিয়েছি। মহিউদ্দীন বাবলু একজন চিহ্নিত প্রতারক। বাবলুও ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ থেকে সুবিধা গ্রহণ করেছে। আমি তাকে ট্রাস্ট লাইফে চাকরি দিয়ে বসিয়ে বসিয়ে ২ বছর বেতন দিয়েছি। বাবলু এর আগে স্বদেশ লাইফে চাকরিকালীন সময়ে ঐ প্রতিষ্ঠানের এমডির বিরুদ্ধেও মামলা করে। সে একজন চিহ্নিত মামলাবাজ। বাবলুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে এবং সেই মামলায় বেশ কয়েকবার জেল খেটেছে।
শেয়ার প্রসঙ্গে আলাউদ্দিন আরও বলেন, এখন বাবলু যে কাগজ দেখিয়ে শেয়ারের টাকা দাবী করেছে, সেই কাগজের মূল কপি দেখাতে হবে। এ বিষয়টা আদালতের বিষয় এটা সাংবাদিকের বিষয় নয়। উনি যদি টাকা পায় আদালত থেকে আদায় করে নিবে। বরং আমি তাকে ব্যাংক থেকে ১৮ লক্ষ টাকা দিয়েছি এবং সেই টাকা পাওনা রয়েছি, যার প্রমাণ রয়েছে। ব্যাংক স্টেটমেন্ট আমার পাওনা টাকা না দেওয়ার জন্য সে এখন তালবাহানা করছে।
অপরদিকে শেয়ারের এই ‘মূল কাগজ’ ইস্যুর বিষয়টি নিয়ে আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে গুরুত্বর অভিযোগ করেন বাবলু। তিনি বলেন, আপাদমস্তক বাটপার আলাউদ্দিন ট্রাস্ট লাইফের প্রধান কার্যালয়ে বসে শেয়ারের মূল কাগজ ছিড়ে ফেলেছে। কিন্তু ফটোকপি আমার কাছে আছে, সে তার সীল ও স্বাক্ষর কিভাবে অস্বীকার করবে? মূলত, সে আমার টাকা মেরে এখন ধান্দাবাজি করছে। আমি চাই, তার কুকর্মের কঠিন শাস্তি হোক।”
এ বিষয়ে জানতে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংবাদ প্রকাশের আগ পর্যন্ত কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন মিয়ার বিরুদ্ধে এর আগে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট ডায়াবেটিক সমিতির তহবিল আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে তিনি সরকারি অনুদান ও প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে প্রায় ৫৪ লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন বলে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তদন্তে দেখা যায়, হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র ক্রয়ে মূল্য কারসাজি, জালিয়াতি ও অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। তিনি এক্স-রে ও সি-আর মেশিন ঢাকায় নিয়ে গিয়ে একটি ফেরত দেননি, যার মূল্য প্রায় ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া ভাতা ও বেতন বাবদ প্রায় ১০ লাখ টাকাও বেআইনিভাবে গ্রহণ করেন বাবলু।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলাউদ্দিন মিয়া দায়িত্বে থেকে আর্থিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ, তহবিল লোপাট ও জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন। প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
ট্রাস্ট লাইফের ডিএমডি আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন চলবে। পরবর্তী প্রতিবেদনে থাকবে- “আলাউদ্দিনের প্রতারণার ক্ষপ্পরে ট্রাস্ট লাইফের সিইও”