কয়েক বছরের বিরতির পর নতুন করে যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বীমা খাতের অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব অজিত চন্দ্র আইচ। জীবন বীমা শিল্পের অভিজ্ঞ ও সফল নির্বাহী অজিত চন্দ্র আইচ গত ২৬ অক্টোবর এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে তাকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয় কোম্পানির সাফল্যের ধারাবাহিকতা, ইতিবাচক ভাবমূর্তি ও গ্রাহক ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্যে।
ভারপ্রাপ্ত সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর অজিত চন্দ্র আইচ বলেন, পরিচালনা পর্ষদ যমুনা লাইফের বৃহত্তর স্বার্থে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। দক্ষ কর্মীবাহিনীকে কাজে লাগিয়ে, বীমা আইন ও আইডিআরএ’র নির্দেশনা মেনে কোম্পানিকে আরও এগিয়ে নিতে চাই।” তিনি আরও জানান, যমুনা লাইফে শতভাগ ডিজিটাল সেবা (ইআরপি) চালুর মাধ্যমে সারাদেশে নতুন সংগঠন গড়ে তোলা, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও গ্রাহকসেবার মানোন্নয়ন তার মূল লক্ষ্য।
বীমা খাতে প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে নেতৃত্ব, সংগঠন সৃষ্টি ও নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন অজিত চন্দ্র আইচ। যমুনা লাইফের বর্তমান চেয়ারম্যান ও খ্যাতিমান বীমা নির্বাহী ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডলের নীতিনির্দেশনায় এই নতুন অধ্যায় বীমা শিল্পে ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা বহন করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে এম.এ. অধ্যয়নকালেই অজিত চন্দ্র আইচের কর্মজীবনের সূচনা হয়। ১৯৮৫ সালের ২০ মে তিনি জীবন বীমা কর্পোরেশনের চট্টগ্রামস্থ ৭১৭ ব্র্যাঞ্চে উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৯ সালের শেষ দিকে দেশের প্রথম বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানি ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স-এ আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগ দিয়ে দ্রুতই নিজের মেধা ও সংগঠন দক্ষতায় প্রতিষ্ঠা পান। পরপর তিনবার জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।

১৯৯৩ সালে তিনি সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স-এ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তী ২০ বছর তিনি সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠক ও কর্মী তৈরি করে সন্ধানী লাইফকে দেশের অন্যতম শীর্ষ জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেন। পরে ২০১৩ সালে তিনি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স-এর প্রতিষ্ঠাতা মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর গ্রাহকসেবা চালু করে প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেন।
২০২০ সালে তিনি প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সে সিইও হিসেবে যোগ দেন। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যেও তিনি ডিজিটাল গ্রাহকসেবা ও সংগঠন পুনর্গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। ২০২১-২২ সালে প্রায় ১০৪ কোটি টাকা বীমা দাবি পরিশোধের মাধ্যমে তিনি গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধারে সক্ষম হন।
অজিত চন্দ্র আইচ চলতি বছরের ১৮ জুন প্রোগ্রেসিভ লাইফ থেকে অবসর নেন এবং তিন মাসের মধ্যেই নতুন মিশনে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন যমুনা লাইফে।
ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডল বীমা শিল্পের এক বিশিষ্ট গবেষক ও সংগঠক। ১৯৯৮ সালে ডেলটা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা ড. মণ্ডল যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক নির্বাহী কমিটির সদস্য।
বীমা খাতের অভিজ্ঞরা বলছেন, ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডলের নীতিনির্দেশনা এবং অজিত চন্দ্র আইচের বাস্তব নেতৃত্ব যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে আগামী দিনে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে।
“বীমা শিল্পে এই দুই অভিজ্ঞ নেতার সমন্বয়ে যমুনা লাইফ আরও স্থিতিশীল, আধুনিক ও গ্রাহকবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে”—বলেছেন খাতসংশ্লিষ্ট এক সিনিয়র নির্বাহী।
অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও প্রযুক্তিনির্ভর দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে নতুন এই নেতৃত্ব যমুনা লাইফকে একটি সফল ও টেকসই প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করবে—এমনটাই আশা করছে বীমা শিল্পের অভিজ্ঞ মহল।