বাগেরহাট শরণখোলায় সৌদি সরকারের পাঠানো দুম্বার মাংস বিতরণে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের অনিয়ম ও রহস্যজনক গরমিল। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তরের (পিআইও) মাধ্যমে ২৯ টি মাদরাসায় ও এতিমখানায় গত শুক্রবার রাত ১১ টায় এই মাংস বিতরণ করা হলেও, সরবরাহ ও বিতরণের হিসাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অমিল ধরা পড়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, শরণখোলায় মোট ১০ কার্টুন দুম্বার মাংস এসেছে। প্রতিটি কার্টুনে ১০ প্যাকেট করে মাংস থাকার কথা, অর্থাৎ ১০ কার্টুনে মোট ১০০ প্যাকেট মাংস থাকার কথা ছিল। কিন্তু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে শরণখোলা উপজেলা প্রেসক্লাবে যে তালিকা সরবরাহ করেছে, সেখানে দেখা গেছে ২৯ টি মাদরাসায় বিতরণ করা হয়েছে মোট ৬০ প্যাকেট মাংস। হিসাব অনুযায়ী বাকি ৪০ প্যাকেট মাংসের কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া রাতের আধারে বণ্টনের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও জনমনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিআইও মোঃ সোহাগ আকন বলেন, সব কার্টুনে সমানসংখ্যক প্যাকেট ছিল না, কোনো কোনো কার্টুনে ১০টির পরিবর্তে ৭ বা ৮টি প্যাকেট ছিল। তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন— সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রেরিত সিল করা কার্টুনে প্যাকেটসংখ্যা কমবেশি হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? অনেকেই মনে করছেন, এই ব্যাখ্যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় এবং পুরো বিতরণ প্রক্রিয়াতেই অস্বচ্ছতা রয়েছে। তালিকায় উল্লেখিত মাদরাসা ও এতিমখানা থেকে পাওয়া তথ্যেও দেখা গেছে, তালিকায় যে সংখ্যক প্যাকেট উল্লেখ করা হয়েছে, বাস্তবে তার সঙ্গে মেলে না। কোথাও বেশি, কোথাও আবার কম। দক্ষিন বাধাল মরহুম ছগির হোসেন হাফিজিয়া মাদ্রাসা এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিংয়ের নাম তালিকায় থাকলেও উক্ত মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মোঃ শরিফুল ইসলাম আদৌও কোন প্যাকেট পাননি বলে জানান।
এদিকে স্থানীয় সমাজকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও সচেতন মহল বলছেন, সরকারি তত্ত্বাবধানে বিদেশি সহায়তার বণ্টনে এমন অসঙ্গতি প্রশাসনের ওপর জনগণের আস্থা কমিয়ে দেবে। তাদের দাবি, এই মাংস বিতরণের পুরো প্রক্রিয়াটি তদন্ত করে প্রকৃত সত্য বের করতে হবে। জনসাধারণের করের টাকায় পরিচালিত সরকারি দপ্তরের কাজে এই ধরনের অনিয়ম শুধু প্রশাসনিক নয়, নৈতিক ব্যর্থতাও নির্দেশ করে।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহকে দুম্বার মাংস বিতরণে অনিয়ম সম্পর্কে জানতে ফোন করলে তিনি জানান, আমার কাছে বিষয়টি নিয়ে একাধিক অভিযোগ এসেছে তদন্ত সাপেক্ষে বিধি অনুযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।