নরসিংদীতে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে একাধিক জালিয়াতি, ভুয়া দলিল সৃষ্টি ও বিল উত্তোলনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আ. বাতেনসহ কয়েকজন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, সদর উপজেলার বিলাসদী মৌজার এসএ ১৮৮ ও আরএস ৩৬৬ দাগের জমি ১৯৭১ সালে ৪৫৮৯ নং সাফকাবলা দলিলের ভিত্তিতে রেকডিয়া মালিকের নিকট থেকে ক্রয় করে আ. বাতেন গং ভোগদখলে আছেন। কিন্তু ওই জমিটি পূর্বের বিক্রি গোপন রেখে পরে অন্য ব্যক্তির নামে ভুয়া দলিল তৈরি করে হস্তান্তরের অভিযোগ তোলা হয়েছে। অভিযোগকারীরা দাবি করেন, এসব জাল দলিলকে ভিত্তি করে ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) অফিসের কিছু কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করে জমিটিকে অধিগ্রহণের আওতায় দেখানো হয়। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ জানালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আদালতে বিবিধ মামলা নং ৫৯/২১ রুজু হয়। মামলার তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের ২২ মার্চ দাখিল করা প্রতিবেদনে বিভিন্ন দলিলের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় এবং আ. বাতেন গং–এর মালিকানা ও দখল সঠিক বলে উল্লেখ করা হয়। তবে তদন্তে মালিকানা প্রমাণিত হলেও চার বছর ধরে অধিগ্রহণের বিল পাচ্ছেন না দাবি করে অভিযোগকারীরা জানান, কিছুদিন পর পর কর্মকর্তারা বদলি হলেও মামলার অগ্রগতি হয়নি। একই দাগের ওপর কেউ যাতে অবৈধভাবে বিল উত্তোলন করতে না পারে, সে জন্য আ. বাতেন গং ৪৫ জনকে বিবাদী করে যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে দেওয়ানি মামলা (নং ১১৪/২০২৩) দায়ের করেন, যা বর্তমানে বিচারাধীন। অভিযোগে আরও বলা হয়, আরএস ৩৬৪ দাগের ১৪ শতাংশ জমি ২০২০ সালে অধিগ্রহণ করা হয়, যার পর্চায় সরকারের নামে আট আনা লিপি রয়েছে। কিন্তু একটি জাল দলিল সৃষ্টি করে সরকারি জমিসহ ব্যক্তিমালিকের জমি ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি রোমানা ইয়াছমিন নামে এক নারীর নামে নামজারি করে নেয়া হয়। পরে রেকডিয়া জমির মালিক বিষয়টি জানতে পেরে দলিলটিকে ভুয়া উল্লেখ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আদালতে আপিল মামলা নং ৫৫৬/২০২৪ দায়ের করেন। এরই মধ্যে অধিগ্রহণকৃত আরএস ৩৬৪, ৩৬৩ ও ৩৬৬ দাগের জমি সরেজমিনে যাচাইয়ের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিনথিয়া হোসেন ৩১ আগস্ট তারিখে মালিকানা কাগজপত্রসহ হাজির থাকার নোটিশ জারি করেন।
অভিযোগকারীরা দাবি করেন, নোটিশ বা তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আগেই কানুনগো মোস্তফা জামান আব্বাসি একক স্বাক্ষরে সরকারি জমিকে ব্যক্তিমালিকানা দেখিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনকে ভিত্তি করে প্রায় ৩ কোটি টাকার সরকারি বিল উত্তোলন করা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা আপত্তি জানান। এ ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে না চাইলেও দুদকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অভিযোগটি তাদের নজরে এসেছে এবং নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত করা হবে।