রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মোহাম্মদপুরে সন্ত্রাসী রহিম ও তার ছেলের অত্যাচার নির্যাতনে অসহায় এলাকাবাসী উত্তরা ব্যাংকের এমডি রবিউল হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অপসারনের দাবিতে রাজপথে বিল্পবী ছাত্র জনতা ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৪ হাজার সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে দেখে কেঁদে ফেললেন মির্জা ফখরুল সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ওসমানী জাতীয় স্মৃতি পরিষদ-এর বিশেষ বাণী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খ. ম. আমীর আলী ছাত্র বৈষম্য আন্দোলনে আহতদের জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়ে পাশে বিএনপি নেতা মোঃ সাইফুল ইসলাম নরসিংদীর মনোহরদীতে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানক্লাব ‘নেবুলাস’-এর যাত্রা শুরু প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস গার্মেন্টস ব্যবসায়িদের নিঃস্ব করে কোটি টাকা প্রতারণা করে লাপাত্তা কৃষক লীগ নেতা হান্নান শেখ!
রোজার আসায় বেড়ে গেছে পণ্যের দাম

রোজার আসায় বেড়ে গেছে পণ্যের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রতিবছরই রোজার আগে ব্যবসায়ীরা সরকারকে কথা দেন, তারা পণ্যের দাম বাড়াবেন না। অতি মুনাফা করবেন না। এবারও কথা দিয়েছিলেন; কিন্তু কথা রাখেননি। ফলে বেশ কিছু পণ্যের দাম রোজার একদিন আগেই প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা এ সময়ে বাজার তদারকিতে জোর দেয়; কিন্তু এবারও তাতে কোনো কাজ হয়নি। মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে বাজার গরমের চিত্র।

সর্বশেষ গত রোববার বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন ব্যবসায়ীরা। ওই বৈঠকে রোজার মাসে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ঠিক রেখে সহনীয় পর্যায়ে লাভ করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী; কিন্তু ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফাই করছেন। নতুবা দাম এতটা বাড়ার কথা নয় বলে মনে করছেন ক্রেতারা।

গতকাল রাজধানীর মিরপুর শাহআলী মার্কেট, মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজার, নিউমার্কেট, হাতিরপুল ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পণ্যের বাড়তি কেনাকাটার জন্য ক্রেতার ব্যাপক ভিড়। তারা জানান, রোজা রেখে প্রতিদিন বাজার করা অনেকটা কঠিন। এ কারণে রোজার আগে যতটা সম্ভব কেনাকাটা সারছেন। পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চাইলে তারা যৌক্তিক কোনো কারণ বলতে পারেননি। তারা চাঁদাবাজি ও বৈরী আবহাওয়ায় সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়াসহ নানা অজুহাত তুলে ধরেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মুরগি, চিনি, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন পণ্যের দর বেড়েছে। এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, একসঙ্গে পণ্য কেনাকাটায় বাড়তি চাহিদার কারণে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন। রোজায় কয়েকটি পণ্যের বেশি প্রয়োজন হয়। এসব পণ্যের উৎপাদন প্রচুর। আমদানিও এবার পর্যাপ্ত। বাজারে সরবরাহেও তেমন কোনো সংকট নেই। ফলে ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। এর পরও ব্যবসায়ীরা নানা কারণ দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন। এক ধরনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ বিষয়ে সরকারের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন, রমজানে বাজার দাম তদারকির জন্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের আলাদা টিম বাজারে থাকবে। এরই মধ্যে প্রতিদিন দুটি টিম বাজার মনিটর শুরু করেছে। রমজানে প্রতিদিন বাজারে অভিযান চালানো হবে। বাজারে পণ্যের দামে কোনো অস্থিরতা সৃষ্টি করা হলে ব্যবস্থা নেবে অধিদপ্তর। প্রয়োজনে চালান অনুযায়ী পণ্যের দর যাচাই করে বাজার তদারক করা হবে। নির্ধারিত দরের পণ্য অতিরিক্ত দামে বিক্রি হলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিন্তু ক্রেতারা বলছেন, দাম তো এরই মধ্যে অনেক বেড়ে গেছে। মনিটর করে তো কোনো লাভ হচ্ছে না।

বেশি বেড়েছে ইফতার উপকরণের দাম : রোজায় ইফতারি উপকরণ বেগুনি ও চপ তৈরিতে ব্যবহার হয় লম্বা বেগুন ও আলু। কয়েক দিনের ব্যবধানে দুটি পণ্যের দাম অনেক বেড়েছে। প্রতি কেজি বেগুন এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা তিন দিন আগেও ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ছিল। হঠাৎ করে গত সপ্তাহের শুরুতে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। যদিও মৌসুমে কৃষকরা পাঁচ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করেছেন। শুধু আলু ও বেগুন নয়, কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে কাঁচামারিচ ৬০ এবং শসা ও টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকা হয়েছে। করলা, পটোল, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়সসহ অন্যান্য সবজির দাম বেড়ে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা ছিল। মিরপুর-১ কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. শাহীন আহমেদ বলেন, এখন বৈরী আবহাওয়ার কারণে সবজি কম আসছে। এ সুযোগে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

চিনির দামও ধাপে ধাপে বেড়েছে। প্রতি কেজি আমদানি করা পরিশোধিত চিনি এখন ৫৮ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে ছিল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত চিনির দামে তেমন পরিবর্তন হয়নি। আখের খোলা চিনির দরও কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৬৮ টাকা হয়েছে। তবে টিসিবি খোলাবাজারে ৫৫ টাকা কেজিতে চিনি বিক্রি করছে। বেড়েছে চিড়া ও মুড়ির দামও। গতকাল প্রতি কেজি মোটা মুড়ি ১২০ ও চিকন মুড়ি ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল যথাক্রমে ৬৫ ও ৫৫ টাকা। চিড়ার দাম কেজিতে গড়ে ১০ টাকা বেড়ে মানভেদে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অনেকটা স্থিতিশীল আছে খেজুরের দাম। প্রতি কেজি সাধারণ খেজুর ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মসলা ও ডাল :রোজায় মসলা পণ্যের ব্যবহার বাড়ে। পেঁয়াজুসহ বিভিন্ন খাবারে বেশি ব্যবহার হয় পেঁয়াজ। পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও দু’সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দেশি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫২ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে চীনা রসুন ১১০ থেকে ১২০ এবং দেশি রসুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে চীনা আদা ১১০ থেকে ১২০ এবং দেশি আদা ৮০ থেকে ১০০ টাকা হয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খেসারির ডাল ৬০ টাকা কেজি থাকলেও ইফতারের উপকরণ বেসনের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে বাড়ছে চিনি ও পেঁয়াজের দাম। বাজার ব্যবস্থাপনায় মনিটরিং জোরদার করা হলে দাম কিছুটা স্বাভাবিক থাকত।

নির্ধারিত দরে মাংস বিক্রি হচ্ছে না : রোজা শুরুর আগে থেকেই মাছ, মাংস ও মুরগির দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গত সোমবার মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র বৈঠক করে রমজানে মাংসের দর নির্ধারণ করেন। নির্ধারণ করা দর অনুযায়ী, দেশি গরুর মাংস ৪৫০, ভারতীয় গরুর মাংস প্রতি কেজি ৪২০, মহিষের মাংস ৪২০, খাসির মাংস ৭২০ এবং ভেড়া ও ছাগলের মাংস ৬০০ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু গতকাল রাজধানীর বেশিরভাগ বাজারে এই দরে মাংস বিক্রি হয়নি। গরুর মাংস এখন প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস নির্ধারিত দরের চেয়ে ৩০ টাকা বেশি দামে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়। মহিষের মাংসের দর নির্ধারণ হলেও বিভিন্ন বাজার ঘুরে বিক্রি হতে দেখা যায়নি। গত দু’সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা। গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। এক মাস আগে ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। লেয়ার মুরগির দামও একই হারে বেড়ে ২২০ টাকা হয়েছে। কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে এখন সোনালি মুরগি ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ১ থেকে ২৬ রমজান পর্যন্ত নির্ধারিত দরে মাংস বিক্রি হবে। ওই সময়ে নির্ধারিত দরে বিক্রি নিশ্চিত করতে প্রত্যেক জোনের জন্য বাজার মনিটরিং টিম গঠন করা হচ্ছে। নির্বাহী ম্যাজিস্রেদ্বটের নেতৃত্বে এই মনিটরিং টিম বাজার তদারক করবে। তিনি নিজেও বাজার মনিটরিংয়ে থাকবেন বলে জানান।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com