সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন
মংলা প্রতিনিধি: মংলা উপজেলায় এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, নিজের ক্ষমতার বলে স্কুলে ছাত্র/ছাত্রীদের রোদে দার করিয়ে শাস্তি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ইচ্ছেমত অতিরিক্ত নৈমিত্তিক ছুটি ভোগ করাসহ তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা মিঠাখালী ইউনিয়নের এটিসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদা খাতুনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেছেন স্কুলে ছাত্র/ছাত্রী ও এলাকাবাসী। অভিযোগ রয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চাপা দেওয়া হচ্ছে এ শিক্ষকের অনিয়ম। যার ফলে শিশু-কিশোরদের পাঠদানের নামে চলছে প্রতারণা।
অভিযোগে জানা গেছে, অতিরিক্ত পরীক্ষার ফি আদায়, স্কুল সংস্কারের নামে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ,খেলাধুলার সামগ্রী না কিনে টাকা উত্তোলনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে এটিসি মিঠাখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মাহমুদা খাতুনের বিরুদ্ধে।
চাউল্ড ফ্রেন্ড স্কুল (সিএফএস) আওতায় ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বরাদ্দ পাওয়া ৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান এ শিক্ষিকা, অথচ নির্বিকার কর্তৃপক্ষ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সর্ব শেষ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন মেরামত ও বিদ্যালয়ের উপকরণ ক্রয় করার জন্য গত জুন মাসে প্রায় ৫৪ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। অথচ এ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের কোনো কাজ ও কোনো উপকরণ ক্রয় করেননি। এসব টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। এছাড়া স্কুলের সকল ক্লাশের ছাত্র/ছাত্রীদের পুরাতন বই ফেরত না নেয়ার নির্দেশনা থাকলেও তিনি সকল বই ফেরত নিয়ে তা বিক্রি করে কয়েক হাজার টাকা আত্মসাৎ করে। প্রাক প্রাথমিক পরিক্ষায় কোন ফি নেয়ার নিয়ম না থাকলেও তিনি ১০ টাকা হারে শিশুদের কাছ থেকে আদায় করেছে। ৩য় শ্রেনী থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত বিশেষ একটি প্রকাশনীর গাইড (নোট বই) কিনতে বাধ্য করা হয় সকল ছাত্র/ছাত্রদের। এ প্রকাশনী থেকে তিনি বাৎসরিক মাসয়ারা নিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সরকারের নিয়মানুযায়ী প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস নেয়ার নির্দেশনা থাকলেও তিনি তা মানছেন না। গত কয়েকদিন পুর্বে ৩য় শ্রেনীর ছাত্র লিজনকে সামান্য অপরাধে কানদরে রোদে দার করিয়ে রাখে প্রধান শিক্ষিকা। এ নিয়ে লিজনের অভিভাবক ও এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যদের প্রধান শিক্ষিকার নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, যা রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেন স্কুল ছাত্র/ছাত্রীর অভিভাবক ও এলাকাবাসী। এসব বিষয়ে প্রধান শিক্ষিকা মাহমুদা খাতুন কিছু অভিযোগের সত্যতা সিকার করে বলেন, আমি যখন শ্রেনী কক্ষে ক্লাশ নিতে যাচ্ছিলাম তখন লিজনকে দুষ্টামী করতে দেখে কান দরতে বলি। পরে চলে আসার সময় তাকে ডেকে নিয়ে ক্লাশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে অন্য অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন তিনি। স্কুল কমিটির সভাপতি মোঃ আঃ সালাম বলেন,লিজননকে কানধরে রোদে দার করিয়ে রাখার ব্যাপারে তার অভিভাবদের ডেকে মিলমিশ করে দেয়া হয়েছে আর বই বিক্রি বা অন্য অভিযোগ তার জানা নাই। ব্যাপারে মংলা সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিসি ক্লাস্টার) মোঃ শাহিনুর রহমান মোড়ল বলেন, অভিযোগুলো তার কাছে বিস্তারিত জানা নেই তবে স্কুল কমিটি ও ছাত্র/ছাত্রদের কাছে খোজ নিয়ে জানা হবে। মংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নী। তবে অভিযোগ পেলে তদন্তে দোষী হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অশোক কুমার সমাদ্দার বলেন, মাহমুদা খাতুনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বর্তমান সরকারের নির্দেশ কোন ছাত্র/ছাত্রীকে শাস্তি দেয়া যাবেনা বা সাস্তিমুলক ব্যাবস্থও নেয়া যাবেনা। ৩য় শ্রেনীর ছাত্র লিজনকে কানধরে রোদে দার করিয়ে রাখার ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।