রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন
আদালত প্রতিবেদক:
বহুল আলোচিত পুরান ঢাকার মুন সিনেমা হলের জমি ও স্থাপনার মালিক ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্ক লিমিটেডের অনুকূলে প্রায় এক শ কোটি টাকা পরিশোধ করল সরকার। মোট ৯৯ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪ টাকা ২৭ পয়সা ৭৩ হাজার ৭৪ টাকা ২৭ পয়সার চেক পেয়েছেন বাংলাদেশ ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডের মালিক মাকসুদুল আলম।
আজ মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ চেক হস্তান্তর করে মাকসুদুল আলমকে। এর মধ্য দিয়ে মুন সিনেমা হলের জমি এখন মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নামে রেজিস্ট্রি হবে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মুন সিনেমা হলের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট সাইফুল্লাহ মামুন।
আপিল বিভাগ গত বছর ১৮ জানুয়ারি এক আদেশে ক্ষতিপূরণসহ ভবন ও জমির মূল্য বাবদ ৯৯ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪ টাকা ২৭ পয়সা পরিশোধ করতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট এবং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে বছরের ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে ওই টাকা তিন কিস্তিতে পরিশোধ করতে বলা হয়েছিল। পরে ১০ ডিসেম্বর এক আদেশে মুন সিনেমা হলের জমি ও স্থাপনার মূল্য হিসেবে ৯৯ কোটি ২১ লাখ টাকার চেক ব্যক্তি মাকসুদুল আলমের পরিবর্তে বাংলাদেশ ইটালিয়ান মার্বেলস ওয়ার্কস লিমিটেডের নামে দিতে নির্দেশ দেন আদালত। অর্থ মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ওই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এ অবস্থায় চেকও প্রস্তুত করেছিল সরকার। কিন্তু জমি রেজিস্ট্রি নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় সরকার চেক হস্তান্তর থেকে বিরত থাকে। শেষ পর্যন্ত উভয় পক্ষের সমঝোতার পর আপিল বিভাগ জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু এই প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি। এ অবস্থায় আদালত আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে টাকা পরিশোধ ও জমি রেজিস্ট্রি করার কার্যক্রম সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইটালিয়ান মার্বেলস ওয়ার্কস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম ছিলেন মুন সিনেমা হলের মূল মালিক। মুক্তিযুদ্ধের সময় সম্পত্তিটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। এই সম্পদ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অনুকূলে নেওয়া হয়েছিল। পরে মালিকানা দাবি করে মাকসুদুল আলম ২০০০ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন। হাইকোর্ট ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট এক রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সামরিক শাসন জারির পর থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সামরিক শাসনামলের সব আদেশ, ঘোষণা ও দণ্ডাদেশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ৬০ দিনের মধ্যে জমি রিট আবেদনকারীর অনুকূলে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
পরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এক রায়ে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখেন। তবে ওই রায়ে ৯০ দিনের মধ্যে মুন সিনেমা হল বাংলাদেশ ইটালিয়ান মার্বেলস ওয়ার্কস লিমিটেডকে ফেরত দিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু মালিক দীর্ঘদিনেও জমি ফেরত না পাওয়ায় ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি আদালত অবমাননার মামলা করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় আপিল বিভাগ আজ এ আদেশ দেন।