সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৭ অপরাহ্ন
জনি সাহা : করোনা সংকটেও এলাকায় নেই ৪ এমপি, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক ও ৪০ চেয়ারম্যান ঘুমে
মরণব্যাধি কারোনাভাইরাসে পুরো দেশ স্থবির। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বাংলাদেশও রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। এ অবস্থায় অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিদের কাছে পাচ্ছে না লক্ষ্মীপুরের জনগণ।
অনেকেই এলাকা ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে রয়েছেন। কৃষি ও নদীনির্ভর উপকূলীয় এই জেলার দরিদ্র মানুষ চরম অর্থ সংকটে রয়েছেন। খাদ্যের অভাবে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক পরিবারে নীরব কান্না চলছে। জনপ্রতিনিধি এবং সামাজের বিত্তবানরাও যেন তাদের কান্না শুনছেন না।
লক্ষ্মীপুরের ৪টি সংসদীয় এলাকায় চারজন সংসদ সদস্য (এমপি) থাকলেও তারা এ সংকটময় সময়ে এলাকাছাড়া। জেলা আওয়ামীলীগের ২ শীর্ষ নেতা নাই । তবে অনুসারীদের মাধ্যমে খোঁজখবরের পাশাপাশি তারা নামমাত্র সাহায্য-সহায়তা করছেন। আর জেলার ৫৮টি ইউনিয়নের মধ্যে অন্তত ১৮ জন চেয়ারম্যান করোনা সচেতনতায় শুরু থেকে সক্রিয়ভাবে মাঠে কাজ করছেন। অন্যরা যেন ঘুমে রয়েছেন।
পাশাপাশি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পাঁচটি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্য একমাত্র সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন টিপু মহোদয় দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে সাধারন জনগনের জন্য । ভাইস চেয়ারম্যান, চারটি পৌরসভার মেয়রদের মধ্য একমাত্র মেয়র এম এ তাহের সাহেব দিনরাত পরিশ্রম করে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সাধারন জনগনের জন্য যেন জনগন মরনব্যাধি করোনা থেকে মানুষ রক্ষা পাই সে জন্য লক্ষ্মীপুর পৌরসভার জননন্দিত সফল মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা এম এ তাহের সাহেব দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে ।
কাউন্সিলদের অধিকাংশ গাছাড়া ভাব নিয়ে দায়িত্বপালন করছেন।
জনপ্রতিনিধিরা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন এবং আওয়ামী জোটের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অথচ জনগণের সুখ-দুঃখে একসঙ্গে থাকা এবং কাজ করার অঙ্গীকার দিয়ে তারা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন আরও নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও ওসবের কোনো বাস্তবায়ন নেই।
সদরের উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু মহোদয় করোনা থেকে জনগণকে রক্ষা করতে এক সপ্তাহ ধরে হাট-বাজার, মাঠ-ঘাট, বাসা-বাড়িতে প্রচার-প্রচারণায় রয়েছেন। তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে অসহায়দের বাড়িতে চাল, ডাল, আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩-৪ দিন ধরে জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় কারোনার কারণে অঘোষিত লকডাউন চলছে। মানুষের মধ্যে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। বাংলাদেশে করোনা দেখা দেয়ার পর লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের এমপি আনোয়ার হোসেন খান, লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের এমপি আবদুল মান্নান এলাকায় আসেননি।
লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) আসনের এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে গত মাসের মাঝামাঝিতে মানবপাচারসহ দুর্নীতির অভিযোগে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। তখন তিনি ঢাকায় থাকলে কিছুদিন পর কুয়েত চলে যান। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশে নেই। তবে কোন দেশে অবস্থান করছেন তা নিশ্চিত করতে পারছেন না তার অনুসারীরাও।
লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের এমপি এ কে এম শাহজাহান কামাল ৮-১০ আগে জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে জেলা শহরে করোনায় সচেতনতামূলক কিছু লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ করেছেন। এরপর তিনি ঢাকায় গেলেও এলাকায় আর আসেননি।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা বলেন, এমপিরা ভোট চাওয়ার জন্য আমাদের কাছে আসেন। ভোট চলে গেলে আর খবর নেই। বিপদে-আপদে তাদের কাছে পাওয়া যায় না।
রায়পুর উপজেলা পরিষদ সড়কে শায়েস্তানগর গ্রামের রিকশাচালক সাহাব উদ্দিন বলেন, ভোট আইলে নেতারা সব দি হালায়। এহন খবর নাই। রাস্তায় মানুষও নাই। হেডের তো আর লকডাউন নাই। খাইতে তো অইবো।
মানবাধিকার সংগঠক ও জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘরের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এম এ রহিম বলেন, জাতির এ দুর্যোগময় সময়ে জনপ্রতিনিধিরা জনগণ থেকে দূরে থাকা দুঃখজনক। বর্তমানে ভেদাভেদ ভুলে আমরা সবাই সবার অবস্থানে থেকে জনগণের সঙ্গে থেকে বিপদকালীন সময় মোকাবিলা করা প্রয়োজন। যেন মানুষ এবং মানবতা জয়ী হয়।
সদরের এমপির প্রতিনিধি বায়েজিদ ভূঁইয়া একটি অনলাইন পত্রিকা কে বলেন, এমপি ডাক্তার, ফায়ার সার্ভিস, সাংবাদিকদের জন্য করোনা সুরক্ষার পোশাক, মাস্কসহ সরঞ্জাম পাঠিয়েছেন। তিনি সার্বক্ষণিক প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। অসহায়দের সহযোগিতা করতেছি আমরা।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন টিপু বলেন, জনগণই আমার সম্বল। আমি সবসময় তাদের জন্য কাজ করছি। করোনার কারণে অন্য জনপ্রতিনিধিরা যখন নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছেন আমি তখন বিরামহীনভাবে মানুষকে সচেতন করতে ছুটে চলছি। রাতে শ্রমজীবী মানুষ, যারা দিন এনে দিন খায়; তাদের ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছি। সবাই একযোগে কাজ করলে আমরা এই দুর্যোগ থেকে মুক্তি পাব।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, করোনার কারণে প্রতিটি ইউনিয়নে এক টন করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এ সময় ১০ হাজার টাকা করে প্রত্যেক ইউনিয়নে দেয়া হয়। ইতোমধ্যে ওই চাল বিতরণ শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে করোনায় শনিবার পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ জন। এর মধ্যে ১৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।