রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৩০ অপরাহ্ন

নীলফামারীতে চৌকিদার যখন ডাক্তার

ভিশন বাংলা ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২০
  • ৩২৯

নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
‘নারী ও পুরুষদের সব জটিল ও কঠিন রোগসহ হাঁপানী, বাত, শ্ব্যাতী, মানসিক
এমনকি নি:সন্তানদেরও সু-চিকিৎসা করা হয়’ ভিজিটিং কার্ডে দেয়া এমন চটকদার
উক্তির দ্বারা দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসার নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন জেলা
সদরের পলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার (গ্রাম পুলিশ) মানিক চন্দ্র রায়
বলে অভিযোগ উঠেছে।
ডাক্তারী পাসের কোন সনদ না থাকলেও নেই কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত
যোগ্যতার সনদ। শুধু মাত্র নি¤œ মাধ্যমিকে লেখাপড়া করেই নিজেকে কখনো
ডাক্তার বা কখনো কবিরাজ দাবী করে স্থানীয় পলাশবাড়ী বাজারেই একটি
ভ্রাম্যমান চেম্বার খুলে বসে এসব চিকিৎসার নামে অবাধে করছেন প্রতারণা।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার বিকেলে সরেজমিনে পলাশবাড়ী বাজারের ভিতরে
চৌকিদার মানিক’র ভ্রাম্যমান টিনের তৈরী চেম্বারে যায় নিউজ ব্রডকাষ্টিং
সার্ভিস (এনবিএস)’র জেলা প্রতিনিধিসহ স্থানীয় কয়েকজন প্রিন্ট ও
ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার রিপোর্টার। শুরুতেই চোখে পড়ে বিভিন্ন কোম্পানীর হরমন
জাতীয় ঔষধ (সেক্সচুয়াল ড্রাগস) সহ উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদ উত্তীর্ণের
তারিখ সম্বলিত সীল বিহীন বিভিন্ন ধরণের কবিরাজী শালসার ভর্তি বোতল। আরো
চোখে পড়ে কবিরাজ মানিকের বেশ কিছু ভিজিটিং কার্ডসহ প্রেসক্রিপ্টশন প্যাড।
সাংবাদিকদের উপস্থিতি ও ক্যামেরা দেখেই মুহুর্তেই অনেকটা অগোছালো ভাবে
প্রেসক্রিপ্টশন প্যাড ও ভিজিটিং কার্ড সরিয়ে ফেলার চেষ্টাও করেন চৌকিদার
(গ্রাম পুলিশ) মানিক চন্দ্র। জড়ো হয় স্থানীয়রা। এসময় কথা হয়, পলাশবাড়ী
বাজারের শাহীন, হাবিবুর, সুজনসহ অনেকের সাথে। তারা সাংবাদিকদের অভিযোগ
করে বলেন, “চৌকিদার মানিক অত্র বাজারের ভিতরে একটি টিনের ভ্রাম্যমান
দোকানকেই চেম্বার বানিয়ে প্রথম দফায় রোগী প্রতি ২ থেকে ৫শত টাকা করে
(ভিজিট) সাক্ষাৎ ফি নিয়ে এসব জটিল ও কঠিন রোগের বর্ণনা শুনেই রোগীদের
হাতে বিভিন্ন মুল্যের কবিরাজী ঔষধ ধরিয়ে দিয়ে দ্বিতীয় দফায় ঔষধের মুল্য
বাবদ হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংক”। তারা আরো বলেন, “কোন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান
থেকে এমবিবিএস বা ডাক্তারী কোন কোর্স না করেই এসব জটিল ও কঠিন রোগীদের
চিকিৎসা দেয়ায় কেউ কেউ সামান্য সুস্থ্য হলেও এর পার্শ্ব প্রতিক্রীয়ায়
অনেকেই ব্যয় করেছেন অগণিত অর্থ। চিকিৎসার নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে
চৌকিদার মানিক”।
কথা হয়, টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ সুখধন এলাকার মৃত আব্দুল কাদের এর
ছেলে ওসমানগণি (৪২) নামের এক ভুক্তভোগীর সাথে। তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে
কবিরাজ মানিক’র কাছে মাথা ব্যাথার ঔষধ নিতে গিয়েছিলাম তার চেম্বারে।
ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বলতেই, কয়েকটি ট্যাবলেটসহ একটি শালসার বোতল হাতে
ধরিয়ে ৫শত ৭৫ টাকা মুল্য নির্ধারণ করেন তিনি। তার (মানিকের) দেয়া ঔষধ
সেবক করে ঔষদের পার্শ্বপ্রতিক্রীয়ায় অনেকটাই বিপদগামী হয়ে পড়েছিলাম আমি।
পরে অন্য ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করে এখন সুস্থ্য রয়েছি। আজ (রোববার)
জানতে পারলাম সে (মানিক) কোন ডাক্তার নয়, তার কোন ডাক্তারী সনদপত্রও নেই।
কথা হয় পলাশবাড়ী ইউনিয়নের চৌকিদার (গ্রাম পুলিশ), কথিত ডাক্তার/কবিরাজ
শ্রী মানিক চন্দ্র রায়ের সাথে, তিনি বলেন, “আমি প্যারামেডিকেল ডাক্তার
এবং কবিরাজ। অনেক বড়বড় জটিল ও জঠিন রোগীকে আমি ভাল করেছি”। “ডাক্তারী সনদ
আর শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন “আমি ১০ম শ্রেণী
পর্যন্ত পড়েছি, আর কিছু বলতে পারবো না” বলে সাংবাদিকদের সাফ জানিয়ে দিয়ে
বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যায় তিনি।
এবিষয়ে পলাশবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: মমতাজ উদ্দিন প্রামানিক জানান,
“মানিক চন্দ্র রায় অত্র ইউনিয়ন পরিষদের একজন চৌকিদার (গ্রাম পুলিশ)। আমার
জানামতে তার (মানিক’র) কোন উচ্চমানের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ নেই। সে
(মানিক) কোন ডাক্তারী কোর্সও করেনি। তার (মানিক’র) শিক্ষাগত যোগ্যতা ৫ম
শ্রেণী।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্টস সমিতির পরিচালক
হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান সবুজ’র সাথে, তিনি সাংবাদিকদের জানান, “একজন
ফার্মাসিষ্টকেও ন্যুনতম এস,এস,সি পাস হতে হয়। এস,এস,সি ছাড়া ডাক্তারী
প্রশিক্ষণ কোন কোর্সে ভর্তি হওয়ার কোন বিধি বিধান নেই। সেখানে একজন
চৌকিদার (গ্রাম) পুলিশ ১০ম শ্রেণী পাস করে এ কোর্সে ভর্তি হওয়ার তো কোন
সুযোগ নেই।
এদিকে, সরকারী বিধি বিধান না মেনেই স্বঘোষিত ১০ম শ্রেণী পাস
ডাক্তার/কবিরাজ মানিক চন্দ্র ভ্রাম্যমান চেম্বার খুলে সেখানে নারী ও
পুরুষদের সব জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা করারাটা সম্পুর্ণ বেআইনী বলে মনে
করছেন স্থানীয়রা

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2011-2025 VisionBangla24.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com