রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন
অনেক প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আগামীকাল সোমবার চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা ফোরজি যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা ক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে অপারেটরদের হাতে ফোরজির লাইসেন্স হস্তান্তর করা হবে। লাইসেন্সপ্রাপ্তির ১৫ মিনিটের মধ্যেই ফোরজি কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছে গ্রামীণফোন।
রোববার ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে দুটি ফোরজি হ্যান্ডসেট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাইকেল ফোলিও।
মাইকেল ফোলিও বলেন, আমরা ফোরজি লাইসেন্স প্রাপ্তির পরপরই এই সেবাটি বাংলাদেশের মানুষদের জন্য উন্মুক্ত করবো। শুরুতে এই সেবা কেবলামাত্র ঢাকায় পাওয়া যাবে। পর্যায়ক্রমে ঢাকার বাইরেও ফোরজি নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করা হবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে গ্রাহকদের সুলভ হ্যান্ডসেটের মাধ্যমে সেরা ফোরজি সেবা দেয়া। ফোরজি অনেক ডাটা ব্যবহারকারীর জন্য নতুন দিগন্ত উম্মোচন করবে এবং আমাদের নেটওয়ার্কে সেরা অভিজ্ঞতা পেতে গ্রাহকদের হাতে সঠিক হ্যান্ডসেট থাকতে হবে।
উই টি১ এবং মাইক্রোম্যাক্স ক্যানভাস ১ নামের কো-ব্র্যান্ডেড হ্যান্ডসেটগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিটিআরসির মহাপরিচালক স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ এএফডব্লিউসি, পিএসসি। গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি, ডেপুটি সিই্ও ইয়াসির আজমান, মাইক্রোম্যাক্স ইনফরমেটিক্স লিঃ এর সহ প্রতিষ্ঠাতা ভিকাস জৈন এবং আমরা হোল্ডিংস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ফরহাদ আহমেদ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
গ্রামীণফোনের ডেপুটি সিইও এবং সিএম্ও ইয়াসির আজমান গ্রামীণফোনের প্রথম কো-ব্র্যান্ডেড ফোরজি হ্যান্ডসেট নিয়ে তার গর্বের কথা বলেন এবং গ্রাহকদের অন্যধরণের অভিজ্ঞতা দিতে হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারকদের সাথে কাজ করে যাবার কথা পূণব্যাক্ত করেন। তিনি বলেন, গত ২ বছরে ৭টি থ্রিজি হ্যান্ডসেট চালু করেছি যা থ্রিজি ডাটা সার্ভিসকে সহজলভ্য করেছে। আজ আমরা কো-ব্র্যান্ডেড ফোরজি হ্যান্ডসেট নিয়ে একই উদ্যোগ নিয়েছি।
ফোরজি সূচনার সাথে সাথে ফোনগুলোতে পাওয়া যাবে ফুল এইচডি ভিডিও স্ট্রিমিং, নিখুঁত ভিডিওকলিং, সুপার ফাস্ট ডাউনলোডিং, মিউজিক স্ট্রিমিং এবং বিনামূল্যে বাফারমুক্ত লাইভ টিভি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ফোরজি এবং ফোরজি উপযোগী হ্যান্ডসেট সত্যিকার অর্থেই স্মার্টফোনের শক্তিকে উন্মুক্ত করবে।
উই টি১ স্মার্টফোনটিতে রয়েছে ৫ ইঞ্চি এইচডি ডিসপ্লে, ২.৫ ডি কার্ভড গ্লাস সাথে দীর্ঘক্ষণ চার্জের জন্য ২২০০ এমএইচ ব্যাটারি। ১.৩ গিগাহার্টজ কোয়াডকোর (এমটিকে ৬৭৩৭) প্রসেসরের ফোনটিতে রয়েছে ৮ জিবি রম এবং ১ জিবি র্যাম। এতো সুবিধাসম্পন্ন ফোনটির বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ৪,৪৪৪ টাকা। ফোনটির পেছেনে ও সামনে রয়েছে ৫ মেগাপিক্সে্লের বিএসআই ক্যামেরা। ফোনটি কেনার সাথে সাথে ক্রেতারা পাচ্ছেন বিনামূল্যে পাবে ৫০ জিবি ‘উই ক্লাউড স্টোরেজ’ ফোনটি পাওয়া যাবে জেট ব্ল্যাক ও কসমিক ব্ল্যাক রঙে।
মাইক্রোম্যাক্স ক্যানভাস ১ স্মার্টফোনটিতে রয়েছে ৫ ইঞ্চি এইচডি আইপিএস ডিসপ্লে, ২.৫ডি কার্ভড গ্লাস ও ২৫০০ এমএএইচ ব্যাটারি । ১.৩ গিগাহার্টজ কোয়াড কোর (এমটিকে প্রসেসর) প্রসেসরের ফোনটিতে রয়েছে ১৬ জিবি রম এবং ২ জিবি ডিডিআর৩ র্যাম। ফোনটির পেছেনে রয়েছে ৮ মেগাপিক্সলে ক্যামেরা এবং সামনে রয়েছে এবং ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা সাথে এলইডি ফ্ল্যাশ এবং অটোফোকাস । চমকপ্রদ ছবির জন্য ফোনটির ক্যামেরার সাথে রয়েছে ‘ফেস বিউটি মোড’ ‘বয়স সনাক্তকরণ ফিচার, ওয়াটারমার্ক ফিচার ও টাইম ল্যাপস। মাইক্রোম্যাক্স ক্যানভাসের বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ৭,৫৯৯ টাকা যা পাওয়া যাবে সকল জিপি এক্সক্লুসিভ বিক্রয় কেন্দ্রে।
উভয় হ্যান্ডসেটেই থাকছে অ্যান্ড্রয়েড ৭.০ ওএস এবং সাথে আছে গ্রামীণফোনের আকর্ষণীয় বান্ডল অফার যা চালু হবে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ থেকে। গ্রামীণফোনে হ্যান্ডসেট রেজিস্টার করলে গ্রাহরা পাবেন ৪ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট, , ৫০ মিনিট টকটাইম এবং সাথে ২৯ টাকায় ১ জিবি ইন্টারনেট। এ অফারটি ৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২ বার নেয়া যাবে। ডাটা ও ভয়েসের মেয়াদ থাকবে সাত দিন। উভয় স্মার্টফোনের গ্রাহকরা ওই ব্র্যান্ডগুলোর সার্ভিস সেন্টার থেকে ১ বছরের ওয়ারেন্টিসহ ১৫ দিনের আর্লি লাইফ ফেইলিয়র সুবিধা।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসির আয়োজনে দেশে ফোরজির নিলাম সম্পন্ন হয়। এই নিলামে অংশ নেয় গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক। নিলামে মোবাইল অপারেটর বাংলালিংক ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে ৫ মেগাহার্জ তরঙ্গ কেনে। যার দর ২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলালিংক ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে ৫ মেগাহার্জ তরঙ্গ কেনে। এই তরঙ্গের মূল্য ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে গ্রামীণফোন ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে ৫ মেগাহার্জ তরঙ্গ কেনে।
নিলামের পূর্বে গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটকের কাছে যথাক্রমে বিভিন্ন ব্র্যান্ডে মোট ৩২, ৩৬.৪, ২০ এবং ২৫.২ মেগাগার্জ তরঙ্গ ছিল। নিলামের পর গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের তরঙ্গ বেড়ে দাঁড়ালো যথাক্রমে ৩৭ ও ৩০.৬ মেগাহার্জ তরঙ্গ।