সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১০ অপরাহ্ন
মণিরামপুর প্রতিনিধি: ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি’-এ প্রবাদ বাক্যটি অতি পরিচিত এবং প্রত্যেকটি মানুষ-ই এটি মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। ইচ্ছা শক্তি আর যথাযথ পরিশ্রম করতে পারলে যেকোনো কাজেরই প্রত্যাশিত সাফলতা আসবে- এটা অবধারিত সত্য। আর এরই বাস্তবতার প্রমাণ-মণিরামপুরের কৃষক মোঃ সুলতানুজ্জামান তিতু। স্বল্প পরিসরে নিজের ‘দীপ্ত ভার্মী কম্পোস্ট খামার’ নামের নার্সারিতে ৬টা রিং টবে মাত্র আড়াই কেজি কেঁচো দিয়ে কেঁচো সার (ভার্মী কম্পোস্ট) উৎপাদন শুরু করেন তিনি। ১ বছরের মাথায় সেই নার্সারিতে এখন ৪টি সেডের ২৮টি হাউজে বর্তমান কেঁচো আছে ৩’শ কেজি। আর এতে উৎপাদিত কেঁচো সার (ভার্মী কম্পোস্ট) স্থানীয় চাহিদার। দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যান্ত এলাকায় বাজারজাত শুরু করেছেন। দেশের সীমান্তর্বতী জেলা যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া ইউনিয়নের বলিয়ানপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের মরহুম নূরুল ইসলাম বিশ্বাসের পুত্র রাষ্ট্র বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনকারী কৃষক মোঃ সুলতানুজ্জামান তিতু। পেশায় একজন ব্যবসায়ী হলেও সম্প্রতি নিজ নার্সারিতে কেঁচো সার (ভার্মী কম্পোস্ট) উৎপাদনে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। নিজ গ্রাম বলিয়ানপুরের দক্ষিনে সীমানা দিয়ে দিয়ে পূর্ব-পশ্চিম প্রবাহিত মুক্তেশ্বরী নদীর ওপার পাড়ের ভোজগাতী ইউনিয়নের জামজামী মৌজার পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত প্রায় ৪০ শতাংশ জমির উপরে ‘দীপ্ত ভার্মী কম্পোস্ট খামার’ নামের একটি নার্সরীতে ৪টি সেডে ২৮টি হাউজে বিশেষ ভাবে তৈরি স্বপ্নবাজ স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী কৃষক সুলতানুজ্জামান তিতুর কেঁচো সার বা ভার্মী কম্পোস্ট সার উৎপাদন প্রক্রিয়া চলছে খুব জোরেসোরেই। শুরুটা ছিল মাত্র আড়াই কেজি কেঁচো। কিন্তু লাভের পরিমাণ বাড়তে থাকায় ১ বছরের মাথায় পরিবেশ বান্ধব জৈব সার বা কেঁচো সার (ভার্মী কম্পোস্ট) তৈরির এক কর্মযজ্ঞ। বর্তমানে তার ২৮টি হাউজে কেঁচো সংখ্যা প্রায় ৩’শ কেজি। অষ্ট্রেলিয়ান, ভিয়েতনাম, চাইনিস, থাইল্যান্ড ও কিছু ভারতীয় কেঁচোসহ প্রায় ১২ লক্ষ কেঁচোর মাধ্যমে তিনি এ কেঁচো সার বা ভার্মী কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে চলেছেন। প্রতিবেদকের কাছে কেঁচো সার (ভার্মী কম্পোস্ট) উৎপাদন আগ্রহ ও বর্তমান প্রক্রিয়াসহ নানা বিষয়ে তুলে ধরেন ¯স্নাতকোত্তর কৃষক মোঃ সুলতানুজ্জামান তিতু। তিনি বলেন, ‘ব্রেড ফর দা ওর্য়াল্ড’ নামক একটি বেসরকারী সংস্থায় চুক্তি ভিত্তিক চাকুরী করতেন তিনি। সেখানেই ভার্মী কম্পোস্টের একটি প্রকল্প ছিল। সেই প্রকল্পে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল তার। মুলতঃ সেখান থেকেই তার মনে স্বপ্ন জাগে নিজেই তিনি ভার্মী কম্পোস্ট উৎপাদন করবেন। যেমনি ভাবা-তেমনি কাজ। চাকুরী ছেড়ে দিয়ে বাড়ী ফিরে আসলেন। কোন কিছু আর না ভেবেই শুরু করলেন ভার্মী কম্পোস্ট উৎপাদনের কার্যক্রম। এ কাজে তিনি পরিবারসহ আত্মীয়-স্বজনের ব্যাপক সহযোগিতা ও উৎসাহ পেয়েছেন। এটি উৎপাদনে কেঁচো’র সাথে সাথে কাঁচা মাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় গোবর, কঁচুরীপনা (শেওলা), বিচালি (খড়), কলাগাছ অথবা বিভিন্ন প্রকারের পঁচনশীল অনুকরণ। কেঁচোসহ কাঁচামালের সংমিশ্রনে এ জৈবসার উৎপাদনের সময় লাগে ৩০ থেকে ৪০ দিন। শীত মৌসুমে প্রতিমাসে ৪০ থেকে ৪৫ মেঃ টান ও গ্রীষ্ম মৌসুমে ৩৫ থেকে ৪০ মেঃ টন কেঁচো সার (ভার্মী কম্পোস্ট) উৎপাদন হচ্ছে তার নার্সারীরতে। এতে করে প্রতিবার ২৮টি হাউজে উৎপাদিত খরচবাদে কেঁচো সার (ভার্মী কম্পোস্ট) বাজারজাত করে তিনি আয় করছেন ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকা। সুলতানুজ্জামান তিতুর উৎপাদিত কেঁচো সার (ভার্মী কম্পোস্ট) নিজের কৃষি জমিতে ও নার্সারিতে ব্যবহার করার পাশাপাশি স্থানীয় চাষীদের যোগান দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। প্রাকৃতিক লাঙ্গল কেঁচো ব্যবহার করে তৈরি হয় কেঁচো সার (ভার্মী কম্পোস্ট)। রাসায়নিক সারের বিকল্প এই সার মাটি দূষণ ও তিকর কোনো প্রভাব ছাড়াই জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ায় কয়েক গুণ। তাছাড়া রাসায়নিক সারের চেয়ে জৈব সারের উপকারিতা বেশি ও ক্রয়মুল্য কম হওয়ায় কৃষকের চাহিদা বাড়ছে। স্থানীয় চাষীদের চাহিদার সাথে সাথে দেশের বিভিন্ন জেলাতেও তার উৎপাদিত কেঁচো সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দিন-দিন সে চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে চট্রগ্রাম, পাবর্ত্য জেলা গুলোতে তার উৎপাদিত কেঁচো সারের বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। পার্বত্য চট্রগ্রামের ‘দীপ্ত এগ্রো বিডি লিমিটেডে’র সাজনা, চুঁই, কাজু বাদাম, মাল্টাসহ বিভিন্ন ফলজ, মসলা ও ঔষধি চাষে পরিবেশ বান্ধব এ কেঁচো সার (ভার্মী কম্পোস্ট) ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয় জানতে চাইলে মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবুল হোসেন বলেন, ‘কেঁচো সার উৎপাদনে এপিজিক ও এন্ডিজিক নামক কেঁচো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর ফলে মাটিতে অণুজীবের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি মাটিতে বাতাসের চলাচলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যেখানে রাসায়নিক সারে কেবল এক বা দুইটি খাদ্য উপাদান থাকে-সেখানে কেঁচো সার (ভার্মী কম্পোস্ট)-এ রয়েছে যথাযথ সুষম খাদ্য উপাদান। এ সার মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত কার্যকর ও পরিবেশ বান্ধব।’