বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন

শিশু দিবসে শিশুটির প্রতি এ কেমন নিষ্টুর আচরণ !

শিশু দিবসে শিশুটির প্রতি এ কেমন নিষ্টুর আচরণ !

নিজস্ব প্রতিবেদক : দিনটি ছিল ১৭ মার্চ। জাতীয় শিশু দিবস। এই দিনে তাহিরপুর উপজেলার সুলেমানপুর গ্রামের সাত বছরের কিশোর ইয়াহিন উপজেলার মহালিয়া হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ দিয়ে যাওয়ার সময় পা পিছলে নিচে পড়ে যায়। ঘাসের বোঝাসহ কিশোর হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ায় বাধের স্লাব কিছুটা সরে যায়। এতেই কাল হয় ইয়াহিনের। এই অপরাধে নিরপরাধ শিশুটিকে প্রথমে কোলে তুলে পরপর তিনটি আছাড় দিয়ে নিচে ফেলে দেয় মহালিয়া হাওরের ফসলরক্ষা বাধ নির্মাণ কমিটির সভাপতি অদুদ মিয়া। পরে ধারালো কাচি দিয়ে কিশোরের ডানহাতের তিনটি আঙ্গুল কেটে দেয়। সন্ধ্যায় বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। শিশু দিবসে এভাবেই শিশুটির প্রতি নিষ্টুর আচরণ করা হয়। এখন সে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে।

জানা গেছে, জাতীয় শিশু দিবসে সুলেমানপুর গ্রামের মাদ্রাসা পড়ুয়া হতদরিদ্র পরিবারের শাহানুর মিয়ার ছেলে ইয়াহিন মিয়া হাওরের কান্দায় গবাদিপশুর ঘাস কাটতে যায়। ঘাস কেটে নিয়ে আসার সময় সে মহালিয়া হাওরের ২৮ নম্বর পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) নির্মিত ময়নাকালি ফসলরক্ষা বাধ ধরে বাড়ি ফিরছিল। হঠাৎ হোঁচট খেয়ে সে বাধের স্লাব গড়িয়ে নিচে পড়ে যায়। এতে স্লাবের মাটি কিছুটা সরে যায়। এই ঘটনা দেখে পাশে থাকা পিআইসি সভাপতি অদুদ মিয়া ক্ষুব্দ হয়ে ওঠেন। তাকে মাথায় তুলে পরপর তিনটি আছাড় মারেন। পরে ইয়াহিনের হাতে থাকা ঘাস কাটার কাঁচি দিয়ে ডান হাতের তিনটি আঙ্গুল কেটে দেন। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুতে থাকে। দৌড়ে সে বাড়ি এসে মা বাবাকে জানালে তারা দ্রুত রক্ত বন্ধ না হওয়ায় তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ইয়াহিনকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এদিকে এই নির্মম ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে নেটিজেনরা। নেটিজেনরা শিশুটির ভয়ার্ত মুখ ও আঙ্গুল কাটা হাতের ছবি নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দেন। পরদিন পুলিশ সামাজিক প্রতিবাদের কারণে মামলা গ্রহণ করে। মামলায় আসামি করা হয় অদুদ মিয়া ও তার ভাই আলম মিয়াকে। পুলিশ ১৮ মার্চ রাতে আলম মিয়াকে তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে গ্রেপ্তার করেছে। মূল আসামি অদুদ মিয়াকে ধরতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ফলে পুলিশ তৎপর হয়। সংশ্লিষ্ট থানাকে মামলা নিতে নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার মো. বরকত উল্লাহ খাঁন। রবিবার বিকেলে তিনি সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে গিয়ে শিশুটির চিকিৎসার খবর নেন। এসময় পুলিশের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সহায়তা বাবত ২০ হাজার টাকা পরিবারের কাছে প্রদান করে উন্নত চিকিৎসার দায়ভার নেন পুলিশ সুপার মো. বরকত উল্লাহ খান।

সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় মহিলা কেবিনে ঘুমিয়ে আছে ইয়াহিন। পাশে বসে আছেন মা। বাবা শাহানুর মিয়া বলেন, আমার ছেলেটিকে কোলে তুলে আছাড় দিয়েছে। পরে তার আঙ্গুল তিনটি কেটে দিয়েছে। আমি এ ঘটনায় উপযুক্ত বিচার চাই।

সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সহায়তা করেছেন পুলিশ সুপার। আমরা যথাসাধ্য তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি। তিনি বলেন, আঙ্গুল কাটার ক্ষতটা গভীর। একাধিক সেলাই দিতে হয়েছে। যে কারণে শিশুটি ব্যাতায় কাতরাচ্ছে। তিনি বলেন, আঙ্গুলের সেলাই খোলার পর বুঝা যাবে তার আঙ্গুল আগের অবস্থায় ফিরবে কি না।

তাহিরপুর থানার ওসি নন্দন কান্তি ধর বলেন, গত ১৮ মার্চ এ ব্যাপারে থানায় মামলা দায়েরের পর আমরা এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এখন প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি শিশুটির উন্নত চিকিৎসার সব দায়িত্ব নিয়েছেন আমাদের এসপি স্যার।

সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. বরকত উল্লাহ খান বলেন, ঘটনাটি শোনার পরই আমি স্থানীয় পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। নিজে হাসপাতালে গিয়ে ছেলেটির চিকিৎসার খোঁজ খবর নিয়েছি। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা তা বহন করব।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com