রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৬ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ করিমের তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি একলাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত। রায় ঘোষণার তারিখ হতে ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে জরিমানার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
সোমবার (২১ আগস্ট) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক প্রদীপ কুমার রায়ের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬(২) ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কারাদণ্ড ও জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়। অন্যদিকে দুদক আইনের ২৭(১) ধারায় অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে না পারায় এ ধারা থেকে তাকে খালাস দেন আদালত। রায় ঘোষণার আগে কারাগার থেকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
গত ১০ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক প্রদীপ কুমার রায় রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর নির্ধারিত ২১ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদের হিসাব জমা দিতে সাহেদকে নোটিশ দেয় দুদক। এ সময়ে তিনি সম্পদের হিসাব জমা না দেওয়ায় আরও ১৫ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে বর্ধিত সময়ের মধ্যেও সম্পদ বিবরণী জমা না দেওয়ায় অনুসন্ধানে নামে দুদক। অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া যায়।
এ অভিযোগে ২০২১ সালের ১ মার্চ সাহেদের বিরুদ্ধে দুদকের সমন্বিত ঢাকা জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা দায়ের করা হয়। পরে ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল মামলায় অভিযোগ গঠন করে সাহেদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেন আদালত। এ মামলার মোট দশজন সাক্ষী বিভিন্ন সময়ে সাক্ষ্য দেন।
২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মোহাম্মদ সাহেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ। ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ (এ) ধারায় করা মামলায় সাহেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এছাড়া অস্ত্র আইনের ১৯ (এফ) ধারায় তার সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। উভয় সাজা একসঙ্গে চলবে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেন।
২০২০ সালের ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। এ ঘটনার পর পালিয়ে যান সাহেদ। ১৫ জুলাই সাহেদকে সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে তাকে হেলিকপ্টারে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আনা হয়।
করোনা পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্টসহ বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ১৬ জুলাই সাহেদকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এরপর ১৯ জুলাই তাকে নিয়ে উত্তরার বাসার সামনে অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। সেখানে সাহেদের নিজস্ব সাদা প্রাইভেটকার থেকে পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ১০ বোতল ফেনসিডিল, একটি পিস্তল এবং একটি গুলি উদ্ধার করা হয়। এরপর উত্তরা পশ্চিম থানায় অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করা হয়। এরপর ঢাকাসহ সারা দেশে তার বিরুদ্ধে ৩১টি মামলা হয়। এর মধ্যে ঢাকায় ২৫টি, সিলেটে, চট্টগ্রাম ও সাতক্ষীরায় দুইটি করে মামালা হয়। অধিকাংশ মামলাই প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা হয়। এর মধ্যে সিলেটের দুইটি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।