শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক রেজাউল কাইয়ূমের বিরূদ্ধে উঠে এসেছে নানা রকমের স্পষ্ট অভিযোগ। বাসস্ট্যান্ড নিয়ে চাঁদাবাজি, বিএনপি নেতা শরীফকে রেজাউলের কর্মীবাহিনী দ্বারা হত্যার চেষ্টা ও দোকানপাট ভাংচুর, ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে সাধারণ ছাত্রদের উপর নির্যাতনকারী চিহ্নিত আসামীদের আশ্রয় দেওয়া, বিগত দিনে যারা চিহ্নিত আওয়ামীলীগের নেতা ছিল তাদের অবৈধভাবে বিএনপি পরিচয় দিয়ে দলে অনুপ্রবেশ করিয়ে তাদেরকে ২০২৪ এর ছাত্রঅভ্যুত্থানে বিচার থেকে বাচানোর চেষ্টা সহ আরো নানারূপ অভিযোগ রয়েছে তার বিরূদ্ধে।
২০২৪ এর ৫ ই আগষ্ট সাধারন ছাত্রদের অভ্যুত্থানে আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হয়। তার পূর্ববর্তী সময়ে আওয়ামীলীগ পন্থী সন্ত্রাসীরা দফায় দফায় ছাত্রদের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। যার কারনে অসংখ্য সাধারন শিক্ষার্থী হতাহত হয়। পরবর্তীতে তাদের বিরূদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলার গ্রেফতারকৃত একজন আসামী হলো আশিক। সে কুমিল্লা জেলার কালীরবাজার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং কালীরবাজার ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতা পারভেজ হত্যা মামলার প্রধান যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী সেকান্দর আলী’র একজন চিহ্নিত ক্যাডার ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সেকান্দর আলীর নের্তৃত্বেই আন্দোলনের সময় আশিক সহ তার সহযোগীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা পরিচালনা করে। তাকে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার এসআই নুরুল হাকিম ৫ই আগষ্ট পূর্ববর্তী সময়ের ঘটনার মামলার প্রেক্ষিতে কুমিল্লার ষ্টেশন রোড এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন। পরবর্তীতে আশিক আদালত থেকে জামিনে মুক্তি লাভ করেন। আশিকের খালাতো ভাই সজিব যে কিনা আমেরিকার প্রবাসী এবং তিনি আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন কুমিল্লা -৬ আসনের সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের একনিষ্ঠ কর্মী ছিল। এমনকি বিভিন্ন সন্ত্রাসীমূলক কর্মকান্ডের সাথেও তার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপের অভিযোগ ও রয়েছে। এছাড়াও আশিক সজিব এর সহযোগীতায় কালিরবাজারে কিশোর গ্যাং পরিচালনা করতো বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরূদ্ধে।
আশিকের বিরূদ্ধে এতগুলো সুনির্দিষ্ট অপরাধ কর্মকান্ডের পরেও কুমিল্লা সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো: রেজাউল কাইয়ুম আশিক সহ আরো অনেককেই উনার ছত্রছায়ায় এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করছে বলে বিরূদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও আন্দোলন পরবর্তী সময়ে শাসনগাছা বাস স্ট্যান্ড সহ বিভিন্ন জায়গায় তার কর্মীদের চাঁদাবাজি করার অভিযোগ উল্লেখ করে স্থানীয় গনমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন ও হয়েছে। তার সাথে আশিকের সঙ্গীয় শাকিল (চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী), তানভীর (একাধিক মাদক মামলায় অভিযুক্ত আসামী) সহ আরো অনেকেই রেজাউল কাইয়ুমের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে যুক্ত রয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা যায়।
সূত্রে আরো জানা যায়, কালিরবাজার উত্তর ইউনিয়ন বিএনপি’র আহবায়ক প্রফেসর ফরহাদ উদ্দিন, সদস্য সচিব মমিন মাস্টার সহ আরো অনেকেই আশিক সহ এরা অনেক আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীকে বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করছেন এবং বিএনপি তে অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও কামাল হোসেন নামে একজন আওয়ামীলীগ নেতাকেও কুমিল্লা দূর্গাপুর ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির এক শান্তি সমাবেশে কামাল হোসেন এর উপস্থিতিতে বিএনপি’র পরিচয়ে পরিচিত করার চেষ্টা করছেন বলে তথ্য পাওয়া গিয়েছে। । কামাল হোসাইন গত ৩০ই অক্টোবর-২০২২ ইং তারিখে প্রকাশিত কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলা কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সেই কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আবল বাসার আর সাধারন সম্পাদক তারিকুর ইসলাম জুয়েল। কমিটি অনমোদন দেন কুমিল্লা দক্ষিন জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) এবং সাধারন সম্পাদক মো: মুজিবুল হক (সাবেক রেলমন্ত্রী)। গত ৪ ই আগস্ট -২০২৪ ইং তারিখে কামাল হোসাইনের কর্মী মো: জসিম মেম্বার শর্টগান হাতে নিয়ে নিরস্ত্র ছাত্রজনতার উপর গুলি চালায় এবং যে সকল সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের হামলা করেছে তারা অনেকেই এই কামাল হোসেনের তত্ত্বাবধানে করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আরেকটি সূত্রে – কামাল হোসাইন এর সাথে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ ও তার ভাই তোফায়েল আহমেদ জোসেফ এর ঘনিষ্ঠতার প্রমান পাওয়া যায় এবং কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার এর একনিষ্ট কর্মী ছিলেন বলে তথ্য পাওয়া গিয়েছে কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গুলিবিদ্ধ এক শিক্ষার্থী (নাম প্রকাশে অনাগ্রহী) তার বক্তব্যে বলেন- “আমরা দেশ টাকে স্বাধীন করেছিলাম কি এসব সন্ত্রাসীদের অরাজগতা দেখার জন্য? তারা নির্বিঘ্নে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সদর বিএনপি’র আহ্বায়ক রেজাউল কাইয়ুম এর নের্তৃত্বে। বিভিন্ন সময় তিনি এদেরকে বিভিন্ন কুকর্মের জন্য পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে অনৈতিক ও অবৈধভাবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বাচিয়ে আনছেন বলে জানতেছি। এই আশিক কালিরবাজারের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে একজন। তার বিরূদ্ধে একাধিক সন্ত্রাসী মামলাও রয়েছে। তার পরেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো প্রকার নজর নেই। নতুন বাংলাদেশে সে আবার নতুন করে তার এলাকায় কিশোর গ্যাং এর মতো ঘৃণিত গ্রুপ তৈরি করছে।”
তিনি আরো বলেন- আমাদের আন্দোলনের সময় বিএনপি আমাদের যথেষ্ট সহযোগীতা করেছেন। কিন্তু যারা আমাদের ভাইদের উপর গুলি করলো, যারা আমাদের ভাই-বোনদেরকে মারধর করলো তাদেরকে বিএনপি’র একটি ভাইটাল পোস্টে থাকা নেতা রেজাউল কাইয়ূম কিভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন তা আমি বুঝতে পারিনা। এটা আমাদের শহীদ ভাইদের রক্তের সাথে তিনি ঠাট্টা করছেন। আমি বিএনপির নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলছি তাদের মতো নেতা কর্মীদের বিচার আপনারা অনতিবিলম্বে করবেন। তা না হলে আমাদের শহীদ ভাইদের রক্তের মূল্য বৃথা হয়ে যাবে।