রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর নিকটবর্তী নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও একাধীক মামলার আসামী তৌহিদ ও হারিজুলের সন্ত্রাসী গ্রুপের হামলায় গুরুতর আহত শান্ত হাসপাতালের আইসিওতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। গত শনিবার (১৬ নভেম্বর) রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের কলিঙ্গা এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৪ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলাধীন কলিঙ্গা এলাকা থেকে র্যাব অভিযান চালিয়ে দাউদপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক শান্তকে (২৪) আটক করে রূপগঞ্জ রূপগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে ১৫ নভেম্বর শান্ত জামিন নিয়ে তার নিজ বাড়িতে আসার সময় তৌহিদ গ্রুপের লোকজন তার উপর অতর্কিত হামলা চালায়।
এদিকে হামলার খবর পেয়ে স্থানীয় যুবদলের নেতাকর্মীরা তৌহিদের বাড়ি ঘেরাও করে পুলিশকে খবর দেয়। পরবর্তীতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যুবলীগ নেতা তৌহিদের বাড়ি থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ ৮ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
আটকরা হলেন- আলাল উদ্দিন (৩২), মোঃ তারেক (১৮), বেলায়েত হোসেন (২৪) পিতা- বাদল মিয়া, মোশারফ হোসেন (৩৪) পিতা- ফেকুন মিয়া, রাসেল মিয়া (৩২) পিতা- মৃত চান মিয়া, কাউসার (৪০) পিতা- কিরণ মিয়া, মোঃ ফোরকান মিয়া (৩৮), মোঃ হারিছ উদ্দিন (৪৫) পিতা- ছলিমিয়া।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের পতনের পরে ক্ষমতা ও চাঁদাবাজী নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি সন্ত্রাসী বাহীনি এখনও সক্রিয় রয়েছে। যার প্রেক্ষিতে রূপগঞ্জে দাউদপুর ইউনিয়ন কলিঙ্গা গ্রামে এলাকার প্রভাব বিস্তার নিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ ওরফে কাইল্যা তৌহিদ ও যুবলীগ নেতা হারিজুল বাহীনির হামলায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে শান্ত আহমেদ।
তৌহিদ, মোশারফ, হারিজুল, সানি, ফোরকানসহ ৭০-৮০ জন সদস্য নিয়ে তাদের একটা অস্ত্রধারী বাহীনি নিয়ন্ত্রণ করে পুরো রূপগঞ্জ এলাকা। তাদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে ঐ এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ। এই গ্যাং এর নেতৃত্ব দেয় তৌহিদ ওরফ কাইল্লা তৌহিদ ও হারিজুল ওরফে খোট্টায় হারিজুল। এই গ্যাং এর মাধ্যমে তারা মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজীসহ নানা অপরাধ সংঘটিত করে চলছে।
এই তৌহিদ ও হারিজুল বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি হত্যা গুম অপহরণ বিস্ফোরণ মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। গাজীপুরের কালিগঞ্জ থানায়ও রয়েছে একাধিক মামলা।
রূপগঞ্জে দাউদপুরে শীতলক্ষা নদীর পাশে সরকারি হালটে বেকু দিয়ে মাটি কাটার মহা উৎসব, মাটি খেকো সেন্টিকেটের প্রদান হুতা মামলার আসামি ফারিজুল ওরফে খোট্টায় হারিজুল। তার কিশোর গ্যাং দিয়ে সকল অপরাধ পরিচালনা করে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের দুই নং ওয়ার্ডের খৈইসাইর গ্রামের শীতলক্ষা নদীর পাশে দীর্ঘদিন মাটি কাটায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে হারিজুর ওরফে খোট্টাই হারিজুল ও তার বাহিনী।
ডজন খানিক মামলার আসামি সন্ত্রাসী হারিজুলের হামলায় গুরুতর আহত একাধীক ভুক্তভোগী প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিচার না পেয়ে হতাশা আর প্রাণ ভয়ে জীবন যাপন করছে। হারিজুল বাহিনীর হামলায় কিছুদিন আগেই চোখ হারিয়েছে অনার্স পড়ুয়া ছাত্র ফয়সাল।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, হাসিনা সরকারের আমলে দলের ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের আশীর্বাদ পুষ্ট ও বিশ্বস্ত হাতিয়ার হওয়ায় হারিজুল অল্পসময়ে হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। সেই সুবাদে উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নে অনৈতিক ভাবে দীর্ঘদিন প্রভাব বিস্তার করে গড়ে তুলেন সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী। নাম হয়েছে হারিজুল বাহিনী। আর এ বাহিনীর মাধ্যমে মাদক সহ কায়েম করে ত্রাশের রাজত্ব। জমি দখল, চাঁদাবাজী, মাদক ব্যবসা, অবৈধভাবে কৃষি জমির মাটি বিক্রি ও নদী থেকে বালু ভরাটের নামে অর্থ আত্মসাৎ সহ নানা অপকর্মে লিপ্ত এ যুবলীগ নেতা। বিভিন্ন থানায় রয়েছে তার নামে একাধিক অভিযোগ এবং মামলা।
এলাকাবাসী জানায়, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর মাস্টারের ক্যাডার ও যুবলীগ নেতা পরিচয়ে এলাকায় নানা অপকর্ম করে বেড়িয়েছে। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে আমরা এলাকায় ঠিকমত চলাফেরাও করতে পারি না। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললেই সংঘবদ্ধ হয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে হামলা চালাতো। আমরা তার অত্যাচারে গ্রামবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলাম। প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা নেয়া হোক।
ভুক্তভোগী এক সদস্য প্রতিনিধিকে বলেন, আমার বাড়ির জায়গার বালু ভরাটের কথা বলে হারিজুল টাকা নিয়ে সে টাকা আত্মসাৎ করেছে। টাকা চাইলে হুমকি দেয়। পরে উপায় না পেয়ে জায়গাটি আমি অন্য লোক দিয়ে মাটি ভরাট করতে গেলেও সেখানে হারিজুল তার বাহিনী বাধা দেয় এবং চাঁদা দাবী করে। এক পর্যায় এ নিয়ে কথা কাটি হলে আমাদের পরিবারের উপর সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হামলা চালায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, মাদক বিক্রির মাধ্যমে অল্পসময়ে বহু অর্থ সম্পদের মালিক বনে যান হারিজুল। তার এই অবৈধ অর্থ দিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেন। একে একে প্রতিষ্ঠা করেন ইট ভাটা সহ একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তার বিরুদ্ধে রয়েছে রূপগঞ্জ ও কালিগঞ্জ থানায় একাধিক মামলা। এসব মামলাগুলো হয়েছে গত হাসিনা সরকারের আমলে। আর এসব মামলা মাথায় নিয়েই তিনি বিগত আওয়ামী সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরে বেরিয়েছেন।
এই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে কঠিনতম শাস্তির দাবি জানাচ্ছে এলাকাবাসী।