রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ অপরাহ্ন
মো. ইমরান:
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের হাসান নগর এলাকার ছাপাখানা ব্যবসায়ী মো. নূর আলম হত্যার ঘটনায় কারখানাটির কর্মচারী মিরাজ মিয়াসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন- মিরাজের বন্ধু মো. শিপন ওরফে সম্রাট (২৫) ও মো. রিফাত (১৯)। পুলিশ বলছে, গত শুক্রবার রাতে মিরাজ তার বন্ধু শিপন, রিফাতসহ অজ্ঞাত ২/৩ জনকে নিয়ে কারখানার ভেতর জুয়ার আড্ডা বসিয়েছিল। ভোররাতে কারখানার মালিক নূর আলম তাদের জুয়া খেলায় বাঁধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে নূরকে হত্যা করা হয়।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৃত ব্যবসায়ী স্ক্রিন প্রিন্টের ওই কারখানার মালিক। সেখানে জুয়া খেলতে বাধা দেওয়ায় কর্মচারীরা তাকে হত্যার পর লাশ দুই টুকরো করে মাটিচাপা দেয়। পরে সেই স্থানটি সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে দেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার আমিনুল কবীর তরফদার সমকালকে বলেন, পরিবারের কাছ থেকে ব্যবসায়ীর নিখোঁজ থাকার অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। একপর্যায়ে তার কারখানার দুই কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, হত্যার পর কারখানার মেঝেতেই লাশ পুঁতে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ছিল অন্তত চার কর্মচারী। তাদের মধ্যে মিরাজ, রিফাত ও আফজালকে এরইমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, কামরাঙ্গীরচরের হাসাননগর এলাকার ভাণ্ডারীর মোড়ে একটি টিনসেড ঘরে নূরে আলমের কারখানা। রাতে তিনি সেখানেই থাকতেন। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে। ৫ ডিসেম্বর রাতে স্ত্রী রাশিদা বেগমের সঙ্গে তাঁর শেষবার কথা হয়। তখন তিনি জানান, পরদিন বাড়িতে যাবেন। কিন্তু পরদিন থেকে তাঁর আর কোনো খোঁজ মিলছিল না। পরিবারের সদস্যরা সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজে না পেয়ে পুলিশের কাছে যান। ৭ ডিসেম্বর রাতে জামাতা আতাউল্লাহ খান সজীব এ বিষয়ে কামরাঙ্গীরচর থানায় অভিযোগ করেন।
কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি আমিরুল ইসলাম বলেন, প্রযুক্তিগত তদন্তে পুলিশ দেখতে পায়, ব্যবসায়ীর সর্বশেষ অবস্থান ছিল কারখানাতেই। এরপর পুলিশ ওই কারখানায় যায়। প্রথমে কর্মচারীরা দাবি করেন, তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তবে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা হত্যার কথা স্বীকার করে।
জানা যায়, ৬ ডিসেম্বর ভোরের দিকে কর্মচারীরা কারখানার ভেতর বসে জুয়া খেলছিল। সেটি দেখে ক্ষিপ্ত হন আলম। তিনি জুয়া খেলতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে কর্মচারীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে তাঁর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর তাঁর পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর কোমর থেকে কেটে লাশ দুই খণ্ড করে চার কর্মচারী। গলা কেটে মাথা আলাদা করার চেষ্টাও চালানো হয়। শেষে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে কারখানার মেঝেতে গর্ত খোঁড়ে তারা। কারখানাটির মেঝেতে মাটির ওপর ইট বিছানো ছিল। গর্তে মরদেহ রাখার পর আবারও মাটির ওপর ইট বিছিয়ে ঢালাই করে দেয় তারা।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, হত্যার বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য পাওয়ার পর কারখানাটি ঘিরে রাখে পুলিশ। এরপর জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হয়। তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের জবানবন্দি অনুযায়ী মেঝে খুঁড়ে লাশ উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। খবর পেয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিটের সদস্যরা সেখান থেকে প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করেন।
তদন্তসূত্র জানায়, তুচ্ছ বাকবিতণ্ডার জের ধরে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটানোর বিষয়টি রহস্যজনক মনে হয়েছে। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেইসঙ্গে গ্রেপ্তারকৃতরা মাদকাসক্ত কিনা সেটিও জানার চেষ্টা চলছে।