শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:১৫ অপরাহ্ন
ফালু মিয়া, বিশেষ প্রতিনিধি :
অসহায় মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত সরকারের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান নরসিংদী শহর সমাজসেবা কার্যালয় এর মূল লক্ষ্য বিধবা, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, স্বামী পরিত্যাক্ত ও দুস্থদের মতো সমাজের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এমন মহৎ উদ্দেশ্য পূরণের দায়িত্ব থাকা প্রতিষ্টানটির বিরুদ্ধেই উঠেছে অনিয়ম ও র্দুনীতির গুরুতর অভিযোগ। এই অফিসে দীর্ঘদিন ধরে স্বজনপ্রীতি, ঘুষ বানিজ্য ও অর্থ আত্মসাতের মতো ঘটনা সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। বৃহস্পতিবার দুপুরে অফিসটিতে সেবা নিতে আসা এক নারীর আহাজারিতে উঠে আসে দুর্নীতি ও নানান অনিয়মের অভিযোগ। বিগত স্বৈরাচারী শাসক গোষ্ঠী প্রধান ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালেও এক উদ্বেগজনক চিত্র এখনও চলমান রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জেলা পর্যায়ে যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়, তা শহর সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের উপ-বরাদ্দ হিসেবে যায়। এই প্রক্রিয়া প্রতিটি ধাপেই অনিয়মের সুযোগ লুকিয়ে আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সবচেয়ে বড় অভিযোগের তীর দুঃস্থ মানুষদের চিহৃত করণ ও তালিকা চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সেবা গ্রহিতা মতে প্রকৃত দুঃস্থদের পরিবর্তে সচ্ছল ও রাজনৈতিকভাবে এবং স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের স্বজনদের নাম তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়। এর জন্য চলে অবৈধ টাকার লেনদেন। আর এভাবেই এই প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে থাকা লোকজনের যোগসাজসে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এবিষয়ে জেনেও না জানার ভান করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনটাই অভিযোগ এই প্রতিষ্ঠানটিতে সেবা নিতে আসা গ্রামীন মানুষজনের। বিধবা, বয়স্ক, হিজরা, প্রতিবন্ধী এবং স্বামী পরিত্যাক্ত নারীদের জন্য বরাদ্দকৃত ভাতার টাকা আত্মসাতরে ও গুরুতর অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের ক্ষেত্রেও রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি এখানেই শেষ নয় নানান ধরনের ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে টাকা উত্তোলন, বিভিন্ন সমিতির ও ক্লাবের নামে বরাদ্দকৃত অর্থ বিতণের ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
মাসের পর মাস শহর সমাজসেবা অফিসে ঘুরেও কোনো সরকারি সুবিধা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন শহরের তরোয়া মাজার এলাকার বাসিন্ধা বৃদ্ধা বিধবা বাতাসী বেগম। বসতভিটাহীন এই নারী তার চার কন্যা ও ৩ পুত্র সন্তান নিয়ে এক অনিশ্চিয়তার ভবিষতের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন। বিধবা বাতাসী বেগম জানান, সরকারি সহায়তার আশায় তিনি বারবার সমাজসেবা অফিসের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু কোনো ফল মেলেনি প্রতিদিন একটি ভাড়া করা চায়ের দোকান চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়েই অতিকষ্টে চলছে তার সংসার। দোকানের এক কোণে কিশোরী কন্যাদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রাত কাটে তার। তরুণী কন্যাদের সম্ভ্রম হারানোর আশঙ্কায় সর্বদাই অজানা এক আতংকে দিনাতিপাত করছেন তিনি। সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তারা কেন আমাকে সেবা দেননি কিছুই জানেন না ভুক্তভোগী এই নারী। অফিসের কর্মচারীরা বদলি বা চাকরিচ্যুতির ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না। ফলে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন। যার ফলে সমাজসেবা অফিসের মতো প্রতিষ্ঠানেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশিচয়তা করা জরুরি বলে মনে করছেন সচতেনমহল ও ভুক্তভোগীরা।
এবিষয়ে শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম কোনো কথা বলতে রাজি না হলেও একই অফিসের প্রধান অফিস সহকারী মোহাম্মদ আলী বলনে, এটা একটি জনসাধারণের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। অনেকের সাথে কাজ করতে গেলে ছোট-খাটো ভুলত্রু টি হতেই পারে তবে ভবিষতে যেন এই ধরনের ভুলত্রুটি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হবে বলে জানান তিনি।
জনকল্যাণমূলক এই প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতি বাসা বেধেছে রন্ধ্রে রন্ধ্রে যার ফলে জেলার সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নরসিংদী শহর সমাজসেবা কার্যালয়টি দ্রুত সঠিক তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ঠদের প্রতি জোরদাবি জানিয়েছেন সেবা নিতে আসা নরসিংদী শহরের মানুষজন। দুর্নীতির আখড়া নয়, অসহায় মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করছেন সমাজ বিশ্লিষ্টজনরা।