গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধার মাঠজুড়ে আবারও দুলছে সোনালী আঁশের সবুজ ঢেউ। লোকসান ও দামের অস্থিরতায় পাট চাষে আগ্রহ হারানো কৃষকেরা এবার নতুন করে আশাবাদী। গত কয়েক মৌসুমে ভালো দাম, সরকারি সহায়তা ও আন্তর্জাতিক বাজারে পরিবেশবান্ধব পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধিই তাদের এই প্রত্যাবর্তনের মূল কারণ।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় , চলতি মৌসুমে গাইবান্ধার সাত উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ হাজার হেক্টর যার মধ্যে অর্জিত হয়েছে ১৩৮২২ হেক্টর। ইতিমধ্যে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমির পাট কেটে তা জাগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কৃষি অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী অনুকূল আবহাওয়া ও উন্নত বীজ ব্যবহারের ফলে হেক্টরপ্রতি গড় ফলন হতে পারে ১২–১৩ মণ।
পাট চাষে খরচ তুলনামূলক কম। এক বিঘা জমিতে জমি প্রস্তুত, বীজ, সার, সেচ, শ্রমিক মজুরি ও রেটিংসহ মোট খরচ প্রায় ১৪ হাজার টাকা। গড় ফলন ১০–১২ মণ ধরে এবং মণপ্রতি বাজারদর গড়ে ২,৫০০ টাকা হলে আয় দাঁড়ায় ৩০হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা। খরচ বাদে লাভ থাকে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। পাটকাঠি বিক্রি থেকেও অতিরিক্ত দুই থেকে তিন হাজার টাকা পাওয়া যায়।
পাট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত নগদ অর্থ কৃষকেরা সংসারের খরচ, সন্তানের শিক্ষায় ব্যয় করছেন এবং কৃষিজ সরঞ্জাম কিনছেন। পাটকাঠির আলাদা বাজারও তৈরি হয়েছে, যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন গতি যোগ করছে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার খামার বল্লমঝড় গ্রামের পাটচাষি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা বংশ পরম্পরায় পাট চাষ করে আসছি ।ইরি ও আমনের মাঝে যে সময়ে জমি ফাঁকা পড়ে থাকে তখন এই ফসল থেকে বাড়তি আয় করার সুযোগ আছে। এ বছর দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি । আশা করছি খরচ উঠিয়ে বিঘা প্রতি ২০ হাজার টাকা লাভ হবে।
গাইবান্ধা জেলার অন্যতম বৃহৎ পাটের আড়ৎ খ্যাত কামারজানি ঘাট এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে শুকনো পাটের বর্তমান বাজার দর ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা। পাট ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, গাইবান্ধার চরাঞ্চলে ভালো পাট চাষ হয় । প্রতিদিন চাষীরা পাট নিয়ে আসছে অন্য বছরের তুলনায় এবার দাম বেশি পাওয়ায় চাষিদের লাভের পরিমাণ বাড়বে।
অন্যদিকে গাইবান্ধার ভৌগলিক অবস্থান পাট চাষের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি করেছে । বিশেষ করে নদীভাঙন ও মৌসুমের শুরুতে জলাবদ্ধতায় কিছু জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । এছাড়া বাজারে দরের ওঠানামা নিয়ে উদ্বেগ আছে।
ব্যবসায়ীদের মতে , সরকারি সহায়তা অব্যাহত থাকলে এবং পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বাজার আরও সম্প্রসারিত হলে আগামী কয়েক বছরে গাইবান্ধার পাট চাষ দ্বিগুণ হতে পারে। পরিবেশবান্ধব এই ফসল দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে তারা আশা করছেন।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, গাইবান্ধার আবহাওয়া ও মাটি পাট চাষের জন্য উপযোগী। দাম ভালো থাকায় কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে আমরাও তাদের বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলার চেষ্টা করছি ।