নিজস্ব প্রতিবেদক:
বীমা খাতের দীর্ঘদিনের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং নীতিগত দুর্বলতার নানান চিত্র উঠে এসেছে ক্যামেলকো সম্মেলনে। সম্মেলনে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বদরুল আলম লষ্কর তার বক্তব্যে বীমা খাতের “ভয়ংকর কালো অধ্যায়” প্রকাশ্যে তুলে ধরেন। যা মুহূর্তের মধ্যেই খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিজ ক্যামেলকোস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) যৌথভাবে আয়োজিত এই সম্মেলনে দেশের সকল বীমা প্রতিষ্ঠানের প্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তারা (ক্যামেলকো) অংশ নেন। কক্সবাজারের একটি হোটেলে দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সাঈদ আহমেদ, এবং পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী ও ইন্স্যুরেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট বি এম ইউসুফ আলী।
বক্তব্যে বদরুল আলম লষ্কর বলেন, “নন-লাইফ বীমা ব্যবসার একটি বড় অংশের প্রিমিয়াম আদায় করা যাচ্ছে না। রেগুলেটরি বোর্ড থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও, বাকিতে ব্যবসা চালাতে হচ্ছে শুধুমাত্র বাজার ধরে রাখার জন্য।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “যেসব ব্যবসায় প্রিমিয়াম কালেকশন সম্ভব হচ্ছে, সেগুলোতেও ভ্যাট-স্ট্যাম্প খরচ বাদে প্রতি ১০০ টাকায় ৫০–৭০ টাকা পর্যন্ত ‘আনঅফিশিয়াল অর্থ’ অতিরিক্ত কমিশন দিতে হচ্ছে। অথচ নীতিমালায় সর্বোচ্চ ১৫% কমিশনের অনুমোদন রয়েছে। অবশিষ্ট টাকা বাধ্য হয়ে কোম্পানির সিও (চিফ অপারেটিং অফিসার) এবং অন্য কর্মকর্তারা দিচ্ছেন। এ পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে ‘অস্বাস্থ্যকর ও মানি লন্ডারিং’-এর মতই ক্ষতিকর।”
বদরুল আলম তার বক্তব্যে একটি নীতিগত পরিবর্তনের দাবি জানান। তিনি বলেন, “যেভাবে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলার সময় অন্যান্য পেমেন্ট কেটে নেওয়া হয়, সেভাবে ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়ামও স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়ার ব্যবস্থা করলে ছোট ও মাঝারি বীমা কোম্পানিগুলো টিকে থাকতে পারবে।”
এই বক্তব্যের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ও আইডিআরএর সদস্য (প্রশাসন) মো. ফজলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তারাও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বদরূল আলম লষ্কর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান, এলসি সংক্রান্ত একটি সার্কুলারের মাধ্যমে এ ব্যবস্থাকে বাধ্যতামূলক করার জন্য।
বদরুলের এই বক্তব্যের একটি ভিডিও অর্থবাংলা.কম ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারের পরপরই তা নিয়ে বীমা খাতে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়।
অনেকেই বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি ‘ওপেন সিক্রেট’ অবশেষে কেউ প্রকাশ্যে তুলে ধরেছেন।
এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দেশের বীমা খাতের শীর্ষ নীতিনির্ধারক ও কোম্পানি প্রধানরা।
ক্যামেলকো সম্মেলনে এমন খোলামেলা বক্তব্য শুধু আলোচনার জন্মই দেয়নি- বরং এটি খাত সংস্কারের জন্য একটি সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ হিসেবেও উঠে এসেছে।