দুর্বল ব্যাংকগুলো পুনর্গঠনে যেভাবে তহবিল গঠন করা হয়েছে, দুর্বল বীমা কোম্পানিগুলো পুনর্গঠনেও তেমনি তহবিল করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বি এম ইউসুফ আলী।
কক্সবাজারে বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তাদের (ক্যামেলকো) সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। কক্সবাজারের লং বীচ হোটেলে ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিজ ক্যামেলকোস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বি এম ইউসুফ আলী বলেন, “বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নের জন্য এই সম্মেলন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন আমাদের জাতীয় অর্থনীতির অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। দেশের আর্থিক উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে মানিলন্ডারিং বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তাছাড়া সন্ত্রাসে অর্থায়ন আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি তৈরী করে । তাই আমাদেরকে স্ব স্ব জায়গা থেকে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে । যদিও বীমা সেক্টরে মানিলন্ডারিং এর ক্ষেত্র সীমিত তথাপি আমরা আমাদের বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহের আর্থিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মানিলন্ডারিং এর ঝুঁকি যেন সৃষ্টি না হয় সেক্ষেত্রে সর্বদা সতর্ক থাকব, সে লক্ষ্যে সর্বোচ্চ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করব । আমি আশা করি আজকের এই সম্মেলন থেকে যে সকল মতামত ও সুপারিশ গৃহীত হবে সেগুলি বীমা কোম্পানীসমূহে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণে অনেক সহায়ক হবে ।”
বীমা শিল্পকে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে আমরা সে সকল কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি সে বিষয়ে আমি আলোকপাত করছিÑ(১) বীমা গ্রাহকদের মাঝে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সভা সেমিনার অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
২) সকল বীমা কর্মীকে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে দক্ষ করে তোলা । ৩) সকল কোম্পানীর মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগকে সঠিকভাবে গ্রাহকের কেওইসি সম্পাদন এবং সময়ে সময়ে তা হালনাগাদের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।
৪) বিএফআইইউ’র মাষ্টার সার্কুলার এবং সময়ে সময়ে জারীকৃত বিভিন্ন সার্কুলার ও অফিস নির্দেশনার যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা ।
৫) কোম্পানীর ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন ধরনের সন্দেহজনক লেনদেন পরিলক্ষিত হলে তা যথাসময়ে
বিএফআইইউকে নির্ধারিত পদ্ধতিতে অবহিত করা ।
৬) এ বছরের ক্যামেলকো সম্মেলন হতে প্রাপ্ত মতামত ও সুপারিশসমূহ যা সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হবে সেগুলি বিএফআইইউ এর প্রেরিত নির্দেশনা মোতাবেক স্ব স্ব কোম্পানীতে বাস্তবায়নের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।
৭) প্রতি বছর নির্ধারিত সময়ে সফলভাবে ক্যামেলকো সম্মেলন আয়োজনের জন্য বিএফআইইউ, আইডিআরএ এবং বীমা কোম্পানীসমূহের সাথে ক্যামেলকো এসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।
বীমা শিল্পের স্টেকহোন্ডার বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট হিসাবে আমি বলতে চাই যে, আমরা সকলে মিলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের গাইড লাইন নিয়ে এই সেক্টরে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন এর ঝুঁকি শুন্যভাগে নামিয়ে এনে আমাদের দেশের আর্থিক নিরাপত্তা বিধানে সর্বদা সচেষ্ট থাকব। তাই আমরা আজকে শপথ করতে পারি বীমা শিল্পে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন এর ঝুঁকি দূর করে আমরা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনয়ন করে দেশকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করে তুলব। আমি বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহের “ক্যামেলকো কনফারেন্স ২০২৫” এর সার্বিক সফলতা কামনা করছি ।