রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫২ অপরাহ্ন
ডেস্ক নিউজ: তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চরাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে। বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সাঙ্গু নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, উত্তর, পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের নদ-নদীগুলোতে পানি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। বৃষ্টিও অব্যাহত থাকায় আগামী কয়েকদিনে পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে গতকাল বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুরমা, কুশিয়ারা, সারিগোয়াইন, পুরনো সুরমা, সোমেশ্বরী, সাঙ্গু ও জদুকাটা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি আগামী তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
অন্যদিকে গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি আগামী দুদিন অব্যাহত থাকতে পারে।বাংলাদেশ ও ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় উত্তর, উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলসহ এর নিকটবর্তী ভারতীয় অংশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় তিস্তা, দুধকুমার, ঘাঘট, সুরমা ও কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক গতকাল জানিয়েছেন, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি আরও কয়েক দিন চলবে। শুক্রবার থেকে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনায় বৃষ্টির মাত্রা কমতে পারে। তবে উত্তরাঞ্চলে হিমালয় পাদদেশে বৃষ্টি একই ধারায় অব্যাহত থাকতে পারে।
ডিমলা (নীলফামারী) সংবাদদাতা জানান, তিস্তার পানি বাড়তে থাকায় চরাঞ্চলের পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। আবাদি জমি তলিয়ে যাছে। ডালিয়া পয়েন্টে মঙ্গলবার থেকে বুধবারে তিস্তার পানি আরও ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, নাউতারা, জলঢাকা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বসতবাড়িতে পানি উঠেছে।
বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় প্লাবিত অঞ্চলগুলো থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। প্রধান সড়কে পানি কমে যাওয়ায় গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে বান্দরবানের সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। তবে পাহাড় ধসের কারণে রুমা, থানচি-আলীকদমের সড়ক যোগাযোগ এখনও বন্ধ রয়েছে।
উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, গত দুই দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তুমব্রু খালের পানি বৃদ্ধি পেয়ে কোনার পাড়া শূন্যরেখা রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। ফলে ক্যাম্পের ৬শ’ পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। বুধবার সকালে সরেজমিন কোনার পাড়া শূন্যরেখার অবস্থা দেখতে তুমব্রু গিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া সম্ভব হয়নি। স্থানীয়রা জানান, তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্পেও পানি উঠেছে।
সিলেট অফিস জানায়, কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গতকাল বুধবার দিনভর বর্ষণে জনজীবন ছিল বিপন্ন। বিভিন্ন পয়েন্টে সুরমা কুশিয়ারাসহ সব কটি নদীর পানি বেড়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় সিলেটে সুরমা বিপদসীমার ৩৪ সে. মি., কানাইঘাটে ১ দশমিক ৩৯ সে.মি., সুনামগঞ্জে ৮৫ সে.মি., শেরপুরে কুশিয়ারা দশমিক ৬ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সিলেটের চার জেলার অনেক স্থানে রাস্তায় পানি জমেছে। সুনামগঞ্জে শহরের কোনো কোনো স্থান দিয়ে বন্যার পানি ঢুকছে। বিশ্বম্বারপুর তাহিরপুর সড়ক প্লাবিত হয়ে সরাসরি যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
শিবালয় (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, আরিচা ও বাঘাবাড়ি পয়েন্টে যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এখনও বিপদসীমার নিচে রয়েছে। যমুনা তীরবর্তী আলোকদিয়া, ত্রিশুরি, মধ্যনগর, মালুচী, তেওতা প্রভৃতি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম অফিস জানায়, চট্টগ্রামের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ গতকাল বুধবার কম হলেও আবারও ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড় ধসের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে আবহাওয়া অফিস থেকে। এই হুঁশিয়ারি বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টা বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
মৌসুমি হাওয়া সক্রিয় থাকায় এবং ভারী বৃষ্টিপাতের ঘোষণা থাকায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন সংস্থা সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিগত চব্বিশ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতের সাথে অস্থায়ী দমকা হাওয়া থাকায় বঙ্গোপসাগর বেশ উত্তাল।