শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৮ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেক্স: বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত বুধবার জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। যা বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের এক চতুর্থাংশের বেশি। এই ঋণের একটি বড় অংশ, নির্দিষ্ট করে বললে প্রায় ৪৩ শতাংশ খেলাপি হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সমূহের কাছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণ কেন বছরের পর বছর ধরে আদায় করা হয় না? এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ব্যাংক ঋণ দেয়ার সময় ঝুঁকি পর্যালোচনা ছাড়াই তাদের আমানতের চেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে। পাশাপাশি ঋণ গ্রহীতাদের অনেকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী অথবা প্রভাবশালী কারো সহায়তায় ঋণ পেয়েছে। যে কারণে তারা ঋণ ফেরত না দেবার সুযোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, “কয়েকটি কারণে ঋণ খেলাপি হয়, একটা হলো পর্যাপ্ত ‘সিকিউরিটি’ না নেয়া, আরেকটি হলো দুর্বলভাবে সেটাকে মূল্যায়ন করা। আরো একটি কারণ আছে, তা হলো বাইরের চাপে কাজটি করা। এখানে রাজনীতি প্রধান কারণ। অর্থাৎ যারা যখন ক্ষমতায় থাকেন, তাদের সমর্থিত লোকজন জোর করে ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নিয়ে যায়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মালিক যেহেতু সরকার। ফলে ওই ব্যাংকের রাজনৈতিক লোকজন যখন ক্ষমতা প্রয়োগ করে, সেটা সহ্য করার ক্ষমতা থাকে না। কারণ মালিকের পক্ষ থেকে চাপ আসলে তো কিছু করার নেই।”
ইব্রাহীম খালেদ বলেছেন, নিয়ম ভঙ্গের কারণে ঋণ খেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের শাস্তি হয় না বলে প্রতি বছর এ ধরনের অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বাড়ে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত এক হিসাবে জানা যাচ্ছে, ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। তার মানে হলো, পুরনো অনাদায়ী ঋণ আদায় তো হচ্ছেই না। বরং নতুন করে দেয়া ঋণও খেলাপি হয়ে যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এর মানে হলো রাষ্ট্রায়ত্ত ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে অনাদায়ী ঋণ আদায়ে কর্তৃপক্ষের ফলপ্রসূ কোনো উদ্যোগ নেই। যেমনটি বলছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
তার ভাষায়, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বই হলো অন্যান্য ব্যাংকে কী ধরনের ব্যবস্থাপনা চলছে, তা মনিটরিং করা। কারণ ব্যাংকগুলোর ভেতরে তা ব্যক্তি খাতের হোক কিংবা রাষ্ট্রীয় মালিকানার হোক, সেখানে অভ্যন্তরীণ সুশাসনের একটি বড় অভাব দেখা দিয়েছে। যার কারণে এই ঋণ ফেরত না দেয়া বা জালিয়াতি এমন নানা ধরনের কার্যক্রম ঘটে যাচ্ছে। এসব দেখলে বোঝা যায় ঋণ ফেরত আনার জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা দরকার ছিল, তা আমরা করতে পারিনি।”
কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, অনাদায়ী ঋণ আদায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানাবিধ পদক্ষেপ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এবং মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, এজন্য নিয়মিত পরিদর্শন এবং মনিটরিং করে ব্যবস্থা নেয়া হয়
তার ভাষায়, “এসব ঋণের সাথে যারা জড়িত এবং যেসব নিয়ম মেনে ঋণ দেবার কথা, তা মানা হয়েছে কিনা তদারক করে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। এবং বিভিন্ন সময় তা করাও হচ্ছে। যেসব ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, তখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য নির্দেশনা যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে।”
তবে, সাম্প্রতিক সময়ে কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে খেলাপি ঋণ আদায় করতে ব্যর্থ হবার কারণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, এমন কোনো উদাহরণ সিরাজুল ইসলাম দিতে পারেননি।
এদিকে, বুধবার জাতীয় সংসদে দেশের শীর্ষ ১০০ জন ঋণ খেলাপির নামও প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, গত অর্থবছর শেষে দেশে ঋণ খেলাপির সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৫৮ জন। তাদের কাছে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকারও বেশি, যা বাংলাদেশের বর্তমান অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটের ৭৩ শতাংশের সমান।
জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী সোনালী, জনতা ও অগ্রণীসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ৫টি ব্যাংকের কাছেই পাওনা ৫৬ হাজার কোটির টাকার বেশি। এদের মধ্যে শীর্ষ খেলাপি সোনালী ব্যাংক।
সূত্র-বিবিসি।