শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩:১৪ অপরাহ্ন

ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে ভাবছে না আ.লীগ

ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে ভাবছে না আ.লীগ

ভিশন বাংলা ডেস্কঃ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে ভাবছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবির। আগামী নির্বাচন ইস্যুতে এসব দাবি মানার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করছে দলটি নেতার। তারা বলছেন বিএনপি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে। এ জোটের সঙ্গে দেশের জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। জনগণ এসব নিয়ে ভাবেও না।গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এবং যুক্তফ্রন্টের একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগবিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ার শুরু হয় গত কয়েক মাস আগে। শুরুতে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী কোনো দলকে জাতীয় ঐক্যে নেওয়া হবে না আর জামায়াত না ছাড়লে বিএনপির সঙ্গেও ঐক্য হবে না এমন ঘোষণা ছিল জোট নেতাদের। কিন্তু প্রকাশ্যে দেওয়া এমন ঘোষণা ধরে রাখতে পারেনি জাতীয় ঐক্যের উদ্যোক্তারা। বিভেদ দেখা দেয় জোটের নেতৃত্বে কে থাকবেন বি. চৌধুরী না কামাল হোসেন। অবশেষে জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বি. চৌধুরী ও তার দল বিকল্প ধারাকে বাদ রেখে গত শনিবার বিকালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটে। জামায়াতকে ত্যাগ না করায় ঐক্যফ্রন্টে বিকল্প ধারা যোগ দেয়নি বলে ঐদিনই এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করে দলটি।জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যাত্রার প্রাক্কালে আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের প্রতি ৭ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙ্গে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, নির্বাচনের এক মাস আগে সেনা মোতায়েন, ইভিএম ব্যবহার বাদ, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন, সামাজিক গণমাধ্যমে মতপ্রকাশের অভিযোগে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা। এদিকে, আগামী নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এসব দাবি মানার কোনো সুযোগ নেই মনে করছে আওয়ামী লীগ। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এর বাইরে কারোই যাবার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগনেতারা বলছেন- জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। যে কারণে এসব জনবিচ্ছিন্ন জোট নিয়ে ভাবছে না আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ভাবনা এখন নির্বাচন। আওয়ামী লীগ সূত্র মতে, দশম জাতীয় নির্বাচনের পর হতে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দল আন্দোলনের নামে তারা বিভিন্ন বিশৃঙ্খলা, নাশকতা চালিয়েছে, কিন্তু কার্যকর কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। বরং জনগণ থেকে দূরে সরে গেছে। সর্বশেষ আদালতের রায়ে বিএনপি সন্ত্রাসী দল হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। এর আগেই আন্তর্জাতিক আদালতেও তাদের সন্ত্রাসী কর্মকা- প্রমাণ পেয়েছে। দলীয় প্রধান কারাগারে, আরেকজন পলাতক। রাজনৈতিকভাবে বিএনপি এখন কোণঠাসা এবং চাপের মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় বিএনপি নিরুপায় হয়ে ড. কামাল হোসেনের ওপর ভর করেছে। শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে জোট। জোটের অন্যতম উদ্যোক্তা বিকল্পধারাকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে গঠিত হওয়া নতুন এ রাজনৈতিক জোট শেষ পর্যন্ত গতি পাবে কিনা সন্দেহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদেরও। অন্য আরেকটি সূত্র বলছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না জানালেও তাদের কার্যক্রম আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে আওয়ামী লীগ। গতিবিধি লক্ষ্য করে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণ করা হবে। জোটের নামে অরাজকতার চেষ্টা করা হলে প্রতিহিত করার কথাও বলছে সূত্রটি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ এবং ৭ দফা দাবি নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, ড. কামাল হোসেনরা সমাজের জনবিচ্ছিন্ন মানুষ। এদের নিয়ে কথা বলার কি আছে। তাদের ৭ দফা নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো ভাবনা নেই। দেশের মানুষও ভাবছে না। জনবিচ্ছিন্নদের নিয়ে কে ঐক্য করলো, আর কারা গেলো সেটা নিয়ে আমাদের ভাবনা নেই।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি এখন রাজনৈতিক দেউলিয়া দলে পরিণত হয়েছে, আদালতের রায়ে বিএনপি এখন সন্ত্রাসী দল। কতখানি দেউলিয়া হলে এসব জনবিচ্ছিন্ন লোকদের কাছে তাদের মাথা নিচু করতে হয়। এসব জনবিচ্ছিন্ন, জনসমর্থন হীন জোট নিয়ে আওয়ামী লীগ ভাবে না। জনগণও ভাবে না। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি বলেন, দেশের জন্য, উন্নয়নের জন্য, দেশের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এদের কোনো ভূমিকা নেই। এদের কোনো চিন্তাও নেই। এরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কথাকথিত নামসর্বস্ব দলগুলো নিয়ে রাজনৈতিক জোটের নামে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগ সজাগ আছে, কোনো অরাজকতর চেষ্টা হলে প্রতিহত করা হবে। আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেন, কিছু দুর্নীতিবাজ ও দেশবিরোধী রাজনৈতিক নেতারা এই ঐক্য করেছে। গত দিনে এ ঐক্য যেসব আন্দোলনের কথা বলছে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ঐক্য এবং নেতাদের সাথে দেশের জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। দেশের জনগণ এদের ঐক্য নিয়ে ভাবছে না। দেশের জনগণ শুধু একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভাবছে। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে, নির্বাচন প্রতিহত করার ক্ষমতা কারো নাই। এসব জোট অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। তাদের আন্দোলন এখন শুধু অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। আমরা তাদের নিয়ে ভাবছি না। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের অন্যতম শরীক, জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জাতীয় ঐক্যের সাত দফা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। এই সাত দফার মধ্যে কিছু ওমিশন আর কিছু কমিশন আছে। সাত দফার মাধ্যমে ভূতের সরকার নাজিল করতে চায় ঐক্যফ্রন্ট।’ জাতীয় ঐক্যের নামে মূলত চক্রান্তের মাস্টাররা একজোট হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেঁচে থাকতে অন্য দলের নেতা ভাড়া করা বিএনপির জন্য লজ্জার। ওয়ান-ইলেভেন করেছিল এদের মতো অনেকেই। এরা চক্রান্তের মাস্টার। এটাই ভয় পাই। আর কোনো ভয় পাই না। এই চক্রান্তকারীর দল হয়ে যাওয়ায় ভয় পাচ্ছি। এদিকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কঠোর সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গতকাল পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় আয়োজিত জনসভায় বলেন, গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে খুচরা আধুলিরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে। ড. কামাল হোসেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে নিজেই এখন দুর্নীতিবাজদের দলে ভিড়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমি কামাল হোসেন সাহেবকে বাহ্বা জানাই। যে তিনি আজকে ঐক্য করেছেন কার সাথে? তিনি বড় বড় কথা বলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলেন। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন। আর যে বিএনপি-জামায়াত জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত আজকে তাদের সাথে তিনি ঐক্য করেছেন।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com