সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩১ অপরাহ্ন
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের কালিহাতীর ভল্লববাড়ি এলাকায় টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে সংঘটিত এ ঘটনায় লতিফ সিদ্দিকীর ব্যক্তিগত গাড়িসহ চারটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিবাদে দুপুর পৌনে তিনটার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি গাড়ি নিয়ে এসে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করেছেন লতিফ সিদ্দিকী। কালিহাতী থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেনকে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তিনি অবস্থান ধর্মঘট প্রত্যাহার করবেন না বলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলামকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
আওয়ামীলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছেন। এতে আশস্ত হয়ে টাঙ্গাইল-৪(কালিহাতী) আসনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, এটা তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকারও বটে। রোববার দুপুরে কালিহাতী উপজেলার ২নং গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নে তিনি ১০-১২টি মোটরসাইকেল ও চারটি গাড়ি নিয়ে গণসংযোগে বের হন। তিনি ভল্লববাড়ি যাওয়ার পথে রেল স্টেশনের পাশ থেকে স্থানীয় সরকার দলীয় এমপি’র কর্মীরা তাঁর গাড়িবহর লক্ষ করে পাথর ও ইট-পাটকেল ছুঁড়ে। ইট-পাটকেল ও পাথরের ঢিলে মহিলা সহ ২৫-২৬জন আহত হন। তবে লতিফ সিদ্দিকী অক্ষত থাকেন। এ ঘটনায় লতিফ সিদ্দিকী গাড়ি থেকে নামলে ইট-পাটকেল নিক্ষেপকারীরা পালিয়ে যায়। পরে লতিফ সিদ্দিকী স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ভল্লববাড়ি গ্রামের মহির উদ্দিন তালুকদারের বাড়ির আঙিনায় গাড়িবহর রেখে ভেতরে কথা বলার সময় সরকার দলীয় প্রার্থী হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারির কর্মী ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদারের নেতৃত্বে ১০০-১৫০ কর্মী-সমর্থক লাঠি, দা, সুরকী নিয়ে গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে প্রায় ৩০ মিনিটব্যাপী ব্যাপক ভাংচুর করে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আরো জানান, কালিহাতীতে সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে তাঁর কর্মী-সমর্থকদেরকে পুলিশ ফোন করে প্রকাশ্যে-গোপণে হুমকি দিচ্ছে। সরকার দলীয় প্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকরা নিয়মিত নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। তিনি ইতোপূর্বে তিনটি পৃথক লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু রিটার্নিং অফিসার কোন ব্যবস্থাই নেননি। কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মীর মোশারফ হোসেনের প্রত্যাহার দাবি করে তিনি জানান, ইচ্ছে করলে তিনি বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে পারতেন। কিন্তু জনগনের অসুবিধার কথা ভেবে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। যে পর্যন্ত কালিহাতীর ওসিকে প্রত্যাহার ও ঘটে যাওয়া ঘটনাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি অবস্থান থেকে কোথাও যাবেন না।
হামলায় আহত ইউপি সদস্য মোর্শেদা খানম ডলি জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদার তাঁর লাইসেন্সকৃত বন্দুক নিয়ে হামলায় নেতৃত্ব দেয়। সরকার দলীয় প্রার্থী হাছান ইমাম খানের কর্মী ওবায়দুল তালুকদার, আব্দুল হাই মেম্বার, জহুরুল, সোহেল সিদ্দিকী, জাহাঙ্গীর, রাসেল, সুলতান মেম্বার সহ প্রায় দেড়শ’ লোক হামলায় অংশ নেয়। তিনি সহ অন্যকর্মীরা মানবঢাল রচনা করে লতিফ সিদ্দিকীকে রক্ষা করেন। অথচ তাঁর(লতিফ সিদ্দিকীর) ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী পুলিশ দূরে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেছে।
খবর পেয়ে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম এবং পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় সহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা লতিফ সিদ্দিকীর সাথে কথা বলেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। এ সময় লতিফ সিদ্দিকী রিটার্নিং অফিসারকে বলেন, এর আগে তিনটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি- কোন ফলাফল তো দেখলাম না। ওরা আমার কর্মী-সমর্থকদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে, পুলিশ দিয়ে পক্ষে কাজ করার জন্য হুমকি দিচ্ছে, আজ আমার বহরে হামলার ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে। কর্মীদের মেরেছে, আর পুলিশের নিরাপত্তাকর্মীরা চেয়ে চেয়ে দেখেছে- এটা মেনে নেয়ার নয়। ওসির প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আমি অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
পরে রিটার্নিং অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম রোববারের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বললে তিনি(লতিফ সিদ্দিকী) কাগজ-কলম চান। কাগজ-কলম দেয়া হলে তিনি স্বহস্তে ঘটনার বর্ণনা লিখে রিটার্নিং অফিসারের হাতে তুলে দেন। এ সময় রিটার্নিং অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় প্রাজ্ঞ রাজনীতিক আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে তাঁদের কামরায় নিয়ে যেতে চাইলেও তিনি যাননি।
সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের সামনে চাদর বিছিয়ে বসে-শুয়ে রয়েছেন। লতিফ সিদ্দিকীর সাথে তাঁর ৫-৬জন কর্মী রয়েছে।
আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কালিহাতী থানার এএসআই মো. সেলিম হোসেন জানান, বাড়ির ভেতরে বসে কথা বলার সময় বর্তান সংসদের এমপি হাছান ইমাম খানের লোকজন অতর্কিতভাবে হামলা করেছে। আমরা ‘নেতা’ লতিফ সিদ্দিকীকে রক্ষা করেছি।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম জানান, প্রাজ্ঞ রাজনীতিক আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর কাছ থেকে তিনি একটি দরখাস্ত পেয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি পরে বিস্তারিত জানাবেন।
প্রকাশ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দল থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর এবারই প্রথম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ‘ট্রাক’ প্রতীক নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।