শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১১ পূর্বাহ্ন

ক্রিকেট উৎসবে বিশ্বকাপের উঁকিঝুঁকি

ক্রিকেট উৎসবে বিশ্বকাপের উঁকিঝুঁকি

ক্রীড়া প্রতিবেদক‍ঃ তাঁর নিজের দল ঢাকা ডায়নামাইটস অনুশীলন শুরু করছে আজ থেকে। এর আগে বছরের প্রথম দিনের অবসরে সাকিব আল হাসান উৎসবের আমেজও গায়ে মাখলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে গিয়েছিলেন বই উৎসবে। যেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নতুন বইয়ের গন্ধে মাতোয়ারা হয়েছেন বাংলাদেশের টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি অধিনায়কও। তিনি যখন খুদে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বই উৎসবে ব্যস্ত, তখন মিরপুরের একাডেমি মাঠেও চলছিল আরেক উৎসবের প্রস্তুতি। ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নামের যে ক্রিকেট উৎসবের প্রথম প্রস্তুতির দিনে অনেকের মনেই উঁকিঝুঁকি দিয়ে গেল বিশ্বকাপও। বিশেষ করে তাঁদের মনে, যাঁরা একসময় জাতীয় দলে খেললেও এখন ছিটকে পড়াদের দলে। তবে আবারও পারফরম করে ফেরার আশায় যাঁরা, তাঁদের জন্য বিপিএল বড় এক মঞ্চ নিঃসন্দেহে। সেই মঞ্চেই আলো ছড়ানোর লক্ষ্যের কথাই তাই শোনা গেল তাঁদের মুখে।

এনামুল হক (বিজয়) এঁদের অন্যতম। চিটাগং ভাইকিংস থেকে এবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে আসা এই ওপেনার গত জুলাই-আগস্টের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে ফিরেছিলেন জাতীয় দলে। সেখানে তিন ওয়ানডের প্রতিটিতেই খেলার সুযোগ পেলেও রান করতে পারেননি তেমন। ফলাফল আবার বাদ। কিন্তু দরজায় যখন কড়া নাড়ছে আরেকটি বিশ্বকাপ, তখন চোটের জন্য ২০১৫-র বিশ্বকাপ থেকে দেশে ফিরে আসা এনামুল সুযোগ পাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকবেনই। তাঁর কথায়ও ভেতরের সেই আকুতিটা স্পষ্ট, ‘সত্য কথা বলতে আমি যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে জাতীয় দলে ফিরলাম এবং ম্যাচগুলোতে ভালো করতে পারলাম না, তখন থেকে প্রতিটি ম্যাচই আসলে আমার কাছে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। সেটি এনসিএল (জাতীয় ক্রিকেট লিগ) বলেন, বিসিএল (বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ) বলেন কিংবা বিপিএল—যেকোনো ম্যাচই আমার জন্য ২০১৯ বিশ্বকাপ প্রস্তুতির। আমি সব সময় নিজেকে তৈরি রাখার চেষ্টা করব। সে জন্য বিপিএলের প্রতিটি ম্যাচই আমার নিজের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

গুরুত্বপূর্ণ নিজের স্বপ্নপূরণের জন্যও, ‘আমি অবশ্যই ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলতে চাই। ২০১৫ বিশ্বকাপে আমি যখন চোট পেয়ে (নিউজিল্যান্ডের নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে) মাঠের বাইরে ছিলাম এবং দেশে ফিরে আসি, এর পর থেকেই আমি স্বপ্ন দেখছি পরের বিশ্বকাপটি খেলার। সেটি আমার মনে-প্রাণে আছে, আছে প্রতিটি চেষ্টায়, প্রতিটি নেট ও জিম সেশনে। সুযোগ পেতে যতটা প্রস্তুত হওয়া দরকার এবং যতটুকু পারফরম করা দরকার, আমি চেষ্টা করব তা করতে।’ অন্যবার অবশ্য এনামুলের মতো বিপিএলের স্থানীয় ক্রিকেটারদের প্রস্তুতি আসর শুরুর সপ্তাহখানেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। এবার জাতীয় নির্বাচনের কারণে পিছিয়ে তা একটু দেরিতেই শুরু হলো। তবে বছরের প্রথম দিন সব ফ্র্যাঞ্চাইজিই অনুশীলন করেনি। কাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সঙ্গে মিরপুরের একাডেমি মাঠ দাপাতে এসেছিল রাজশাহী কিংস এবং সিলেট সিক্সার্সও। বল টেম্পারিং কাণ্ডে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ ডেভিড ওয়ার্নারকে দলভুক্ত করে আসন্ন বিপিএলের প্রথম বড় চমক উপহার দিয়েছে সিক্সার্স’ই।

এবার সিলেটের নেতৃত্বেও দেখা যাবে এ অস্ট্রেলিয়ানকেই। আগামীকালই তাঁর ঢাকায় পা রাখার কথা। তবে ওয়ার্নার একা নন, স্থানীয় একাধিক ক্রিকেটারের ওপর খুব নির্ভরতা সিক্সার্সের। তাঁদের অন্যতম সাব্বির রহমানের চোখও বিশ্বকাপে। মাঠের বাইরের বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া এই ব্যাটসম্যানের সুবিধার দিক হলো জাতীয় দলের থিংক ট্যাংকের বিশ্বকাপ ভাবনায়ও তিনি আছেন। সেটি ৭ নম্বরে তাঁর ব্যাটিং সামর্থ্য বিবেচনায়ই। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার প্রায় পাঁচ মাস পার করে ফেলা সাব্বিরকে নিজের যোগ্যতা প্রমাণে পারফরমও করতে হবে। আন্তর্জাতিক ও ক্লাব ক্রিকেটে নিষিদ্ধ এ ক্রিকেটারের জন্য সেই যোগ্যতা প্রমাণের প্রথম বড় ক্ষেত্র বিপিএলই। বছরের প্রথম দিন জাতীয় দলে হারানো জায়গা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যের কথা শোনা গেল তাঁর মুখেও, ‘জাতীয় দলের দরজা সবার জন্যই খোলা আছে। বিপিএলটা আমার জন্য অনেক বড় মঞ্চ। আমার জীবনে অনেক বড় টুর্নামেন্ট। আমি চেষ্টা করব আমার স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে। আর বিশ্বকাপ অনেক দূরে আছে এখনো। আপাতত বিপিএল নিয়ে চিন্তা করছি। তবে হ্যাঁ, আমি যদি বিশ্বকাপে ভালো পারফরম করি, তাহলে আমার সুযোগ থাকবে। চেষ্টা করব বিপিএলে ভালো কিছু করে বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার।’ কারো কারো জন্য তাই ক্রিকেট উৎসবের প্রথম দিনের প্রস্তুতিটা শুধুই বিপিএলের নয়, বিশ্বকাপেরও!

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com