বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৬ অপরাহ্ন
ডেস্ক নিউজঃ আজ ১০ জানুয়ারি, জাতির জন্য অবিস্মরণীয় একটি দিন। বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্ন মহান মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত স্বাধীন ভূখন্ডে এই দিন পা রাখেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানে সাড়ে ৯ মাসের কারাবাস শেষে ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে এদিনই ফিরে আসেন স্বাধীনতার স্থপতি ও বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। সেই থেকে দিনটি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলেও প্রকৃতপক্ষে ১৯৭২-এ বঙ্গবন্ধুর দেশে ফিরে আসার মধ্য দিয়েই এ বিজয় পূর্ণতা পায়। জাতির পিতা তার এ প্রত্যাবর্তনকে দেখেছিলেন ‘অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে কারাগারে আটক করে রাখে।পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর পরিকল্পিত গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ মাথানত করেনি বাঙালি। গড়ে তোলে প্রতিরোধ। শুরু হয় হানাদারদের বিরুদ্ধে মরণপণ মুক্তিযুদ্ধ।বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রপতি করে গঠিত হয় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার। তার অবর্তমানে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদ সাংগঠনিকভাবে পরিচালনা করেন ‘মুজিবনগর সরকার’ নামে খ্যাত এ সরকারের নেতৃত্বে মরণপণ যুদ্ধে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর জাতি বিজয়ের লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে।মুক্তিযুদ্ধের প্রথম থেকেই কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী প্রবল জনমত গড়ে ওঠে। স্বাধীনতার পর নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিশ্ববাসীর কাছে অবিসংবাদিত এই নেতার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়। বিশ্বনেতারাও তার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হন। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে অবশেষে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়ে বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দেয়।শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি। এদিন তাঁকে ও কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তাঁরা পৌঁছান লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে। সকাল ১০টার পর থেকে তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দীন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলেন। পরে ব্রিটেনের বিমানবাহিনীর একটি বিমানে তিনি পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।১০ তারিখ সকালেই তিনি নামেন দিল্লিতে। শেখ মুজিবুর রহমান সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ এবং অন্যান্য অতিথি ও সে দেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন।বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাঁদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা এসে পৌঁছেন ১০ জানুয়ারি। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর বাঙালি জাতি তাঁকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাঁকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকেল ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। সশ্রদ্ধ চিত্তে তিনি সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন, সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন।নয় মাসের যুদ্ধের একপর্যায়ে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত রূপ নিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে স্বাধীনতা অর্জনের পথে মুক্তিযোদ্ধা, জনতা ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ তীব্র হয়। জয় তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় মাত্র। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলা হয় প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হলে পাকিস্তানি বর্বর শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয় তাঁকে সসম্মানে মুক্তি দিতে।১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২৩ সদস্যের আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে।বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি এ মহান নেতার অম্লান স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তারা। দিনটিকে ঘিরে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন আজ বৃহস্পতিবার নানা কর্মসূচি পালন করবে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে রয়েছে- আজ সকাল সাড়ে ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং বিকেল ৩টায় রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন ও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেবেন। সারাদেশে দল ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো অনুরূপ কর্মসূচি পালন করবে।এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা সভা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, দোয়া-মিলাদ মাহফিল ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করবে।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আয়োজিত আলোচনা সভাসহ সব কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ সব সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।