মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৬ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরাক থেকে মার্কিন সেনাদের বহিষ্কারে আজ রবিবার ইরাকের সংসদে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে সংসদ সদস্যদের ভোটে। ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানি ও ইরাকের এক শীর্ষ মিলিশিয়া নেতাকে হত্যার প্রতিবাদে এই পদক্ষেপ নিলো ইরাকের সংসদ।
ইরাকের পার্লামেন্টে পাস হওয়া ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকার আন্তর্জাতিক জোটের কাছে সহযোগিতা চেয়ে ইরাকে সেনা রাখার যে অনুরোধ করেছিল তা বাতিল করার প্রস্তাব করবে।’
‘সরকার অবশ্যই ইরাকের মাটিতে অন্য দেশের সেনা উপস্থিতির অবসান ঘটাতে কাজ করবে এবং যেকোনো কারণে ইরাকের ভূমি, আকাসসীমা অথবা জলপথ ব্যবহার করতে দেবে না।’
ইরাকের রাজনৈতিক নেতাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পার্লামেন্টে জরুরি অধিবেশন ডাকেন চার মাসের বিক্ষোভের পর দেশটির বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী আদিল আব্দুল মাহদি। জরুরি ওই বৈঠকেই পার্লামেন্ট সদস্যরা ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে প্রস্তাব দেয়ার পক্ষে মত দেন।
ইরাকে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতির একটি বড় আইনী ভিত্তি হলো তারা ইরাকের আহবানেই সেখানে গিয়েছে। রবিবার পাশ হওয়া এই প্রস্তাবে সেই আইনী ভিত্তি নাকচ করা হচ্ছে না। তবে সে পথেই প্রথম পদক্ষেপ এই প্রস্তাব।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদেল আব্দুল মাহদি বলেন, ইরাক নিজের মাটিতে বিদেশিদের কর্তৃক কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড মেনে নিতে পারে না। এই হত্যাকাণ্ডকে তিনি ইরাকের সার্বভৌমত্বের মারাত্মক লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী জানান, হত্যার সময় সোলাইমানি বাগদাদে এসেছিলেন তার সঙ্গে দেখা করতে। সৌদি আরবের একটি আলোচনা প্রস্তাবের বিষয়ে ইরানের সিদ্ধান্ত জানাতে এসেছিলেন তিনি।
ইরাকি প্রধানমন্ত্রী জানান, এক সপ্তাহ আগে বাগদাদের মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ থামাতে কাজ করেছেন তিনি। তিনি এমনকি পদত্যাগের হুমকিও দিয়েছিলেন বিক্ষোভ থামাতে। যেজন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও তাকে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প তাকে ধন্যবাদ দেওয়ার পাশপাশি গোপনে তার অনুমতি ছাড়াই ইরাকের ভেতরে সোলাইমানির ওপর হামলা চালানোর পরিকল্পনাও করছিলেন।
আজ ইরাকের সংসদে যে প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে তাতে শুধু মার্কিন সেনাদেরই নয় বরং পুরো আন্তর্জাতিক জোট বাহিনীকেই ইরাক ছাড়ার কথা বলা হয়েছে। যারা মূলত ইসলামিক স্টেট এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলো। এর ফলে ইরাকে পুনরায় ইসলামিক স্টেট এর উত্থান ঘটতে পারে।
ইরাকে বর্তমানে কয়েক হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। নিরাপত্তা চুক্তি অনুযায়ী, তাদের পরামর্শমূলক কাজে জড়িত থাকার কথা রয়েছে। রবিবার পার্লামেন্ট অধিবেশনে এমপিরা ইরাক থেকে এসব মার্কিন সেনাকে প্রত্যাহারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানালো।
আইএস বিরোধী লড়াইয়ে সহায়তার জন্য মার্কিন বাহিনীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইরাক। রবিবার পাস হওয়া প্রস্তাবে সরকারকে ওই আমন্ত্রণ বাতিল করতে বলা হয়েছে। এতে সব ধরনের বিদেশি সেনার উপস্থিতির ইতি টানতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
পার্লামেন্টের আইন বিষয়ক কমিটির প্রধান আমার আল শিবলি বলেন, ‘দায়েশ (আইএস)-কে পরাজিত করার পর মার্কিন সেনাদের এখন আর আমাদের প্রয়োজন নেই। দেশ রক্ষায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে।’
ইরাকের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদী বলেন, অভ্যন্তরীণ ও বাইরের নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও নৈতিকতা ও বাস্তবতার দিক থেকে মার্কিন বাহিনীকে প্রত্যাহার করাই হবে ইরাকের জন্য সেরা সিদ্ধান্ত।
এদিকে ইরাকি নিরাপত্তা কর্মীদের মার্কিন ঘাঁটি থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে ইরাকের ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী কাতাইব হিজবুল্লাহ। শনিবার ওই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এতে স্থানীয় সময় রবিবার বিকাল পাঁচটা থেকে ইরাকি নিরাপত্তাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আর এদিনই মার্কিন বাহিনীকে প্রত্যাহারে প্রস্তাব পাস করলো ইরাকি পার্লামেন্ট।
গত ৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার শেষরাতে বাগদাদ বিমানবন্দর এলাকায় ড্রোন হামলা চালিয়ে ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলাইমানিসহ তার ১০ সহযোগীকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। হামলার পর শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইরাকজুড়ে ব্যাপক মার্কিনবিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে।