রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্বজুড়ে রেকর্ড করোনা সংক্রমণের ফলে এখনও অনেক দেশ ও শহরে লকডাউন চলছে। তাই খুচরা বাজারে সোনার বেচাবিক্রি সেভাবে বাড়েনি। তারপরও বিশ্ববাজারে বাড়ছে সোনার দাম। আজ বুধবার আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বেড়ে প্রায় ৮ বছরে সর্বোচ্চ হয়েছে। স্পট সোনার দাম ০.২ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স হয় ১ হাজার ৭৭০.৯২ ডলার। দিনের শুরুতে এশিয়ার বাজারে সোনার দাম ছুঁয়েছিল প্রতি আউন্স ১ হাজার ৭৭৩ ডলার। যা ২০১২ সালের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ দাম। এ দিন বিশ্ব শেয়ারবাজারে দরপতন ঘটে ০.৩ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত তিন কারণে বিশ্বজুড়ে সোনার দাম অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে। প্রথমত, বিশ্বের অনেক অঞ্চলে করোনার রেকর্ড সংক্রমণের কারণে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এতে দরপতন ঘটছে শেয়ারবাজারে। তাই অস্থির এ সময়ে ব্যবসায়ীরা নিরাপদ হিসেবে সোনায় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, ডলার দূর্বল হওয়ায় এটিও সোনার দাম বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে। তৃতীয়ত, অর্থনীতি সুরক্ষায় অনেক দেশ বিপুল অংকের প্রণোদনা দিচ্ছে, সেই সঙ্গে কমাচ্ছে সুদের হার। এর কারণেও সোনার দাম বাড়ছে।
সোনার বাজার বিষয়ক গবষণা প্রতিষ্ঠান মেটাল ফোকাস জানায়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণেই সোনার বাজার উর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। লকডাউনের কারণে বিশ্বে সোনার দুই বড় বাজার চীন ও ভারতে কমেছে অলংকার বিক্রি। কিন্তু অস্থির এ সময়ে নিরাপদ হিসেবে সোনায় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে পশ্চিমা ব্যবসায়ীরা। সে কারণেই দাম বাড়ছে। মেটাল ফোকাস জানায়, এ বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ৩৫০ টন সোনা ক্রয় করবে। যা ২০১৯ সালের ক্রয় ৬৪৬ টনের অর্ধেক। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, খুচরা বাজারে বিক্রির পাশাপাশি শিল্প কারখানায়ও এ বছর সোনার ব্যবহার কমবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, লাতিন আমেরিকান দেশগুলোতে করোনায় মৃত্যু ১ লাখে চলে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোতে আক্রান্তের হার রেকর্ড বাড়ছে। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নও যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটকদের নিজেদের অঞ্চলে প্রবেশে না করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ব্রাজিল ও রাশিয়ার পর্যটকদেরও তারা নিষিদ্ধ করার চিন্তা করছে। এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে চরম অনিশ্চয়তা চলছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় দূর্বল হচ্ছে ডলারও। ফলে দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছেন তারা।
সিএনবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো অর্থনীতি রক্ষায় ব্যাপকভাবে প্রণোদনা দিচ্ছে। এর পাশাপাশি সুদের হার নিন্মমুখী রাখছে। এতে এ বছর সোনার দাম ১৬ শতাংশের বেশি বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাবাজার অস্থিরতার সময়ে সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ মনেকরা হয়।
অ্যাক্সিকর্পের প্রধান বৈশ্বিক বাজার বিশ্লেষক স্টেফেন ইনেস বলেন, ‘ডলার দূর্বল হওয়ার পাশাপাশি করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশে অর্থনীতি বাঁচাতে আরো প্রণোদনার দাবি তৈরি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সংগত কারণেই সোনার দাম উর্ধ্বমুখী থাকবে।’
সূত্র: রয়টার্স, সিএনবিসি, কিটকো নিউজ ।