সোমবার, ১৪ Jul ২০২৫, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ট্রান্সফরমার নষ্ট হওয়ার ঘটনায় বিতর্কিত ক্ষতিপূরণ বিল: নীলফামারীতে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে জোরপূর্বক আদায়ের অভিযোগ নেত্রকোনায় স্ত্রীকে হত্যার পর রশিতে ঝুলে স্বামীর আত্মহত্যা কুমিল্লা ইপিজেড মেডিকেল সেন্টারে চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে চলছে অফিসের কার্যক্রম আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা: ৯ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অন্ধকারে” ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা: ডিএমপি মির্জাপুরে ১০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ নিজ বাড়ি থেকে ব্যবসায়ী আটক কেরানীগঞ্জে রাজাবাড়ী এলাকার প্রধান সড়কে ময়লার স্তূপ, চরম ভোগান্তিতে এলাকাবাসী শেরপুরে অবৈধ বালু উত্তোলনের দায়ে একজনকে ১০ দিনের কারাদণ্ড বিয়ের ৩০ বছর পর একসঙ্গে দাখিল পাস করলেন স্বামী-স্ত্রী পদ্মা সেতুর মাওয়া টোল প্লাজার কাছে একাধিক গাড়ির ভয়াবহ সংঘর্ষ
ট্রান্সফরমার নষ্ট হওয়ার ঘটনায় বিতর্কিত ক্ষতিপূরণ বিল: নীলফামারীতে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে জোরপূর্বক আদায়ের অভিযোগ

ট্রান্সফরমার নষ্ট হওয়ার ঘটনায় বিতর্কিত ক্ষতিপূরণ বিল: নীলফামারীতে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে জোরপূর্বক আদায়ের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নীলফামারী জেলার সদর উপজেলার লক্ষীচাপ ইউনিয়নের সবুজপাড়া এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের সেবার মান ও প্রশাসনিক আচরণ নিয়ে সম্প্রতি চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। একটি বিদ্যুৎ লাইনে সামান্য দুর্ঘটনার সূত্র ধরে স্থানীয় একজন সাধারণ গাড়িচালকের নামে ১২,৫০৪ টাকার ক্ষতিপূরণ বিল পাঠানো হয়েছে। এলাকাবাসীর ভাষ্য, ঘটনাটির নেপথ্যে রয়েছে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও দায় এড়ানোর প্রবণতা, যার প্রতিবাদে স্থানীয় জনসাধারণ এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রশাসনের জবাবদিহিতা দাবি করছেন।

ঘটনার সূত্রপাত: একটি দুর্ঘটনা না কর্তৃপক্ষের গাফিলতি?

গত সপ্তাহে সবুজপাড়া এলাকায় একটি ট্রাক্টরের ট্রলি গাড়ি একটি ঝুলন্ত বিদ্যুৎ লাইনের সঙ্গে অসাবধানতাবশত লেগে যায়। এতে সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। কিছুক্ষণ পর পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে কর্মীরা এসে লাইন মেরামতের কাজে হাত দেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, লাইনের কাজ চলাকালীন সময়ে অনতিদূরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্সফরমার বিকল করে ফেলে বিদ্যুত অফিসের কর্মচারীরাই।

এ নিয়ে দ্রুতই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। স্থানীয়রা দাবি করেন, ট্রান্সফরমার নষ্ট হওয়ার জন্য গাড়ির ধাক্কা নয়, বরং পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের দায়িত্বহীনতা এবং অসাবধানতাই দায়ী। তাঁদের ভাষায়, “গাড়ি লেগে শুধু তারে টান পরে এবং একটি মিটার নষ্ট হয়। তখনও ট্রান্সফরমার অক্ষতই ছিল। বরং বিদ্যুৎ কর্মীরা যখন সংযোগ দিতে এসে কাজ করার সময় শব্দ করে ট্রান্সফরমারটি নষ্ট হয়।”

বিতর্কিত ক্ষতিপূরণ বিল ও ভয়ভীতির অভিযোগ

পরবর্তীতে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ, নীলফামারী সদর উপজেলার সুটিপাড়া এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, গাড়ির মালিক দিলীপ বাবুর নামে ১২,৫০৪ টাকার ক্ষতিপূরণ বিল করে। দিলীপ বাবু এই বিলকে সম্পূর্ণ “অন্যায্য ও হয়রানিমূলক” বলে দাবি করেন।

তিনি বলেন,

> “আমার গাড়ি একটু তারে লাগলেও ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়নি। পরে বিদ্যুৎ কর্মীরা যেভাবে কাজ করছিল, তাতেই বড় ক্ষতি হয়েছে। এখন সেই দায়ভার আমার ঘাড়ে চাপিয়ে টাকাটা নিতে চায়।”

 

বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি। দিলীপ বাবু অভিযোগ করেন, তাঁর নামে বিল আদায়ের জন্য এখন চরম হেনস্তা শুরু হয়েছে। তাঁর এলাকার ট্রান্সফরমারের একটি ফেস (একটি দিকের সংযোগ) নামিয়ে দিয়ে পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হচ্ছে। এর ফলে শুধু দিলীপ বাবু নয়, পুরো পাড়া কয়েকদিন ধরে অন্ধকারে রয়েছে। তিনি বলেন:

> “বিদ্যুৎ সেবা হচ্ছে জনগণের মৌলিক অধিকার। অথচ সেই সংযোগই ব্যবহার করা হচ্ছে চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে। এটা সরাসরি হুমকি ও নির্যাতনের শামিল।”

 

জনগণের উদ্বেগ: পল্লী বিদ্যুৎ যেন একচ্ছত্র ক্ষমতার কেন্দ্র!

স্থানীয় এক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,

> “বিদ্যুৎ অফিসের কর্মীরা নিজেদের ভুল ঢাকতে এখন নিরীহ গাড়িমালিককে বলি বানাতে চাইছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা চাই, নিরপেক্ষ তদন্ত হোক।”

 

এলাকার অন্য এক বাসিন্দা বলেন,

> “আমরা তো কারেন্ট পাচ্ছি না। একজন ব্যক্তির উপর রাগ করে পুরো পাড়ার লাইন কেটে রাখা হয়েছে। এ কেমন সেবা? কেমন আইন?”

 

প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন: এজিএম অনিমেষ বকসি আচরণ নিয়ে ক্ষোভ

বিল আদায়ের এই অনিয়মের বিষয়ে নীলফামারী সদর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম (প্রশাসন) অনিমেষ বকসি এর সাথে কথা বলতে যান স্হানীয় তিনজন সাংবাদিক।

সাংবাদিকরা বিষয়টি নিয়ে তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি “ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও তাচ্ছিল্যভরা” আচরণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সাংবাদিক খান মোহাম্মদ রাকিব বলেন-

> “আমরা দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে জানতে চেয়েছিলাম—একটি ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতির দায়ে পুরো এলাকার বিদ্যুৎ কেন বন্ধ? উনি আমাদের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে উল্টো উগ্র আচরণ করেন। এমনকি তিরস্কারও করেন। এটা দায়িত্বশীল আচরণ নয়।”
পরবর্তীতে এ বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য জি এম এর কাছে যেতে চাইলে তিনি জি এম এর কাছে যেতে বাঁধা দেন।

 

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা বলছেন, এ ধরনের আচরণ প্রশাসনিক স্বচ্ছতার পরিপন্থী এবং সাংবাদিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের সামিল।

আইনি ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ সংযোগ ইচ্ছেমতো বন্ধ রেখে কাউকে ক্ষতিপূরণে বাধ্য করার প্রচেষ্টা সংবিধান ও গ্রাহক সেবার নীতিমালার লঙ্ঘন।

নীলফামারী আইনজীবী সমিতির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,

> “এই বিল আদায়ের ক্ষেত্রে প্রশাসনের আচরণ একাধিক আইনি প্রশ্ন তোলে। যদি কেউ ক্ষতি করে থাকে, তবে সেটি যথাযথ তদন্ত ও প্রমাণের ভিত্তিতে আদায়যোগ্য। কিন্তু পুরো এলাকা অন্ধকারে রেখে চাপ সৃষ্টি করা সম্পূর্ণ বেআইনি।”

 

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ

স্হানীয় লেখক ও সাংবাদিক মনোয়ার হোসেন বলেন,

> “একজন গাড়ির মালিকের ভুল প্রমাণিত না হলেও, তাঁকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি তার এলাকার মানুষরা দিনভর অন্ধকারে রয়েছে। এটা মানবিক অধিকার হরণের সামিল।”

 

জনমত ও প্রশাসনের করণীয়

ঘটনাটি বর্তমানে পুরো এলাকাজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জনগণের দাবি, একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক এবং বিদ্যুৎ সেবার ওপর রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক ক্ষমতার অপপ্রয়োগ বন্ধ করা হোক।

তাঁদের বক্তব্য,

> “আমরা বিদ্যুৎ চাই, হয়রানি নয়।”

 

প্রশাসনিক জবাবদিহিতা জরুরি

নীলফামারীর এই ঘটনাটি শুধু একটি দুর্ঘটনা বা ক্ষতিপূরণ নয়—এটি গ্রামীণ জনগণের মৌলিক সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কতটা অসহায়, প্রশাসনের কতটা দায়িত্বহীন, এবং সেবাদানকারীর কতটা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে পারে, তার একটি চিত্র।

প্রশাসনের উচিত হবে দ্রুত এই বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত শুরু করা, জনসেবা স্বাভাবিক রাখা এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা। একইসাথে, সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনারও তদন্ত হওয়া উচিত।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com