প্রতিনিধি সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): সৌদি আরবে হত্যার ২২দিন পর দেশে ফিরল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রেমিট্যান্স যোদ্ধা জাকির হোসেনের মরদেহ। বৃহস্পতিবার ২৬ আগষ্ট ভোর রাতে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর জাকিরের মৃতদেহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা গ্রহণ করেন। ওই দিন সকাল ১০টায় লাশ বাড়িতে নিয়ে আসলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। মা, বোন ও ভাইদের চিৎকারের লাশ দেখতে আসা শত শত নারী-পুরুষদের অনেককেই কাঁদতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার বাদ যোহর অরুয়াইল আব্দুস সাত্তার ডিগ্রি কলেজ মাঠে জানাযা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
জাকিরের পরিবার বলছে, দীর্ঘদিন ধরে জাকির সৌদি আরবের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ দিতেন। এ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবাসী কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর বিরোধ চলছিল। তাঁদের ধারণা ওই ব্যক্তিরাই জাকিরকে গলা কেটে ও পেটে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করিয়েছেন।
গত ৪ আগষ্ট বুধবার সৌদি আরবের হাইলোজারা এলাকায় জাকির হোসেন (৩০)কে নিজ কক্ষে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। হত্যার পর সিন্দুকে থাকা জাকিরের দেড় লাখ রিয়াল নিয়ে গেছে খুনিরা।
জাকির হোসেনের বাড়ি সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের ধামাউড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের বাসিন্দা গাজী কাঞ্চন মিয়ার চতুর্থ ছেলে। এক মাস পরেই দেশে ফিরে বিয়ে করার কথা ছিল জাকিরের। বিয়ের জন্য পাত্রী ঠিক করাসহ কথাবার্তা চূড়ান্তও ছিল।
জাকিরের বড় ভাই গাজী দুলাল আক্ষেপ করে বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমার ভাই সৌদি আরব গিয়েছিল। তাঁর স্বপ্নগুলো পূরণ হয়নি। বহু শখ করে তিনতলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করেছিল। শেষ করতে পারেনি। স্বপ্ন পূরণের আগেই লাশ হয়ে দেশের মাটিতে ফিরল আমার ভাই।
জাকিরই আমাদের পরিবারের সম্বল ছিল। তাঁর আয়ের টাকায় চলতো পুরো সংসার। পরিবারের আদরের সন্তান ছিল জাকির। যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চাই– লাশের কফিনে ধরে আহাজারি করতে করতে জাকিরের পিতা হাজি কাঞ্চন মিয়া এ কথাগুলো বলছিলেন।
সৌদি আরবে বসবাসরত ধামাউড়া গ্রামের নজরুল (৩২) মুঠোফোনে জানায়, জাকিরসহ তার কক্ষে ৪ জন বাংলাদেশি থাকতেন। সেদেশের বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজের শ্রমিক দিতেন জাকির। ৪ আগষ্ট বুধবার ভোর পাঁচটায় সকলেই কাজে চলে গেলে জাকির বাসায় থাকে। কারণ ওইদিন সকাল ১১টার দিকে তার বন্ধু রাসেলকে নিয়ে এক কোম্পানির মালিকের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। সেজন্য রাসেল জাকিরকে একাধিকবার ফোন দেয়। কিন্তু ফোন রিসিভ না করায় রাসেল জাকিরের খবর নিতে বাসায় যায়। এ সময় জাকিরের কক্ষের দরজা বন্ধ দেখে কোনো সাড়া না পেয়ে ২-৩ জন বাংলাদেশি প্রবাসীর সহযোগিতায় দরজা ভেঙে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে তারা। পরে সেখানে জাকিরের গলাকাটা রক্তাক্ত দেহ দেখতে পায় তারা।