মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন নগরবাসী। ঈদের আগমূহুর্তের ভিড় আর দুর্ভোগ এড়াতে ঘরমুখো মানুষের অনেকেই আগেভাগে বাড়িতে রওনা হয়েছেন।
তবে এবার সড়ক পথে যানজট, ফেরিঘাটে ভোগান্তি, নৌপথে অতিরিক্ত বোঝাই, রেলওয়ে টিকেট সংকট ও শিডিউল বিপর্যয়সহ পথে পথে নানা দুর্ভোগ ও ভোগান্তি শিকার হতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। এছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া নৈরাজ্যের শিকার হতে হচ্ছে ঘরমুখো মানুষদের।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালী বাস স্ট্যান্ড, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ও গাবতলী বাস স্ট্যান্ড ঘুরে দেখা যায় ঘরমুখো মানুষদের ভিড়। কেউ কেউ দীর্ঘ সময় ধরে কাঙ্খিত গাড়ির অপেক্ষাও করছেন। প্রথমদিকে ঢাকা ছাড়ার মানুষের মধ্যে বেশিরভাগই নারী-শিশু ও শিক্ষার্থীরা রয়েছেন। অনেকে অফিসের কারণে ঢাকায় থেকে গেলেও পরিবারের সদস্যদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন আগেই।
বুধবার রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্রতিটি ট্রেন এক-দেড় ঘণ্টা দেরি করে ছেড়ে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে গরমের দীর্ঘ সময় স্টেশনে অপেক্ষার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান। এছাড়া সড়কপথে অতিরিক্ত গাড়ির চাপে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দাউদকান্দি এলাকায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আরিচা ও মাওয়া ফেরিঘাটে ছিল যানবাহনের দীর্ঘ লাইন।
জামালপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী সোহল ইমাম জানান, তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করেন। ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় এবং ভিড় এড়াতে আগেই গ্রামের বাড়ি জামালপুরে রওনা দিয়েছেন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অগ্রিম ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ২৭ হাজার ৮৫৩টি অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে অনলাইনে বিক্রি হবে ১২ হাজার ১৫৭টি এবং কাউন্টারে বিক্রি হবে ১৫ হাজার ৬৯৬টি। ঈদযাত্রা শেষে ট্রেনের ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে আগামী ১ মে থেকে।
সকাল থেকেই মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, যানবাহনের দীর্ঘ সারি ঘাট ছাড়িয়ে কয়েক কিলোমিটার অতিক্রম করেছে। বিশেষ করে ব্যক্তিগত গাড়ি অর্থাৎ প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসের লম্বা লাইন বেশি। পাশাপাশি যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকেও ফেরি পারাপার হতে পারছে না। এছাড়া পাটুরিয়া ঘাটে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো।
রাজবাড়ীর রোজিনা বেগম বলেন, প্রচণ্ড গরমে গাড়ির ভিতরে বসে থাকা যায় না। বাচ্চা মেয়েটা খুব কান্নাকাটি করছে। সকাল নয়টা থেকে বসে আছি কখন ফেরি পার হতে পারব জানি না। ভেবেছিলাম ঈদের কয়েকদিন আগে গেলে রাস্তাঘাট ফাঁকা পাবো কিন্তু সেটাও পেলাম না। দুর্ভোগ সঙ্গী করেই যেতে হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি’র ডিজিএম শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ বলেন, ঈদকে সামনে রেখে আমরা ২১টি ফেরি দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পারাপারের ব্যবস্থা করছি। বর্তমানে ১৮টি ফেরি চলাচল করছে। আরো ৩টি ফেরি রহরে যুক্ত হবে। আশা করা যাচ্ছে ২১টি ফেরি সচল থাকলে যানবাহন ও মানুষজন নির্বিঘ্নে পারাপার হতে পারবে। তবে গেল দুদিন ধরে পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ অনেকাংশে বেড়ে গেছে।
পাটুরিয়া ঘাট পরিদর্শন করতে এসে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন ও অর্থ) জিহাদুল কবির বলেন, গেল দুই বছর করোনার কারণে বেশিরভাগ মানুষজন ঈদের সময় মুভমেন্ট করতে পারেনি। তাই এবার যেহেতু করোনা কমে গেছে সেই কারণে মুভমেন্ট হবে অনেক বেশি। মানুষজনকে নির্বিঘ্নে যাতায়াতে সহায়তার করার জন্য পুলিশ প্রশাসন দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে। ঘাটে অজ্ঞানপার্টি, মলম পার্টিসহ কোন অপরাধীরা যেন কোন ধরনের ক্রাইম করতে না পারে তার জন্য পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।