সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সিলেট জেলা ও মহানগরের প্রায় ১৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এসব এলাকার লোকজন গৃহবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এসব মানুষের আশ্রয় দিতে ১৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এছাড়াও বন্যাদুর্গত লোকজনের মধ্যে ১শত ২৯ মেট্রিক টন চাল ও ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
জানা যায়, গত সপ্তাহের মঙ্গলবার রাত থেকেই সিলেটে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। এখনও তা চলমান। বুধবার থেকেই সিলেটের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যেতে শুরু করে। বর্তমানে থেমে থেমে পানি বেড়ে সিলেটের বেশির ভাগ এলাকাই এখন ভাসছে বন্যায়। জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী জেলার ৮টি উপজেলা বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া পানি উঠে গেছে নগরের বেশির ভাগ এলাকায়ও।
এ অবস্থায় সিলেট জেলা ও মহানগরের প্রায় ১৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব বন্যা দুর্গত মানুষজন বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকটে পড়েছেন।
বুধবার (১৮ মে) দুপুরে দেখা গেছে, নগরের আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট পানির নিচে যাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও জলমগ্ন অবস্থায় দেখা গেছে। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন নগরবাসী। এ অবস্থায় নগরের ১৫ স্কুলসহ ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজনও খাদ্য সংকটে রয়েছেন।
নগরের সবচেয়ে বেশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডের মসজিদে মসজিদে মাইকিং করে বলা হচ্ছে বন্যার পানি দ্রুত বাড়ছে। বাসার জিনিসপত্র নিরাপদে রেখে আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে চলে যেতে।
সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ খাদ্য সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, সবচেয়ে বেশি বন্যায় ক্ষতি হয়েছে আমার ওয়ার্ড। এখানকার প্রায় ৯৮ ভাগ এলাকাই এখন পানির নিচে। এ ওয়ার্ডে ৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত সিটি করপোরেশন থেকে মাত্র ১৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার পেয়েছি। পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে আরও ৭০০ প্যাকেট বিতরণ করেছি।
তাজ বলেন, এখানে চার হাজার প্যাকেট খাবার প্রয়োজন। যা পেয়েছি তা খুবই কম। আমাদের চাহিদার কথা সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাইয়িদ চৌধুরী জানান, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বৃষ্টি কমছে না। তাই পাহাড়ি ঢল নামছে এবং আমাদের দেশেও পানি বাড়ছে।
সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, কিছু সরকারি স্থাপনায় পানি উঠলেও সেবা ব্যাহত হচ্ছে না। সব প্রতিষ্ঠানেরই স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত আছে। তবে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
বন্যায় জেলা জুড়ে ১৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, এসব আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউএনওদের সার্বক্ষণিক নজরদারি করার নির্দেশনা দেওয়া আছে।
বন্যা কবলিতদের জন্য তৃতীয় দফায় ১০০ টন চাল এবং তিন হাজার প্যাকেট শুকানো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ১২৯ টন চাল ও এক হাজার প্যাকেট শুকানো খাবার দেওয়া হয়েছে। এর আগে প্রথম দফায় প্রথম দফায় ১০৯ টন চাল ও এক হাজার প্যাকেট খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বেলা ১২টায় পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের প্রধান নদী সুরমা কানাইঘাট (সিলেট) পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে। তবে এখনও তা বিপৎসীমার ১২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সুরমা সিলেট পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে সুনমাগঞ্জ পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসিদ (সিলেট) পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে এখন বিপৎসীমার ১৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে শেওলা (সিলেট) পয়েন্টে নদীটির পানি বেড়েছে আট সেন্টিমিটার, এখন তা বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের কতিপয় স্থানে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান জানান, বন্যাকবলিতদের জন্য নগরে দুটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়া দুটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। নগরে শুকনো খাবার বিতরণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।