শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৩ অপরাহ্ন
কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কুড়িগ্রামের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান আশিককে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কুড়িগ্রামের তিন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) কুড়িগ্রাম সদর থানায় মামলাটি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রুহুল আমিন।
কুড়িগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলায় শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান নিহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা, সাংবাদিকসহ ১০৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে। রুহুল আমিন কুড়িগ্রাম সদরের মোগলবাসা ইউনিয়নের সেনেরখামার গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ৪ আগস্ট কুড়িগ্রাম শহরে আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় হত্যা, হামলা, মারপিট, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের অভিযোগে আওয়ামী লীগের ১০৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫০০-৬০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে দেখা গেছে, আসামির তালিকায় ৪০, ৪২ এবং ৬৪ নম্বরে জেলায় কর্মরত তিন সাংবাদিকের নাম দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- ইনডিপেনডেন্ট টিভি, দৈনিক কালের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি এবং কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক ফারুক, দৈনিক সংবাদ ও নিউজ২৪ টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি হুমায়ুন কবির সূর্য এবং এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজ টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি ইউসুফ আলমগীর। তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে।
জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের আসামি করায় সাংবাদিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আসামি হওয়া সাংবাদিকদের দাবি, পেশাগত দায়িত্ব পালনের বাইরে তাদের কোনও ভূমিকা নেই। ষড়যন্ত্র এবং বিদ্বেষমূলকভাবে তাদের মামলায় জড়ানো হয়েছে। হয়রানি করাই এর উদ্দেশ্য।
মামলার আসামি আব্দুল খালেক ফারুক বলেন, ‘এই মামলায় সাংবাদিকদের জড়ানো ভিত্তিহীন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের বাইরে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই। ঘটনার দিন আমরা প্রেসক্লাবে আটকা পড়েছিলাম। ঘটনা দেখতে যেতেও পারি নাই। তারপরও হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় আমাদের আসামি করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই সাংবাদিকদের আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
‘আশিকের মৃত্যুর পর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তার দাফনের সংবাদ সংগ্রহ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলাম। পেশাগত কাজের বাইরে এক পাও হাঁটি নাই। তারপরও হয়রানিমূলকভাবে আমাদের জড়ানো হয়েছে। এটা নিন্দনীয়’ যোগ করেন খালেক ফারুক।
এই সাংবাদিক নেতা বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা পর্যবেক্ষণে সরকার যে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করেছে, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে আশা করছি। তাতেই সত্যতা বেরিয়ে আসবে।
মামলার ব্যাপারে জানতে বাদী রুহুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজু মোস্তাফিজ বলেন, ‘মামলার বিষয়টি শুনেছি। যে সাংবাদিকদের নাম এসেছে তারা সবাই দীর্ঘদিন থেকে পেশাদারত্বের সঙ্গে জেলায় সাংবাদিকতা করে আসছেন। ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত নন। তাদের আসামি করার নিন্দা জানাই।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল আলম বলেন, ‘মামলা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।