মঙ্গলবার, ১৫ Jul ২০২৫, ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বীর মুক্তিযোদ্ধা খ.ম. আমীর আলীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ: মুক্তিযোদ্ধা ও জনসাধারণের প্রতিবাদে উত্তাল জনমত ট্রান্সফরমার নষ্ট হওয়ার ঘটনায় বিতর্কিত ক্ষতিপূরণ বিল: নীলফামারীতে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে জোরপূর্বক আদায়ের অভিযোগ নেত্রকোনায় স্ত্রীকে হত্যার পর রশিতে ঝুলে স্বামীর আত্মহত্যা কুমিল্লা ইপিজেড মেডিকেল সেন্টারে চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে চলছে অফিসের কার্যক্রম আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা: ৯ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অন্ধকারে” ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা: ডিএমপি মির্জাপুরে ১০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ নিজ বাড়ি থেকে ব্যবসায়ী আটক কেরানীগঞ্জে রাজাবাড়ী এলাকার প্রধান সড়কে ময়লার স্তূপ, চরম ভোগান্তিতে এলাকাবাসী শেরপুরে অবৈধ বালু উত্তোলনের দায়ে একজনকে ১০ দিনের কারাদণ্ড বিয়ের ৩০ বছর পর একসঙ্গে দাখিল পাস করলেন স্বামী-স্ত্রী
বীর মুক্তিযোদ্ধা খ.ম. আমীর আলীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ: মুক্তিযোদ্ধা ও জনসাধারণের প্রতিবাদে উত্তাল জনমত

বীর মুক্তিযোদ্ধা খ.ম. আমীর আলীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ: মুক্তিযোদ্ধা ও জনসাধারণের প্রতিবাদে উত্তাল জনমত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল এক পবিত্র ও গৌরবময় সংগ্রাম। সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর সন্তানদের প্রতি জাতি চিরঋণী। অথচ আজও কোনো কোনো মহল ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে সেই বীরদের সম্মানহানির অপচেষ্টা করে। সম্প্রতি জামুকার (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) সম্মানিত সদস্য ও খ্যাতিমান বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব খ.ম. আমীর আলীর বিরুদ্ধে আনিত একটি অভিযোগ সেই জাতিগত গৌরবকেই যেন প্রশ্নবিদ্ধ করল।

এই অভিযোগের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাগণ একযোগে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, “এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

ঘটনার সূত্রপাত: জামুকা সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী ছিল?

গত সপ্তাহে একটি অজ্ঞাত পক্ষ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়–এর সংশ্লিষ্ট বিভাগে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয় যে, জামুকা সদস্য খ.ম. আমীর আলী মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে নাকি প্রভাব খাটিয়েছেন এবং নিজের পরিচয়কে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছেন।

কিন্তু স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই অভিযোগ “হিংসাত্মক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত”। অভিযোগকারী পক্ষের পরিচয় স্পষ্ট নয়। এতে একটি প্রশ্নও উঠেছে: তারা কারা? তাদের উদ্দেশ্য কী?

বীর মুক্তিযোদ্ধা খ.ম. আমীর আলী: একজন যুদ্ধাপরাধের সাক্ষী, নাকি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার?

খ.ম. আমীর আলী শৈলকুপা উপজেলার একজন পরিচ্ছন্ন ও নির্ভীক সমাজসেবক, যিনি ১৯৭১ সালে দেশের জন্য অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। তার সহযোদ্ধারা জানান, তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভারতের মেলাঘর ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ-জামালপুর রুটে গেরিলা অপারেশন পরিচালনা করেন।

শুধু তাই নয়, যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা–তে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।

তার প্রতি অভিযোগের কথা শুনে সহযোদ্ধা আব্দুল মালেক বলেন,

> “এই লোকটিকে আমরা যুদ্ধের মাঠে পাশে পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে যারা মিথ্যা কথা বলছে, তারা মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করছে।”

প্রতিবাদে মুখর শৈলকুপা: স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে প্রতিবাদপত্র দাখিল

১৩ ও ১৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে শৈলকুপা উপজেলার প্রায় ৫০ জনের অধিক মুক্তিযোদ্ধা একটি লিখিত প্রতিবাদপত্র দাখিল করেন। তারা সরাসরি মাননীয় উপদেষ্টা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়-এর দপ্তরে চিঠি প্রেরণ করে এর নিন্দা জানান।

প্রতিবাদপত্রে বলা হয়:

> “বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব খ.ম. আমীর আলী একজন প্রকৃত যোদ্ধা। তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট, মিথ্যা ও হিংসাত্মক। আমরা এই অভিযোগের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।”

যার অনুলিপি পাঠানো হয়: বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল, সদস্য সচিব, জামুকা

স্থানীয় জনমত: “যিনি আমাদের শিক্ষকের মতো পথ দেখান, তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ লজ্জাজনক”

শুধু মুক্তিযোদ্ধারাই নন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, সাংবাদিক ও তরুণরাও আমীর আলীর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।

শৈলকুপা উপজেলার একজন বাসিন্দা ও স্কুল শিক্ষক বলেন,

> “আমার ছোটবেলা থেকেই আমীর আলী সাহেবকে দেখে এসেছি। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, কিভাবে দেশপ্রেম ধারণ করতে হয়। এই অভিযোগ আমাদের নিজস্ব বিবেককে অপমান করছে।”

ঘটনার পেছনে রাজনীতির ছায়া?

স্থানীয় কয়েকজন প্রবীণ রাজনৈতিক কর্মী মনে করছেন, এই অভিযোগের নেপথ্যে রয়েছে ব্যক্তি বিদ্বেষ ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জানান,

> “জনাব আমীর আলী বর্তমানে জামুকার সদস্য হওয়ার কারণে অনেকেই তাঁর অবস্থান হীনমন্যতায় সহ্য করতে পারছে না। কিছু ব্যক্তি চায় না তিনি আবার মনোনীত হোন। সেই চক্রান্ত থেকেই এই অভিযোগ।”

আইনবিদদের মতামত: সম্মানহানির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের সুযোগ রয়েছে

ঢাকার একজন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট বলেন,

> “এই অভিযোগ যদি মিথ্যা ও প্রমাণহীন হয়, তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি চাইলে মানহানির মামলা করতে পারেন। এছাড়া জামুকা কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে প্রমাণিত হলে অভিযোগকারীকে শাস্তির আওতায় আনতে পারে।”

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া: প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি

মন্ত্রণালয়ের এক গোপনীয় সূত্র জানায়,

> বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের পেছনে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জামুকা সদস্য হিসেবে আমীর আলীর বাছাই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই হয়েছে।

 

তবে মন্ত্রণালয় এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষা জাতির দায়িত্ব

বাংলাদেশ একটি যুদ্ধজয়ী দেশ। সে যুদ্ধের সম্মানিত সেনানীদের অপমানিত করা মানে জাতির ইতিহাসকে অপমান করা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা খ.ম. আমীর আলীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তার প্রতিবাদে যেভাবে শৈলকুপার মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা ও তরুণ সমাজ একত্র হয়েছেন, তা এই জাতির বিবেককে আবারও জাগিয়ে তুলেছে।

এখন দরকার সরকারের পক্ষ থেকে একটি স্বচ্ছ, দ্রুত ও কার্যকর তদন্ত এবং প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ।

প্রসঙ্গত, জামুকা সদস্য খ.ম. আমীর আলীর বিরুদ্ধে এই ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ অতীতে আরেকবার উঠেছিল ২০১৭ সালেও, যা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তখনো স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর পক্ষে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com