বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:২৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
নির্বাচন উৎসবমুখর করতে সেনাবাহিনীর সহায়তা প্রয়োজন: প্রধান উপদেষ্টা বিজয় দিবসে কোনো নাশকতার সম্ভাবনা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশজুড়ে মোবাইল ফোন বিক্রির সব দোকান বন্ধের ঘোষণা ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে এক হচ্ছে সাত কলেজ ৬৭৮ কোটি মানিলন্ডারিং, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড মালিকের বিরুদ্ধে মামলা নরসিংদীতে অতিরিক্ত নামজারী করে অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলনের চেষ্টা—জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড নরসিংদীর করিমপুর ইউনিয়নে বিএনপির কর্মীসভা অনুষ্ঠিত সৌদিতে বাস‑ট্যাঙ্কার সংঘর্ষে ৪২ ভারতীয় নিহতের আশঙ্কা হাসিনার রায়: সজীব ওয়াজেদের সতর্কবার্তা

বীর মুক্তিযোদ্ধা খ.ম. আমীর আলীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ: মুক্তিযোদ্ধা ও জনসাধারণের প্রতিবাদের ক্ষোভ

ভিশন বাংলা ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫
  • ২৮৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়। সে সংগ্রামের বীর সেনানীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনও কিছু ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে সেই বীরদের সম্মান ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি তেমনই একটি ঘটনা ঘটেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সম্মানিত সদস্য ও খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধা খ.ম. আমীর আলীর বিরুদ্ধে। এক অজ্ঞাত পক্ষ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, তিনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে প্রভাব খাটিয়েছেন এবং নিজ পরিচয়কে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছেন।

এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাগণ ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাদের ভাষায়, এটি একটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ, যার পেছনে রাজনৈতিক চক্রান্ত রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক স্পষ্ট করে বলেন, “এই লোকটিকে আমরা যুদ্ধের মাঠে পাশে পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে যারা মিথ্যা কথা বলছে, তারা মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করছে।” স্থানীয় বাসিন্দা, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ তরুণ সমাজও এই অভিযোগের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাদের মতে, যিনি একসময় তাদের দেশপ্রেম শেখাতেন, তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ লজ্জাজনক।

বীর মুক্তিযোদ্ধা খ.ম. আমীর আলীর যুদ্ধকালীন ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পরপরই তিনি শত্রুদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তিনি শৈলকুপার গাড়াগঞ্জ বাজারের পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিত্যক্ত ভবনে মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্প গঠন করেন এবং সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার, প্রশিক্ষণ ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। স্থানীয় জনগণ তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। ২৭শে মার্চ ১৯৭১ সালে তিনি ও তার সহযোদ্ধারা বড়দা ব্রিজের পাশে রাস্তা কেটে পিচের রাস্তা তৈরি করে পাকসেনাদের ফাঁদে ফেলেন। এ ফাঁদে পড়ে প্রায় ৪১ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং একজন লেফটেন্যান্ট বন্দি হয়। এই অপারেশন বিদেশি গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়।

এছাড়া, তিনি যুদ্ধের সময় শত্রুপক্ষের কাছ থেকে ধরা পড়া ৭ জন পাকসেনাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর হত্যা করে নদীর চরে গণকবর দেন। এই তথ্য এতদিন তার কাছ ছাড়া কেউ জানত না। যুদ্ধের একপর্যায়ে তিনি ঝিনাইদহ থেকে ভারতে যান, সেখানে ট্রেনিং নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আসেন ও প্রশিক্ষণ দিয়ে ফের যুদ্ধে অংশগ্রহণে সহায়তা করেন। ঝিনাইদহ দখলের পর পাকবাহিনী ক্যাডেট কলেজে ঘাঁটি গড়ে। রাজাকার ও দালালদের সহায়তায় তারা বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চালায়। এর মধ্যে শৈলকুপার জয়ন্তিনগর, ছোট বোয়ালিয়া, বসন্তপুর, কামান্না, আবাইপুরসহ একাধিক স্থানে পাকসেনারা হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট চালায়। এসব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও অংশগ্রহণকারী ছিলেন আমীর আলী।

তিনি যুদ্ধের শেষ দিকে মিত্রবাহিনীর সঙ্গে অবস্থান নিয়ে ঝিনাইদহ শহর ঘিরে ধরেন। ৬ ডিসেম্বর গোলাবর্ষণের মাধ্যমে পাকবাহিনী পালাতে বাধ্য হয় এবং ঝিনাইদহ হানাদার মুক্ত হয়। স্বাধীনতার পর তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সংগ্রহ করে সরকারের কাছে হস্তান্তর করেন। পরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, শিশু শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

অভিযোগকারী কারা, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। তবে স্থানীয় জনমতে, আমীর আলী জামুকার সদস্য হওয়ায় কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তার অবস্থান মেনে নিতে পারছে না এবং তারা চক্রান্তের মাধ্যমে তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। স্থানীয় ইউপি সদস্যদের ভাষায়, “তিনি পুনরায় মনোনীত না হন, তাই তাকে টার্গেট করা হয়েছে।” ঢাকার এক সিনিয়র আইনজীবী বলেন, “যদি অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি চাইলে মানহানির মামলা করতে পারেন এবং জামুকা বা মন্ত্রণালয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।”

শৈলকুপা উপজেলার প্রায় ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা যৌথভাবে ১৩ ও ১৪ জুলাই তারিখে একটি লিখিত প্রতিবাদপত্র মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছেন। চিঠিতে তারা লিখেছেন, “এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও হিংসাত্মক। জনাব খ.ম. আমীর আলী একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। আমরা দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।” এ চিঠির অনুলিপি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জামুকা সদস্য সচিব এবং অন্যান্য দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে, মন্ত্রণালয়ের এক গোপনীয় সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে আমীর আলীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের পেছনে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জামুকার সদস্য হিসেবে তার নিয়োগ যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়েছে বলেই তারা জানিয়েছেন। যদিও এখনো সরকারিভাবে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি, তবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।

এই ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হয়েছে, জাতির বীর সন্তানদের সম্মান রক্ষা করা একটি জাতিগত দায়িত্ব। খ.ম. আমীর আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ যেমন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা, তেমনি তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ও সহযোদ্ধাদের প্রতিবাদ প্রমাণ করে—এই জাতি এখনো তার ইতিহাসকে ভালোবাসে। সরকার যদি দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যের অপশক্তিকে চিহ্নিত করে, তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার ক্ষেত্রে এটি হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2011-2025 VisionBangla24.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com