বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:১৪ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড তার প্লেসমেন্ট শেয়ারের মাধ্যমে সংগ্রহ করা ১৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা ফেরত না পেয়ে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। এই অর্থ পদ্মা ব্যাংকের গুলশান কর্পোরেট শাখায় জমা থাকলেও, ব্যাংকটি এখনও তা পুরোপুরি ফেরত দেয়নি।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছে। বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ন্যাশনাল টি কোম্পানির পক্ষ থেকে ২০ আগস্ট কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সহযোগিতা চাওয়া হয়।
ন্যাশনাল টি কোম্পানি ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যে মোট ২৭৯ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহের পরিকল্পনায় প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু করে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এই প্লেসমেন্টের প্রথম ধাপ শেষ হয় এবং বিনিয়োগকারীরা পদ্মা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৪৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা জমা দেন।
তবে, ব্যাংকটি এর মধ্যে মাত্র ২৫ কোটি টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করে, এবং বাকি ১৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা এখনও ফেরত দেয়নি। এই অর্থ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে ন্যাশনাল টি কোম্পানি পূর্বে নির্দেশিত পুবালী ব্যাংকে স্থানান্তরের অনুরোধ জানালেও পদ্মা ব্যাংক তা বাস্তবায়ন করেনি।
ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মো. তালহা বিষয়টি স্বীকার করে জানান, বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক গুরুতর তারল্য সংকটে রয়েছে। তার ভাষায়, “আমরা কিছু টাকা ফেরত দিয়েছি, বাকিটা ধাপে ধাপে দেওয়ার কথা থাকলেও তারল্য ঘাটতির কারণে তা সম্ভব হয়নি।”
তিনি আরও জানান, ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে জমাকৃত অর্থ ব্যয় হয়েছে তারল্য সংকট সামাল দিতে, যার ফলে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আটকে গেছে।
২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫,১০৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯০.৫৫ শতাংশ। ব্যাংকের সমন্বিত লোকসান দাঁড়িয়েছে ৫,৩৪৯ কোটি টাকা। এই পরিসংখ্যান ব্যাংকটির আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়।
অন্যদিকে, ব্যাংকটিতে এখনও ৪৩টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২,০০০ কোটি টাকার আমানত রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের একক আমানত প্রায় ৮৯৯ কোটি টাকা।
সরকারি আমানত রক্ষায় অর্থ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে পদ্মা ব্যাংককে একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। তবে বাস্তবে ব্যাংকের পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠেছে। ব্যাংকে নতুন আমানত না আসার পাশাপাশি বিদ্যমান গ্রাহকরাও বড় অঙ্কের অর্থ তুলে নিচ্ছেন। ব্যাংকটির বিভিন্ন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ব্যাংক ঋণ আদায়ের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল।
ন্যাশনাল টি কোম্পানি জানিয়েছে, আটকে থাকা অর্থ না পাওয়ায় তারা ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং অন্যান্য আর্থিক দায় পরিশোধে সমস্যায় পড়েছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে দ্রুত অর্থ ফেরতের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিনিয়োগকারীদের অর্থের নিরাপত্তা এবং পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি’র তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।