নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে বিয়ে, গর্ভপাত, তালাক এবং নির্যাতনের ভয়ংকর অভিযোগ উঠেছে চার্টাড লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেডের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। চার্টাড লাইফের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, শেয়ার জালিয়াতির তথ্য নিয়ে ৬পর্ব ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
জীবন বীমা কোম্পানি চার্টার্ড লাইফের ট্রেনিং বিভাগের কর্মকর্তা নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন এক ভুক্তভোগী নারী। নুরুল কবির ব্যক্তিগত সম্পর্কে জড়িয়ে প্রথমেই তাকে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করেন। পরবর্তীতে ওই নারী গর্ভবতী হলে নুরুল কবির তাকে বিবাহ করে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই গর্ভপাত (এবোরশন) করানো হয় এবং পরে তালাক দিয়ে নির্যাতন শুরু করেন। পরবর্তীতে কোনো উপায় না-পেয়ে ভূক্তভোগী নারী সরাসরি চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে নুরুল কবিরকে খুজতে থাকে। নুরুল কবিরকে না-পেয়ে ভূক্তভোগী নারী প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেন। কিন্তু নুরুল কবির প্রভাবশালী কর্মকর্তার নিকট আত্মীয় হওয়ায় সেখানে ঐ নারী ন্যায্য সাড়া পাননি।
অভিযোগ উঠেছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঐ নারীর অভিযোগ শোনার সময় ন্যূনতম সহানুভূতি না দেখিয়ে বরং ক্ষতিগ্রস্থ নারীকে হেয় প্রতিপন্ন করেন। তাদের চাপে এ সময় ওই নারী অসুস্থ হয়ে পড়লে উপস্থিত কর্মকর্তারা বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে ঐ নারীকে ম্যানেজ করে বিদায় করেন। এমনকি উল্টো এ ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের আঁচ পেয়ে ম্যানেজমেন্ট থেকে তথ্য বাইরে কিভাবে প্রকাশ হলো, তা নিয়ে ঊর্ধ্বতনদের রোষানলে পরেন বেশকয়েকজ কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদেরকে রেড অ্যালার্ট দিয়ে নজরদারীর মধ্যে রেখেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চার্টাড লাইফের কর্মরত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নুরুল কবিরসহ বেশ কয়েকজন মেট লাইফ আলিকো থেকে চার্টাডে যোগদান করেন এবং তিনি এক প্রভাবশালী কর্মকর্তার আত্মীয়- এভাবেই সবার কাছে পরিচিত। এখন তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের এই ঘটনা অফিস প্রাঙ্গণে আলোড়ন সৃষ্টি হলে ওই চক্র সক্রিয় হয়ে উঠে। পিআর ডি’র অপর এক কর্মকর্তার সহযোগিতায় বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন এবং প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিষয়টি গোপন করতে ভূমিকা রাখছেন। অপরাধের বিচারতো দূরের কথা ঘটনা প্রকাশ্যে আসায়, এখন তালিকা করে প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েকজনকে বহিস্কারের চেষ্টা চলছে। কাউকে কাউকে চাকরি ছেড়ে দিতে হুমকি দেয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী কর্মকর্তা বলেন, কেলেংকারীর বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, কিংবা অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত না করে উল্টো কর্তৃপক্ষ মিথ্যাচার এবং ঘটনা ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠে- যা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বিষয় নয় বরং প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা লঙ্ঘনের শামিল। বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরেছেন কোম্পানীটিতে কর্মরত নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁরা বলেন, ফৌজদারি আইন এবং প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী এই ধরনের অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ।
চার্টাডের কয়েকজন কর্মী এ বিষয় একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি তুলেছেন এবং অভিযোগকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
আইন বিশেষজ্ঞ ও নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, এসকল অভিযোগ শুধু ব্যক্তিগত সম্পর্কের সীমায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বচ্ছতা, শৃঙ্খলা এবং নীতিমালা রক্ষার প্রশ্নে বড় ধরনের সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এতে করে চার্টার্ড এর ভাবমূর্তি ও কর্মপরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানের নারী কর্মীদের নিরাপত্তার পাশাপাশি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয় তাঁরা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন, অভিযোগকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। অভিযোগগুলোর প্রকৃতি এবং পরিধি বিবেচনায় নিয়ে দেশের প্রচলিত আইন ও বীমা খাতের নীতিমালা অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, গুরুত্বর অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে বীমা খাতের নীতিমালা এবং আইন অনুযায়ী নুরুল কবীরের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, অপরাধ, যৌন হয়রানি, নির্যাতন, জেন্ডার ইস্যু কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা- এসব ইস্যুতে দেশের সব প্রতিষ্ঠান সরব থাকে। অথচ চার্টাড ব্যতিক্রম- এখানে পাগলের মেলা চলছে। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে প্রতারণা এবং যৌন অপরাধ প্রকাশ্যে এলে প্রতিষ্ঠানে সিইওসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মিটিং এ আলোচনা করেন, “কারা জড়িত, কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী তথ্য ফাঁস করলো, গোপন ঘটনা কিভাবে প্রকাশ পেল এবং কি করে দ্রুত অপরাধ ধামাচাপা দেয়া যায়। কোন কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকুরীচ্যুত করা যায়, এসব নিয়ে।”
এ বিষয়ে চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোক্তার আহমেদ সবুজ বলেন, “নারী ঘটিত কোন বিষয় জানা নেই, কি হয়েছে খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। “
ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এমদাদ উল্লাহ বলেন, “চার্টাড লাইফের প্রধান কার্যালয়ে কোন নারী কেলেংকারীর ঘটনা ঘটেনি। ট্রেনিং বিভাগের নুরুল কবীর তার আত্মীয় নন। এমনকি গত ১৫ দিন তার সঙ্গে দেখা হয়নি। এ বিষয় কোন অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে আইডিআরএর এক কর্মকর্তা বলেন, এসব নেক্কারজনক ঘটনা সামনে আসা সবার জন্য বিব্রতকর। ক্ষতিগ্রস্ত কোন পক্ষ অভিযোগ দিলে আইনগত দিক বিবেচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
### কেমন চলছে আওয়ামী লীগ সরকারের অনুমোদন দেয়া জীবন বীমা কোম্পানি চার্টাড লাইফ, তাদের এক যুগের পথ চলায়- জেল হাজতে চেয়ারম্যান, পরিচালনা পর্ষদ সংক্রান্ত ইস্যু, বীমা আইন লংঘন, অবৈধ ব্যয়, কমিশন গোপন, ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ, অতিরিক্ত কমিশন, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়, তামাদির হার, অসঙ্গতিপূর্ণ ব্যালেন্সশীট, আইপিও সংক্রান্ত ইস্যু, শেয়ার নিয়ে সমস্যা, ডিভিডেন্ড জালিয়াতি, ব্যক্তিগত কোডে রেন্যুয়াল কমিশন গ্রহণ, কন্ট্রিবিউটরি ফান্ডের অর্থ আত্মসাৎ, সিইও নিয়োগ জটিলতা, সিইওর অপকর্ম নিয়ে থাকবে ধারাবাহিক বিশেষ প্রতিবেদন।
প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে থাকছে- “ঋণ কেলেঙ্কারি ও স্ত্রীর নামে শেয়ার কারসাজি করে যেভাবে কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেন সিইও এমদাদ উল্লাহ”