দুর্নীতি, অনিয়ম ও লুটপাটে জর্জরিত হয়ে পড়েছে বেসরকারি সাধারণ বীমা প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
এই প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে একের পর এক অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে। আইন লঙ্ঘন, অতিরিক্ত কমিশন, বাকি ব্যবসা, ডামি নিয়োগ, অবৈধভাবে ঝুঁকি বীমা ইস্যু, ব্যালেন্স সীট জালিয়াতি, চেয়ারম্যানের অর্থ লোপাট, সিইওর দূর্নীতি, সার্ভে রিপোর্টে গরমিল, হয়রানি, শেয়ার কারসাজি, অর্থ আত্মসাৎ, ওয়েবসাইট হালনাগাদ না করা এবং বীমা দাবী পরিশোধে অনীহাসহ নানাবিধ অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।
পরিচালনা পর্ষদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলার অভাব ও অযোগ্য নেতৃত্বকেই এসব অনিয়মের পেছনের প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও শৃঙ্খলার অভাবকেই এসব অনিয়মের পেছনের প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) অনুমোদন ছাড়াই প্রিমিয়ামের বিপরীতে এজেন্ট কমিশন দেওয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি এজেন্ট রেজিস্টার সংরক্ষণ করছে না এবং কমিশনের ভাউচারও মেইনটেইন করছে না। এজেন্টদের নাম-পরিচয় গোপন রাখা, কভার নোট ও ক্লেইম ফাইলে গরমিল, সময়মতো ক্লেইম সেটেল না করা এবং সার্ভেয়ার রিপোর্টে বিলম্বের ঘটনাও নিয়মিত ঘটছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কাজের অভিজ্ঞতার নিয়ম অমান্য করে বেতন নির্ধারণে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। প্রিমিয়াম আদায়ের তুলনায় বেতন প্রদানের হারও অস্বাভাবিকভাবে বেশি। বহুদিন ধরে কোম্পানির ওয়েবসাইট হালনাগাদ করা হয়নি এবং আইডিআরএর নীতিমালা অনুযায়ী অর্গানোগ্রাম তৈরিও করা হয়নি। এমনকি কোম্পানির হটলাইন নম্বর হিসেবে ব্যক্তিগত নম্বর ব্যবহারের তথ্যও প্রকাশ পেয়েছে।
ডামি নিয়োগের মাধ্যমে কমিশন আত্মসাৎ, সাবেক সিইও হারুন পাটোয়ারীর বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ না করা, সরকারি সিকিউরিটি হাউজে বিনিয়োগ ঘাটতি এবং প্রিমিয়াম কালেকশনের তুলনায় অস্বাভাবিক স্যালারির মতো অভিযোগও উঠেছে। হারুন পাটোয়ারীকে দেওয়া চেক ডিজঅনার হয়েছে বলেও জানা গেছে। ২০২১ সালে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা ইস্যু করায় আইডিআরএ প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করেছিল। ২০২২ সালে বীমা আইনের ১৩০/১৩১ ধারা লঙ্ঘনের জন্যও কোম্পানিটি জরিমানা গুনেছে।
ম্যানেজমেন্টের ছত্রছায়ায় সাবেক সিইও মোকলেছুর রহমান, সিএফও সুজন কুমার বিশ্বাস এবং সিএস কাজী ফারহানা নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেও নীতি বহির্ভূতভাবে বেতন-ভাতা ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ আছে।
এদিকে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৭ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ১১ পয়সা। গত বছরের তুলনায় এই আয় কমেছে ৪ পয়সা। এছাড়া শেয়ার কারসাজির অভিযোগে জসিম উদ্দিনকে কোটি টাকা জরিমানা করেছে কর্তৃপক্ষ।
এসব অভিযোগের ব্যপারে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ)-এর এক কর্মকর্তা বলেন, বীমা সেক্টরের কোনো অনিয়ম দুর্নীতি মেনে নেয়া হবে না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান এ এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, সব বিষয়ে এ মুহুর্তে আমার জানা নেই। সার্বিক বিষয়গুলো আপনি অফিস থেকে জেনে নিয়েন।
সার্বিক অভিযোগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান তারেক জানান, প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় অনেকরকম কাজ করতে হয়। কোনো অনিয়ম করেনি ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা নিয়ে অফিসে এসে কথা বলুন।
দীর্ঘ বছর ধরে চলা ইস্টার্নের এমন অসংখ্য অনিয়ম ও দুর্নীতির পর্দা ফাঁস হতে শুরু করেছে। এই বিষয়ে ছয় পর্বের ধারাবাহিক অনুসন্ধানের দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশিত হবে শিঘ্রই।
– প্রিয় পাঠক, আপনিও আমাদের কাছে যে কোন তথ্য শেয়ার করুন, থাকুন আমাদের সঙ্গে।