নওগাঁ জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ সারাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আজ স্নেহ,ভালোবাসা আর মঙ্গল কামনায় ভাই-বোনের চিরন্তন বন্ধনের ভাইফোঁটা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে আয়োজন করা হয়েছে মাছ-মাংস দই-মিষ্টি মিঠাই মিষ্ঠান্নসহ নানা রকমের তরিতরকারি লুচি পুড়ি ফলমুল ডোড়-মালা নতুন পোশাক পরিয়ে বড়ন ডালা সাজিয়ে বোনের কিনি আঙ্গুলের রক্ত ও চন্দন তিলোক মিশিয়ে ভাইয়ের কাপালে দিলাম ফোঁটা যমের দুয়ারে পড়লোকাঁটা!
“ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা,
যমের দুয়ারে পড়লো কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা,
আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।
যম যেমন হয় চিরজীবী,
আমার ভাই যেন হয় তেমন চিরজীবী।।” (ভ্ৰাতৃদ্বিতীয়ায় প্রচলিত বাংলা প্রবচন)
ভ্রাতৃদ্বিতীয়াকৃত্যম্ (ভাইফোঁটা), গোস্বামিমতে যমদ্বিতীয়া।
মধ্যাহ্ন ধর্মরাজ (যমরাজ) পূজা। যম-যমুনা-চিত্রগুপ্ত-যমদূত পূজা। যমার্ঘ্যদানঞ্চ। ভগিন্যা
ভ্রাতৃপূজনমাবশ্যকম্। আচারাদ ভ্রাত্রে তিলকদানং ভ্রাত্রাচ ভগিনীভ্যোবস্ত্রাদিকং দেয়ং। ভগিনীহস্তাদ্ যত্নেন ভোক্তব্যঞ্চ। অন্নদানে ভগিনী পাঠ্যমন্ত্রঃ। – “ভ্রাতস্তবানুজাতাহং ভুঙ্ক্ষ ভক্তমিদং শুভং। প্রীতয়ে যমরাজস্য যমুনায়া বিশেষতঃ।” “জ্যেষ্ঠা ভগিনী চেদ্ ভ্রাতস্তবাগ্রজাতাহমিত্যাদি পঠেৎ। ভ্রাতৃলাটে দেশবিশেষে প্রচলিত তিলকদানমন্ত্রঃ- ভ্রাতস্তব ললাটে হি দদামি তিলকং শুভম্। অতঃপরং যমদ্বারে ময়া দত্তং হি কণ্টকম্।”।
দীপাবলির আলোর রেশ মিলিয়ে যাওয়ার পর কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে বাঙালি হিন্দু পরিবারের ঘরে ঘরে আবারও বেজে ওঠে আনন্দের সুর—আজ ভাইফোঁটা। শঙ্খধ্বনি, চন্দনের সুবাস আর মিষ্টির গন্ধে ভরে ওঠে পরিবেশ।
ভাই-বোনের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, স্নেহ ও মঙ্গল কামনার প্রতীক এই দিনটি। ভাইফোঁটা উৎসবের পেছনে আছে একাধিক পৌরাণিক কাহিনি। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ কাহিনি যমরাজ ও তাঁর বোন যমুনাকে ঘিরে। জনশ্রুতি মতে, এই শুভ দিনে যমরাজ বোন যমুনার আহ্বানে তাঁর বাড়িতে যান। যমুনা স্নান-সাধনা করে ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেন এবং তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করেন। বোনের সেই মঙ্গল ফোঁটার ফলেই যমরাজ অমরত্ব লাভ করেন— সেই থেকে বোনেরা ভাইয়ের কল্যাণ ও দীর্ঘ জীবনের আশীর্বাদ কামনায় এই আচার পালন করে আসছেন।
ভাইফোঁটার সকালে বোনেরা উপোস থেকে স্নান সেরে নতুন পোশাক পরে সাজিয়ে তোলেন বরণডালা তাতে থাকে প্রদীপ, চন্দন, দই, ধান, দূর্বা, পান, সুপারি, মিষ্টি ও ভাইয়ের জন্য উপহার। নির্দিষ্ট মুহূর্তে ভাইকে পিঁড়িতে বসিয়ে কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে মঙ্গলমন্ত্র উচ্চারণ করা হয়। এরপর ধান-দূর্বা ছিটিয়ে আশীর্বাদ করা হয় ভাইয়ের মঙ্গল কামনায়।
শেষে হয় মিষ্টিমুখ বোন নিজের হাতে ভাইকে মিষ্টি খাইয়ে দেন, আর ভাইও ভালোবাসায় ভরে দেন বোনের হাতে উপহার ও আশীর্বাদ।
নওগাঁ #