রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মোহাম্মদপুরে সন্ত্রাসী রহিম ও তার ছেলের অত্যাচার নির্যাতনে অসহায় এলাকাবাসী উত্তরা ব্যাংকের এমডি রবিউল হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অপসারনের দাবিতে রাজপথে বিল্পবী ছাত্র জনতা ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৪ হাজার সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে দেখে কেঁদে ফেললেন মির্জা ফখরুল সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ওসমানী জাতীয় স্মৃতি পরিষদ-এর বিশেষ বাণী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খ. ম. আমীর আলী ছাত্র বৈষম্য আন্দোলনে আহতদের জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়ে পাশে বিএনপি নেতা মোঃ সাইফুল ইসলাম নরসিংদীর মনোহরদীতে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানক্লাব ‘নেবুলাস’-এর যাত্রা শুরু প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস গার্মেন্টস ব্যবসায়িদের নিঃস্ব করে কোটি টাকা প্রতারণা করে লাপাত্তা কৃষক লীগ নেতা হান্নান শেখ!
‘মি টু’ ক্যাম্পেইন: বাংলাদেশে মুখ খুলতে চান না নারীরা

‘মি টু’ ক্যাম্পেইন: বাংলাদেশে মুখ খুলতে চান না নারীরা

যৌন হয়রানি নিয়ে সারা বিশ্বেই চলছে তোলপাড়। বিভিন্ন পেশায় যৌন নির্যাতনের বা হয়রানির প্রতিবাদে ‘মি টু’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে জনপ্রিয় ক্যাম্পেইন চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিন্তু এই ‘মি টু’ ক্যাম্পেইনে বাংলাদেশের অধিকাংশ নারীরা যৌন হয়রানির তথ্য প্রকাশ করছেন না।

সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে রাজনীতি, ব্যবসা, শিল্প-সংস্কৃতির জগতের বেশ কয়েকজন শীর্ষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌন অত্যাচারের অনেকগুলো ঘটনা প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছেন বেশ কয়েকজন নারী এবং পুরুষ।

হলিউডের শীর্ষ একজন প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছিলেন হলিউড তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল নীরবতা ভাঙার পালা।

হলিউডের যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর গত অক্টোবর মাসে বিবিসির এক জরিপে উঠে এসেছে, ব্রিটেনে কর্মক্ষেত্রে বা পড়াশুনার জায়গায় অর্ধেক নারীই যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন, এমনকি এক পঞ্চমাংশ পুরুষও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।

বাংলাদেশেও অভিযোগ উঠেছে যে, পারিবারিক পরিবেশ, শিক্ষাক্ষেত্র, কর্মক্ষেত্র কোনো অঙ্গনেই নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা থেমে নেই।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্র বলছে, ‘২০১৭ সাল জুড়ে ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা যেমন বেড়েছে, সেই সাথে বেড়েছে যৌন সহিংসতায় নিষ্ঠুরতা ও ভয়াবহতা।’

বাংলাদেশে টেলিকম কোম্পানির যেসব বিজ্ঞাপন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে তার একটি ছিল কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস নিয়ে নির্মিত একটি বিজ্ঞাপন, যেখানে অভিনয় করে রীতিমত তারকা হিসেবে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিলেন মডেল ফারহানা শাহরিন ফারিয়া। সম্প্রতি মিডিয়া জগতের কাজের ক্ষেত্রে নানারকম হয়রানির কথা উঠে এসেছে তার এক সাক্ষাতকারে।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন, ‘মিডিয়া জগতে কাজ করতে হলে তার ভাষায় ‘স্যাক্রিফাইস’ করতে হয়।’ ফেসবুকে লাইভ ভিডিওতে এবং একাধিক স্ট্যাটাসে হয়রানির বিষয়টিতে কথা বলেছেন ফারহানা শাহরিন ফারিয়া।

“আমি ছিলাম লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০০৭ এর সেকেন্ড রানার আপ। মূলত যখন আমি বাংলালিংক কাস্টমার কেয়ারের বিজ্ঞাপন করি তারপর থেকে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বাজে প্রস্তাব পাই”, বলেন ফারিয়া।

কিন্তু এটি নিয়ে আগে মুখ খোলেননি কেন? জানতে চাইলে তিনি জানান, সবসময়ই তিনি এ বিষয়ে প্রতিবাদ করে আসছেন। যার জন্য অনেক বড় বড় কাজ হারাতে হয়েছে তাকে।

‘সরাসরি অফার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আমাদের সাথে ‘পার্সোনাল রিলেশন’ মেইনটেইন করতে হবে। কেন আমি পার্সোনাল রিলেশন রাখবো? আমার কোয়ালিটি, বিউটি দিয়ে আমি কাজ করবো। এই অফারগুলির কারণে আমাকে অনেক কাজ ছেড়ে দিতে হয়েছে। যেখানে আমার মনে হয়েছে আমার কোয়ালিটির চেয়ে ‘স্যাক্রিফাইস’ টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

কিন্তু বাংলাদেশে কাজ দেয়ার নাম করে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তার মত অনেকের কাছ থেকেই সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে। কিন্তু এগুলোকে কতটা গুরুত্ব দেন ইন্ডাস্ট্রির নেতৃত্ব স্থানীয় পরিচালকরা?

চলচ্চিত্র পরিচালক প্রযোজক সোহানুর রহমান সোহানের কাছে প্রশ্ন রাখা হলে তিনি বলেন, ‘এখানে ভালো খারাপ অনেক মানুষ আছে। কেউ ফিল্মকে হয়তো খারাপভাবে ব্যবহার করছে। তিনি (ফারিয়া) হয়তো এরকম কারো পাল্লায় পড়েছেন। দীর্ঘ ৪০ বছর কাজ করছি। তবে আমার ক্ষেত্রে এমন কখনো ঘটেনি। আবার অনেকসময় কেউ কেউ আমাদেরও প্রস্তাব দিয়ে সুযোগ নিতে চায়, যেটা কখনো সম্ভব না।’

তবে অভিযোগ থাকলে প্রমাণ নিয়ে প্রযোজক বা পরিচালক সমিতিতে জানালে তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

যৌন হয়রানির শিকার প্রায় ৬৩ শতাংশ নারী বিবিসিকে জানান, ঘটনার পর তারা এ বিষয়ে কোনো রিপোর্ট করেননি বা কাউকে জানান নি।

অন্যদিকে যৌন হয়রানির শিকার ৭৯ শতাংশ পুরুষ জানিয়েছেন বিষয়টি তারা নিজেদের মধ্যেই চেপে রেখেছিলেন।

এরপর বিশ্বজুড়ে যৌন হয়রানির শিকার হওয়া নারীদের অনেকেই এ প্রচারণায় এগিয়ে আসেন এবং নিজের ওপর ঘটে যাওয়া হয়রানির ঘটনা প্রকাশ্যে আনেন।

কিন্তু বাংলাদেশে জোরালোভাবে গড়ে ওঠেনি এই ক্যাম্পেইন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এসব যৌন নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে সরাসরি মুখ খুলতে চান না কেউ। শোবিজ বা কর্পোরেট জগতের নিজেদের সাথে ঘটে যাওয়া এমন সব হয়রানির কথা জানালেও, বেশ কজনই সরাসরি বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

২০১৬ সালে কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ সিএইচআরআই- এর গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশের পুলিশে কর্মরত নারী কনস্টেবলদের ১০ ভাগের বেশি সদস্য যৌন হয়রানির শিকার হন। আর উপ পরিদর্শক ও সহকারী উপ পরিদর্শকদের শতকরা তিন ভাগ এ ধরনের ঘটনার শিকার হন। ক্যাডার পর্যায়ের নারী পুলিশরাও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির বাইরে নন- ওই রিপোর্টে বলা হয়।

২০১৭ সালের শেষে এসে আইন ও শালিস কেন্দ্র জানায়, ‘ধর্ষণের ঘটনা ও তার ভয়াবহতা অনেক বেড়েছে। একবছরে সারাদেশ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮১৮ জন আর ধর্ষণের পর হত্যার শিকার প্রায় অর্ধশত। আত্মহত্যা করেছেন ১১ জন।’

বিভিন্ন অন্যায় নিপীড়ন বা নির্যাতনের খবর যারা তুলে ধরেন সেই সাংবাদিকতা পেশায় কর্মরত নারীদেরও যৌন নিপীড়নের মুখে পড়তে হয়।

এরকম সব সেক্টরেই কোন না কোন নারী যৌন হয়রানির মুখে পড়ে, যা মুখ খুলে কারো কাছে প্রকাশ করতে পারে না। আর এরকম ক্ষেত্রে আইনের আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি ভাবতেই পারেন না অনেক নারী আরো বেশি সামাজিক হয়রানির আশংকায়। ফলে এই ‘মি টু’ ক্যাম্পেইন সারাবিশ্বে জোয়ার তৈরি করতে পারলেও বাংলাদেশে এসে মুখ থুবড়ে পড়েছে।

বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশের নারী পুরুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ‘মি টু’ ক্যাম্পেইন জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠা করা উচিত।

সূত্র: বিবিসি

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com