বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ০৮:৫১ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করলেন ইশরাক এখনো থেমে নেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী প্রত্যয় মাহমুদের নাশকতা কার্যক্রম দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার কুড়িগ্রামে অসুস্থ গরু জবাই করে বিক্রির চেষ্টা, ৫ জনের কারাদণ্ড গ্যাং লিডার হিটলু বাবু গ্রফতার, অস্ত্র উদ্ধার জীবনমান উন্নয়নে আগৈলঝাড়ায় সেমিনার ভোলার উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রতি স্মারকলিপি জুলাই যোদ্ধার অনুদান পেলেন যুবলীগ নেতা, তদন্ত কমিটি গঠন মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ কান উৎসবে প্রথম টেলিভিশন নারী সাংবাদিক শাহরিন জেবিন
মোবাইলে লাখ লাখ টাকার লটারি জয়ের বার্তা – প্রতারণা ঠেকাতে করণীয় কী?

মোবাইলে লাখ লাখ টাকার লটারি জয়ের বার্তা – প্রতারণা ঠেকাতে করণীয় কী?

নিউজ ডেস্কঃ ঢাকার গ্রীন রোডের বাসিন্দা সৈয়দ জাকির হোসেন পেশায় ফটো সাংবাদিক। আজ বুধবার সকাল সোয়া দশটার দিকে তার মোবাইলে একটি টেক্সট বার্তা আসে।

ওই বার্তায় বলা হয় মিস্টার হোসেনের “মোবাইল নাম্বার ২০১৯ পেপসি ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ড্র ইন ইউকে- তে পাঁচ লাখ পাউন্ড বিজয়ী হয়েছে”।

“এখন টাকাটা পেতে হলে তার নাম, বয়স ও ফোন নাম্বার ই-মেইল করে জানাতে হবে।” আর এই বার্তাটি এসেছে বাংলাদেশেরই একটি মোবাইল নাম্বার থেকে।

ঘণ্টা দুয়েক পর তিনি তার ফেসবুকে এ বিষয়ে স্ট্যাটাস দিলে সেখানেই আরও কয়েকজন মন্তব্য করেন যে তারাও একই ধরনের বার্তা পেয়েছেন।

মিস্টার হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, “এ ধরণের লটারি বিজয়ের খবর দিয়ে আগে অনেক ই-মেইল আসতো। কিন্তু এবার এসএমএস, তাও আবার লোকাল নাম্বার থেকে আসায় খুবই আশ্চর্য হয়েছি।”

“আমি জানি এগুলো প্রতারকদের কাজ। তাই আর গুরুত্ব দেই নাই। তবে ফেসবুকে দিয়েছি যদি ফোন কোম্পানির কারও নজরে আসে তাহলে তারা চাইলে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে।”

তবে যে নাম্বারটি থেকে বার্তাটি এসেছে সে নাম্বারে কল দিয়ে সেটি বন্ধ পেয়েছেন তিনি। পরে বিবিসি থেকেও ওই নাম্বারে কল দিয়ে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সিলেট শহরে প্রাইভেট কার চালক রফিক আহমেদ বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় মন্তব্য করে জানিয়েছিলেন যে তিনিও এ ধরণের প্রতারণামূলক এসএমএস পেয়েছিলেন গত মাসেই। কয়েকমাস আগেও একবার এগুলো পেয়েছিলেন তিনি।

পরে বিবিসি বাংলা থেকে তার সাথে যোগাযোগ করা হলেন তিনি বলেন, “কোকাকোলা কোম্পানি থেকে ৫০ হাজার পাউন্ড জিতেছি বলে এসএমএস করেছিলো আমাকে। দেখেই বুঝেছি ভুয়া।”

প্রতারণার নানা ধরণ:

মোবাইলে লাখ টাকার লটারি জেতার প্রতারণামূলক বার্তার মতো কেউ প্রতারণার শিকার হয়েছে কি-না জানতে বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় একটি পোস্ট দেয়ার পর সেখানে অনেকেই তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।

এতে দেখা যাচ্ছে, প্রতিনিয়ত এ ধরনের হরেক রকম প্রতারণাপূর্ণ বার্তা পাচ্ছে মানুষ।

মো: কামাল হোসেন মুন্সি লিখেছেন, তাকে দেয়া বার্তায় লেখা হয়েছিলো “যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি থেকে এক মিলিয়ন ডলার জিতেছে তার মোবাইল নম্বর। পুরস্কার দাবি করতে তার বৃত্তান্ত পাঠাতে একটি ইমেইল ঠিকানা দেয়া হয়েছে”।

আর রহমান মাসুকুর লিখেছেন: “প্রায় ১৯ বছর আগে আমি প্রথম ইয়াহুতে মেইল ওপেন করেছিলাম সেই মেইলে একবার লটারি জিতেছিলাম৷ তারপর ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদেরকে পাকরাও করা হয়েছিল ৷ তারা ছিল নাইজেরিয়ান৷ তখন আমি যে দেশটিতে বসবাস করতাম সেখানে অনেক উচ্চপদস্থ লোকদের সাথে আমার পরিচিতি ছিল।”

আব্দুল হামিদ লিখেছেন: “আমার মোবাইলে বেশ কিছুদিন পূর্বে রাত প্রায় ৩টার সময় একটি কল আসে, আমি রিসিভ করার পর এক অদ্ভুত কণ্ঠে সালাম দিয়ে তার পরিচয় দিলো সে জীন জগতের বাদশা।”

“সে আমাকে বিভিন্ন ইসলামি উপদেশ দিতে লাগল আর আমি প্রতিটি কথায় হু বলে সায় দিয়ে যাচ্ছি এবং আরো অনেক মাজার সংক্রান্ত ধর্মীয় কথা বলল।”

তিনি আরো লিখেছেন, “যেটাতে হু বলা লাগে সেখানে হু বলি আর যেখানে হু বলা লাগেনা সেখানেও হু বলি, তখন সে অনেকক্ষন চেষ্টা করার পরেও যখন দেখল আমি শুধু হু,হু করছি তখন সে গালি দিয়ে লাইন কেটে দিলো।”

ফেরদৌস মোস্তফা নামে একজন লিখেছেন, তাকে কল দিয়ে বলা হয়েছিলো যে তিনি লটারিতে গাড়ি পেয়েছেন। গাড়ি পেতে হলে ৫০ হাজার টাকা লাগবে। যদিও সে টাকা তিনি দেননি।

মো: শামসুল নায়েম লিখেছেন, “আমাকে কল দিয়ে বলছে স্যার আপনি ৫০,০০০ টাকা পেয়েছেন আপনাকে আমাদের বিকাশ নাম্বারে ১,০০০টাকা দিতে হবে, তাহলেই পেয়ে যাবেন।”

“তখন আমি বললাম ভাই আমি তো একটু দূরে আছি আমার নাম্বার ২০ টাকা লোড দেন আর আপনার বিকাশ নাম্বার দেন।”

নোমান খান লিখেছেন: “অনেকদিন আগের কথা, আমারে কইছিলো আমি না কি ভাগ্যবান লোক, বগুড়ার গায়েবি মসজিদের হুজুর নাকি স্বপ্নে আমার নামে চল্লিশটা মোহর ভর্তি সোনার কলস দেখছে।”

“সেটা নিতে হলে আমারে নাকি পাঁচ হাজার টাকা ওনাদের নম্বরে বিকাশ করতে হবে। আমি জানি এ সব বাটপারি ছাড়া আর কিছু না, আমি ওই কলার কে বলছিলাম একটা সোনার কলস বেচে তার ১/২ পারসেন্ট আমারে দিতে। পরে ফোন অফ পাইছিলাম।”

ফোন কোম্পানি বা পুলিশের করণীয় কিছু আছে?

কোম্পানিগুলো বলছে, এ ধরণের ক্ষেত্রে তাদের করণীয় কিছু নেই। দুটি টেলিকম কোম্পানি দুজন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, একজন গ্রাহক আরেকজন গ্রাহককে কী ধরণের বার্তা দেয় সেটি কোম্পানিগুলোর দেখার সুযোগ নেই।

তাই তারা মনে করে গ্রাহকদের সচেতনতাই এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

একজন কর্মকর্তা বলেন, “কেউ যদি স্বকণ্ঠে ফোন কোম্পানির পরিচয় দিয়ে কথা বলে লটারি জয় কিংবা পুরষ্কারের কথা বলে তাহলে সাথে সাথে সেটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো যেতে পারে। তবে কোনো ভাবেই কারও উচিত হবেনা প্রতারণার ফাঁদে পা দেয়া।”

আর ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, এ ধরণের ক্ষেত্রে গ্রাহকদেরই সতর্ক থাকতে হবে।

“কেউ কারও বিরুদ্ধে প্রতারণার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে নিশ্চয়ই পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।” “তবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কল দিলে বা দেশের বাইরে থেকে ই-মেইলে প্রতারণার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া কঠিন।”

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com