শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২১ অপরাহ্ন
ক্রীড়া ডেস্ক: পিচ রিডিং ভুল হয়েছে কয়েকটি ম্যাচে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইংলিশ কোচ নিয়োগও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বারবার। তবে আজ এজবাস্টনে ভারতের বিপক্ষে স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচে টস জেতার পর মাশরাফি বিন মর্তুজার ব্যাটিং নেওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। দলীয় সিদ্ধান্তে যদি একক কোনো পক্ষ প্রভাবিত না করে থাকে, তাহলে ধরে নিন টস জিতলে ব্যাটিংয়ে নামছে বাংলাদেশ।
মাশরাফির নিজের মনে অবশ্য এ নিয়ে খানিক দ্বিধা আছে। গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সেটি তিনি বলেছেনও, ‘ভারত রান তাড়ায় ভালো দল। ওদের বোলিংটা আরো ভালো। তাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই এখানে আগে ব্যাটিং করা কতটা ভালো সিদ্ধান্ত হবে।’ অধিনায়ক খুব ভুল ভাবছেন, বলা যাবে না। তবে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচটি হবে ব্যবহৃত উইকেটে। ইংল্যান্ড-ভারত ম্যাচের উইকেটেই খেলা হবে আজ। তো, ব্যবহৃত উইকেটে সব দলই চায় আগে ব্যাটিং করতে।
পরশু রাতে টিম হোটেলের সামনে জমজমাট আড্ডায়ও শোনা গেল টস জিতলে ব্যাটিংয়ের প্রতি অভিন্ন ঝোঁক। প্র্যাকটিসের কারণে পুরো ম্যাচ দেখার সুযোগ হয়নি বাংলাদেশ দলের কারোরই। তবে ইংল্যান্ডের শুরুর ব্যাটিং আর ভারতীয় ইনিংসের শেষভাগ দেখার সুযোগ হয়েছে। সেটুকু দেখে বাংলাদেশ দলের গেম প্ল্যানিংয়ের সঙ্গে জড়িত একজনের মন্তব্য, ‘শুরুর ২০ ওভারে এজবাস্টনের উইকেটটাকে মনে হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ। তবে পরে উইকেট ক্রমশ স্লো হয়েছে। ইংলিশ পেসাররা স্লোয়ার দিয়ে দিয়ে রানের গতি কমিয়ে দিয়েছিল। সবাই যে ধোনি আর কেদার যাদবকে গালাগাল করছে, তারা হয়তো খেয়ালই করেননি ওই সময় উইকেট কেমন আচরণ করছিল। আরো ধীর হয়ে গিয়েছিল। এমন উইকেটে প্রথমে ব্যাটিং করে বড় স্কোর গড়তে পারলে যেকোনো দলকে সমস্যায় ফেলা যাবে।’
বড় স্কোরটা কত? এটার ল্যান্ডমার্ক নির্ধারণ করতে গিয়েও তো ভুল হয়েছে বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ড ম্যাচের উইকেটে ৩৩০ রান উঠবে ভেবেই না ভুল শট খেলে ২৪৪ রানে থামতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এজবাস্টনের উইকেটে সাড়ে তিন শও অসম্ভব নয় ভাবছে দলের বড় অংশ। সত্যিই কি তেমন উইকেট মিলবে? কাঁধ ঝাঁকিয়ে সেই তিনি বলেছেন, ‘কেন নয়?’
এই আত্মবিশ্বাসের পুঁজি অবশ্য আয়ারল্যান্ড সিরিজ থেকে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের অভাবিত ধারাবাহিকতা। টপ অর্ডার ভালো শুরু দেওয়ার পর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরাই খেলছেন সিংহভাগ ওভার। প্রায় সব ইনিংসেই শেষাবধি ক্রিজে থেকেছেন একজন স্বীকৃত ব্যাটসম্যান। তাতে তিন শ আর জাদুকরী কোনো ল্যান্ডমার্ক নয় বাংলাদেশের জন্য। অন্তত ৩২০-৩৩০ তো বটেই, সাড়ে তিন শও এখন দৃষ্টিসীমায় দেখা যাচ্ছে।
গতকালের অনুশীলনে সাকিবের স্কয়ার অব দ্য উইকেট খেলার ড্রিল দেখে মনে হলো এজবাস্টনের এক দিকের ছোট সীমানা গলে রানের মহড়া দিচ্ছেন তিনি। কিন্তু ভারতীয় বোলাররা কি দ্বিতীয়বার একই ভুল করবে? অন্তত ইংলিশ বোলাররা যে করেননি, সেটা তো স্বচক্ষেই দেখেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘একপাশে মাঠ ছোট। এটা ইংল্যান্ড খুব ভালো ব্যবহার করেছে। নিজেরা ব্যাটিংয়ে ওই সুবিধাটা কাজে লাগিয়েছে। আবার বোলিং এমন লাইনে করেছে যেন ভারতীয়রা ছোট বাউন্ডারির দিকে বেশি মারতে না পারে।’
বোঝা যাচ্ছে, ভারতের জন্য ইংলিশ রেসিপিই অনুসরণ করবে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই ছক মেনে খেলতে তো হবে ক্রিকেটারদেরই। বিশেষ করে দলের বোলিং ইউনিট নিয়েই চিন্তাটা বেশি। একটু গোলমাল হয়ে গেছে যদি ভারতের টপ অর্ডার দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে ম্যাচ থেকে আগেই ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। অধিনায়ক নিজেই তো বলেছেন, ‘ভারতের টপ অর্ডারের উইকেট দ্রুত নিতে না পারলে ওরা বড় স্কোর গড়বে।’
ভারত বড় ইনিংস গড়া মানেই জসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সামি কিংবা কেদার যাদব, চাহালদের বোলিং বৈচিত্র্যের সামনে মলিন দেখাতে পারে বাংলাদেশের সফল ব্যাটিং লাইন আপকেও।
ঠিক এই যুক্তিতেই টস জিতলে ব্যাটিংয়ের পক্ষে ভোট বেশি বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে। উইকেট তাজা থাকতে থাকতে রান করে নাও এবং এরপর শুরুর টাইট বোলিংয়ে চাপে ফেলে দাও ভারতের টপ অর্ডারকে। প্রতিপক্ষের মিডল অর্ডার তো সেই কবে থেকেই চাপে আছে। ইংল্যান্ড ম্যাচের পর যা আরো রক্তক্ষয়ী সমালোচনায় ছিন্নভিন্ন প্রায়!
অবশ্য টস জয় তো আর নিশ্চিত নয়। তবে ২০১৯ বিশ্বকাপের জন্য তৈরি টসের কয়েনটা নাকি ‘পক্ষপাতমূলক’! ‘টেইল’ই উঠছে প্রায় সব ম্যাচে। সে হিসেবে আজ মাশরাফির টস জয়ের সম্ভাবনা প্রবল। কারণ, ম্যাচের স্বাগতিক ভারত। তাই কয়েন ছুড়বেন বিরাট কোহলি আর ‘কল’ করবেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।