শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৯ পূর্বাহ্ন
আদালত প্রতিবেদক: ফেনীতে পরীক্ষাকেন্দ্রে আগুনে পুড়িয়ে মাদ্রারাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার ঘটনায় সোনাগাজী মাদ্রাসা কমিটির তৎকালীন সভাপতি এনামুল করিমের দায়িত্বে কোনো অবহেলা পায়নি তদন্ত কমিটি। হাই কোর্টে এমন প্রতিবেদন দাখিল করেছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত) হাবিবুর রহমান।
এ তথ্য নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, এ বিষয়ে আজ শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে। আদালতে তদন্ত প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে গত ১৫ জুলাই ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও হত্যা মামলায় ফেনীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এনামুল করিমের নিষ্ক্রিয়তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন হাই কোর্ট।
৩০ দিনের মধ্যে ওই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। জনপ্রশাসন সচিব ও শিক্ষাসচিবের প্রতি এই নির্দেশ দেয়া হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাই কোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় এই প্রতিবেদন দাখিল করা হয় আজ সোমবার।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী ৩০ জুন ওই রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ জনের সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
এ মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
এর আগে ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় হাত-পা বেঁধে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা চালান মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার অনুগত ব্যক্তিরা। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল নুসরাত মারা যান। এ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই অসহযোগিতার অভিযোগ ছিল। দায়দায়িত্ব খতিয়ে দেখতে পুলিশ সদর দপ্তর পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করে, নুসরাতের মা তার বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এনামুল করিমের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আনেন।
ফেনীর একাধিক সূত্র জানায়, যার বিরুদ্ধে নুসরাতের মায়ের অভিযোগ, ফেনীর সেই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এনামুল করিম সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি। ওই মাদ্রাসারই অধ্যক্ষ ছিলেন সিরাজ উদ দৌলা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এর আগেও মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও অর্থ তছরুপের অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগ নিয়ম অনুযায়ী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি ব্যবস্থা নেননি।
নুসরাতকে হত্যার ঘটনায় প্রশাসনের কোনো ভুলত্রুটি ছিল কি-না, তা খতিয়ে দেখতে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, পি কে এনামুল করিম ওই কমিটিরও প্রধান।