শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪২ পূর্বাহ্ন
তীব্র যানজট থেকে রেহাই পেতে এবার সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিআইপি) ও সেবা সংস্থার গাড়ির জন্য ঢাকার সড়কে আলাদা ও সংরক্ষিত লেন রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠানো প্রস্তাবটির ওপর এখন মতামত তৈরি করছে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা মহানগরীতে সাত বছরে যন্ত্রচালিত গাড়ি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। প্রতিদিন যন্ত্রচালিত গাড়ি নামছে ৩৮০টি। এর বাইরে অযান্ত্রিক যানবাহন বাড়ছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে। বেসরকারি হিসাবে, ঢাকায় রিকশাই আছে কমপক্ষে ১০ লাখ। একই সড়কের একই লেনে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করছে। এ অবস্থায় আলাদা লেন রাখার প্রস্তাব নিয়ে বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই প্রস্তাব পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা বলছেন, বিদ্যমান সড়কে আলাদা লেন করা সম্ভব নয়। তাঁরা অযান্ত্রিক যানবাহন নিরুৎসাহ করার ওপর জোর দিচ্ছেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ভিআইপি ও সেবা সংস্থার জন্য ঢাকার সড়কে আলাদা লেন রাখার প্রস্তাবসংবলিত একটি চিঠি দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে। ভিআইপি, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুল্যান্স, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বহনকারী গাড়ি চলাচলের জন্য আলাদা লেনটি সংরক্ষিত হিসেবে চাওয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি বিবেচনায় রেখে মতামত দেওয়ার জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ডিটিসিএকে। এখন ডিটিসিএ বিষয়টি সামনে রেখে তৈরি করছে তাদের মতামত।
ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকায় ভিআইপি ও সেবা সংস্থাগুলোর জন্য আলাদা ও সংরক্ষিত লেন চালুর প্রস্তাবটি আমরা খতিয়ে দেখছি। বিভিন্ন সংস্থা মতামত দেওয়ার পর আমরা চূড়ান্ত মতামত তৈরি করব। চার দিন আগে আমরা সভা করেছি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নিয়ে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার মতামত নেওয়া হচ্ছে। তারপর আমরা সুপারিশসহ মতামত চূড়ান্ত করব।’
সৈয়দ আহাম্মদ আরো বলেন, ‘ঢাকার মতো মহানগরীতে অযান্ত্রিক যানবাহন কমানোর সুপারিশ আমরা তুলে ধরার কথা ভাবছি। এ ধরনের যানবাহনকে নিরুৎসাহ করতে হবে। আলাদা লেন করতে হলে বহু পাকা স্থাপনাও ভাঙতে হবে। বিদ্যমান সড়কে এ ধরনের আলাদা লেন করা সম্ভব নয় বলে অনেকে বলেছে।’
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাঠানো নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে জনবহুল গুরুত্বপূর্ণ শহরে সেবাকাজে নিয়োজিত যানবাহনসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের চলাচলের জন্য সড়কে পৃথক লেন রয়েছে। ঢাকা মহানগরীর সড়কে অনুরূপ লেন তৈরি করা হলে সেবা খাতের যানবাহনসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের চলাচল সহজতর হবে।
প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। জন-আধিক্য, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় রাস্তার স্বল্পতার কারণে শিগগির এর সমাধান কঠিন। তীব্র যানজটের কারণে অ্যাম্বুল্যান্স, ফায়ার সার্ভিস, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সেবা খাতের যানবাহনগুলোর চলাচল প্রায়ই মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
যানজট থেকে রেহাই পেতে মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বহনকারী গাড়ির উল্লেখযোগ্য অংশই উল্টোপথে চলাচল করে থাকে। ঢাকা মহানগর পুলিশ মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বহনকারী গাড়ির চালকদের জরিমানা করে। উল্টোপথে চলাচল ঠেকাতে কয়েক বছর আগে দাঁতওয়ালা যন্ত্র বসানো হয়েছিল একাধিক সড়কে। কিছুদিনের মধ্যেই সেগুলো অকার্যকর করে রাখা হয়।